বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০

মধ্যবিত্ত প্রবীণ পুরুষের জীবন
অনলাইন ডেস্ক

মানসম্মত জীবন যাপনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তরাই মধ্যবিত্ত প্রবীণ পুরুষ। এদের বড় একটি অংশ উচ্চ শিক্ষিত বলে আমার ধারণা। তারা চাকরি বাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য করে বাড়ি গাড়ি, সহায় সম্পদ, জমিজমার মালিক হয়েছেন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে চাকরি বাকরি, ব্যবসা বাণিজ্যে প্রবেশ করেছে। অনেকেই নাতি-নাতনির সাথে আনন্দে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। কারো কারো ছেলেমেয়েরা বিদেশে বসবাস করেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে কেউ কেউ দেশে ফিরে আসেন। বেশিরভাগই বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। যারা ছেলেমেয়েকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত দেখেন তারা অনেকটা স্বস্তিতে কাটান।

মধ্যবিত্ত প্রবীণদের ছেলেমেয়েরা কেউ কেউ তাদের পিতার প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপালন করে। আইন পেশায় যুক্ত পিতামাতার সন্তান তাদের চেম্বারে বসতে দেখা যায়। চিকিৎসক পিতা মাতার সন্তানদেরকে তাদের চেম্বারে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। এনজিওগুলোর শীর্ষ পদে আসীন ব্যক্তিদের অনেকেই প্রবীণ পুরুষ। তারাও নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে নিজ প্রতিষ্ঠানে স্থলাভিষিক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেসব পুরুষ যৌবনে লড়াই-সংগ্রাম করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেটির নেতৃত্বে তার স্ত্রী-সন্তানদের নেতৃত্বে রাখেন। চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করলে কিংবা শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে কর্মক্ষেত্র থেকে সরে আসতে হয়। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণকারীরা আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে পড়েন। চাকরিতে থাকাকালীন যে ধরনের সুযোগ এবং সম্মান পেতেন সেটা আর পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য সচেতন প্রবীণ পুরুষ সকাল বিকাল হাঁটতে যান। বন্ধু বান্ধব, পরিচিতজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, গল্প গুজব করে বাসায় ফিরে আসেন। বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা করতে যান। গ্রামের বাড়িতে জমিজমা দেখাশোনা করার জন্যে কেউ কেউ যান অথবা নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণ করা শুরু করেন। কেউ আবার নিজের বাগান বাড়িতে বন্ধু বান্ধব নিয়ে বেড়াতে যান।

এই বয়সে ধর্মে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে নিজকে জড়িয়ে রাখেন, ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করার জন্যে যান। পরকালের শান্তির জন্যে ধর্মের প্রতি বেশি আকৃষ্ট করতে মানুষকে দাওয়াত দিতে থাকেন। কেউ আবার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দান-খয়রাত, সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে প্রশান্তি লাভ করেন। বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের কাছে অতীত স্মৃতিচারণ করে আনন্দ লাভের চেষ্টা করেন। পৈত্রিক ভিটামাটি, জমি জমা ভাগ-বাঁটোয়ারা করা, দখলে নেয়া, প্রাচীর তোলা, সীমানা দেয়া কিংবা বিক্রি করে দেয়ার জন্যে ব্যস্ত থাকেন।

মধ্যবিত্ত প্রবীণ পুরুষদের একটি অংশ প্রবীণ অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকতে দেখা যায়। আবার এদের মধ্যে কেউ আবার বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাস তৈরি করে অসহায় প্রবীণদের দুঃখণ্ডকষ্ট লাঘবে ভূমিকা পালন করেন। মধ্যবিত্ত প্রবীণদের মধ্যে একটি অংশ সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চায় নিবেদিত। তারা গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক লিখে ব্যস্ত সময় পার করেন। স্বীকৃতি দিতে অথবা স্বীকৃতি পেতে উদার ভূমিকা পালন করেন। পারিবারিক জীবনে মধ্যবিত্ত প্রবীণ পুরুষ নানান রকম ঝামেলায় পড়তে দেখা যায়। কেউ কেউ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঝামেলা বাড়িয়ে দেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। পরিবার পরিজনের কাছে সেবা-যত্ন পাবার সুযোগ কমতে থাকে। পেশাদার সেবা কর্মীর কাছ থেকে সেবা-যত্ন নিতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বলে মনে করা হয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হতে দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল, ঝগড়াঝাটি, বনিবনা হওয়া না হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বনিবনা না হবার পেছনে থাকে চিন্তা-চেতনা, রুচি-সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য। মতপার্থক্যের কারণে আলাদা বিছানা, আলাদা ঘর, আলাদা বাড়িতে বসবাস করার ঘটনা অনেকের কাছেই জানা। অতি সম্প্রতি ৭৫ বছর বয়সী একজন প্রবীণ শুধুমাত্র আচরণগত ত্রুটির কারণে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। আবার ৭৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ স্ত্রী মারা যাবার পর ছেলেমেয়েদের অবহেলা-অযত্নের কারণে বিয়ে করেছেন।

মধ্যবিত্ত প্রবীণ পুরুষকে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনরা অভিযোগ-নালিশের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে দেখা যায়। নিকটতম আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবার সুযোগ কমতে থাকে। বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, স্মরণ সভা, মিলাদ মাহফিল, কুলখানি ছাড়া দেখা-সাক্ষাৎ হবার সম্ভাবনা কমে যায়। শারীরিক সীমাবদ্ধতা, সংকট তীব্র হলে ঘরবন্দী প্রবীণ জীবন শুরু হয়। সম্পদের বিলি বন্টন নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

প্রবীণদের একটি অংশ মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট, ইউটিউবে দিনের বড় সময় কাটিয়ে দেন। নিঃসঙ্গ মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু এন্ড্রয়েড ফোন। একাকী জীবনের অবলম্বন। শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তি প্রবীণের জন্যে একটা ভরসার জায়গা হিসেবে এগিয়ে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়