প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০:০০
‘চাঁদপুর ভরপুর জলে আর স্থলে, মাটির মানুষ আর সোনা ফলে’। চাঁদপুরের নামকরণ নিয়ে এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। কেউ বলে চাঁদ সওদাগরের নামে, আবার কেউ বলে চাঁদ ফকিরের নামানুসারে চাঁদপুরের নামকরণ করা হয়েছে। যা-ই হোক চাঁদপুরে জন্ম নিয়ে আমরা ধন্য।
‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর শহর তিন নদীর মোহনায় বেষ্টিত। যেদিকে দৃষ্টি দিবেন দেখতে পাবেন শুধুই বিশাল জলরাশি। আর এর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায় বড় স্টেশন মোলহেডে গেলে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ও কিছু দর্শনীয় স্থান নিয়ে প্রাণের চাঁদপুর লেখা শুরু। তিন নদীর মোহনা বড় স্টেশন মোলহেড এলাকাটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বধ্যভূমি হিসেবে খ্যাত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিকামী মানুষদেরকে নিয়ে হত্যা করে এই মোলহেড দিয়ে মেঘনা নদীতে ফেলে দিতো। তার জন্য এ স্থানে করা হয়েছে রক্তধারা।
তিন নদীর মোহনা বড় স্টেশন স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল। এখানে এসে সূর্যাস্ত, মেঘনায় ট্রলার, নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে নদীতে ঘুরে অবসর সময় কাটাতে পারে যে কেউ। এ স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কারো হৃদয় কেড়ে নিবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের হরিপুর ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। জমিদারদের পুরোনো নকশায় তৈরি বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। এর সামনে রয়েছে ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে জমিদারদের সমাধিস্থল। এটি শুধু দর্শনীয় স্থান নয়, এখানে সিনেমা ও নাটকের শুটিংও হয়। সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বড় সুন্দর গ্রামের ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে।
আমার প্রিয় চাঁদপুরে আরো রয়েছে, ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ। এটি চাঁদপুর জেলার বহু পুরোনো একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। হাজীগঞ্জ উপজেলার আরো আছে অলিপুর মাজার, শাহ সুজা ও আওরঙ্গজেব মসজিদ। আলীগঞ্জ পিটিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মানুষ গড়ার কারিগর। যাদের বলা হয় শিক্ষক।
শাহরাস্তির উপজেলায় রয়েছে রাস্তিশাহ্ মাজার, মনবাগান, মা মেহেরেশ্বরী কালী মন্দির, দশ মহাবিদ্যার স্থান। অনেক ভক্ত এখানে এসে নিয়ত-মানতের পূজা-অর্চনা করে থাকে।
কচুয়ার উপজেলার সাচারের জগন্নাথ দেবের রথ বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রার স্থান। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে জানা গেছে এই রথটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। স্বাধীনতার পূর্বে এ রথটিতে বেশ কিছু বিভিন্ন যুগের অবয়বে খচিত ছিলো। এ উপজেলার দোয়াটি গ্রামে মনসা মুড়ার উৎপত্তি। বেহুলা যখন সাপে কাটা স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে নিয়ে কলার বেলায় ভেসেছিলেন সেই কলার ভেলায় এখানে এসে থেমেছিলো। আর ভেলায় লাগানো বাঁশের কঞ্চি থেকেই নাকি এই মনসা পূজার উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। আরো রয়েছে কচুয়া উপজেলার উজানীর বেহুলার পাটাপুতার দিঘি এবং উজানির দরবার শরীফ।
এছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী ও শোল্লা জমিদার বাড়ি রয়েছে। তবে রূপসা জমিদার বাড়িটি এ উপজেলার প্রাচীন জমিদার বাড়ি। আরো রয়েছে লোহাগরার মঠ। এ মঠ নিয়েও রয়েছে নানা কাহিনি। চাঁদপুর জেলায় এতো সব ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।