প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০:০০
সত্যিই বিশ্বাস করুন, জন্মেছি বলে বলছি না, বরং বেশ কটি জেলা ঘুরে যা মনে হয়েছে, তা হলো ৬৪টি জেলা শহরের মধ্যে আমার প্রাণপ্রিয় জেলা শহর চাঁদপুর। চাঁদপুর শহর দেশের সকল জেলা শহরের থেকে আলাদা। ব্যতিক্রম বা আলাদা হওয়ার কারণ তো অবশ্যই আছে, আর তা হলো মানুষের ব্যক্তিত্ব, সমাজ সচেতনতা, রাজনৈতিক সচেতনতা, সংস্কৃতির বিকাশ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ভাবনায় অনেক সমৃদ্ধ আমার প্রাণপ্রিয় চাঁদপুর। এতে কোনো রকমের সন্দেহের অবকাশ নেই।
মেঘনা নদী ও ডাকাতিয়া নদীমিশ্রিত চাঁদপুর। তাই তো চাঁদপুরের মানুষের মন খুব উদার ও কোমল। নদীর বিশালতার ঢেউয়ের স্রোতের মায়াজালে যেমনি ছুটে চলে, তেমনিই চাঁদপুরের মানুষ দেশের বাঙালি সংস্কৃতি মনে লালন করে মহৎ কাজে প্রতিনিয়ত ছুটে চলে।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের বহু সন্তান দেশমাতৃকার জন্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন এবং শহিদ হয়েছেন। খেতাবপ্রাপ্ত ৭১-এর শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা লাভের জন্যে ১নং ও ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন শ্রদ্ধেয় মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী (প্রয়াত)।
একজন অপরিচিত মানুষকে অতি সহজ ও সরলতায় কাছের ভেবে নেয়ার ক্ষমতা বহুগুণ বেশি রয়েছে, চাঁদপুরের মানুষের মধ্যে। সৌখিনতার দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে আমরা চাঁদপুরের মানুষজন। অতিথি আপ্যায়নে এগিয়ে আমরা চাঁদপুরবাসী। ভাষা উচ্চারণের দিক থেকে একটু ফারাক, তা হলো অঞ্চল বা আঞ্চলিক টান রয়েছে। কিন্তু স্মার্টভাবে কথা বলতে পাড়া সত্যিই অসাধারণ।
চাঁদপুর থেকে সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে আসতে রেল ও নৌপথসহ সকল প্রকার যানবাহন রয়েছে। শুধু নেই বিমানপথ। আমাদের চাঁদপুরে একজনের প্রতি অন্যজনের ভালোলাগা ভালোবাসাময় ভাব রয়েছে অফুরন্ত। সমগ্র বিশ্বের বাঙালিদের মাঝে পরিচিত ও সকল বাঙালির ভোজনে ইলিশ মাছের স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা, আর এই ভিন্ন সুস্বাধের ইলিশ মাছের রাজধানীই আমার প্রাণের চাঁদপুর। ইতোমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর বা ইলিশের শহর চাঁদপুর।
চাঁদপুরের মানুষের চলন-বলন তথা রুচিসম্মত পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধানে বরাবরই বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রয়েছে চাঁদপুরের কৃতীসন্তানগণের। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করেছিলেন ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রবীণ রাজনীতিবিদ মরহুম শ্রদ্ধেয় মিজানুর রহমান চৌধুরী। যাঁর জন্য দেশ-বিদেশে অতি সহজে সকলই চাঁদপুরকে চিনতে পারেন।
দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও রয়েছে চাঁদপুরের কৃতীসন্তানগণের অবদান। আর তাঁরা হলেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, গীতিকবি কবির বকুল, মিলন খান, এসডি রুবেল, দিনাত জাহান মুন্নী প্রমুখ। এছাড়া চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছেন অনেকেই। রয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ধনীর তালিকায় রয়েছেন বেশ কজন ব্যক্তিত্ব। প্রাণপ্রিয় চাঁদপুর আলোকিত চাঁদের মতোই প্রতিনিয়ত আলো ছড়িয়ে চলছে, যা সত্যিই গৌরব ও গর্ব করার মতোই।