মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

স্মার্ট নাগরিক হওয়ার প্রথম পরীক্ষা
অনলাইন ডেস্ক

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এলো মেট্রো রেল। বাষ্পীয়, কয়লা এবং ইঞ্জিনচালিত শত বছরের পুরনো রেলকে পেছনে ফেলে এলো প্রযুক্তিনির্ভর এই ঢাকা মেট্রো রেল। স্বপ্নের এই মেট্রো রেলে বসে ঢাকাবাসী যাতায়াত করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৮ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগামী এই নতুন রেলের শুভ উদ্বোধন করেন। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাতায়াত করে রেলটি। লাল-সবুজের বগিগুলো পরিপাটি করে সাজানো। ভেতরে আড়াআড়িভাবে সাজানো সিটগুলো যাত্রীদের স্বাগত জানায়। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে আছে ৯টি স্টেশন। প্রতি ১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসা-যাওয়া করবে, প্রতি স্টেশনে অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড। ট্রেন ছাড়া, থামা, স্টেশনে ৪০ সেকেন্ডের বিরতি, দরজা খোলা, বন্ধ হওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা- সব কিছুই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ এবং প্রতি স্কয়ার মিটারে আটজনের হিসাবে ব্যস্ততম সময়ে এক হাজার ৮০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার, ট্রেনের বাইরে যাত্রী পরিবহনে থাকবে বিআরটিসির শাটল সার্ভিস।

প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, যা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। এরপর প্রতি স্টেশনে যেতে ১০ টাকা যোগ হবে। সে হিসাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ টাকা। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে ভ্রমণ করতে পারবেন, অন্য কেউ বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে গুনতে হবে জরিমানা। গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য বগিতে আসন সংরক্ষিত থাকবে। স্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য থাকছে পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা। সেখানে শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের বিশেষ ব্যবস্থাও থাকছে। সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি মেট্রো রেল চলবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। চালকবিহীন এই মেট্রো রেলটিতে মনিটরিংয়ের জন্য দুজন নারীসহ (মরিয়ম আফিজা এবং আসমা আক্তার) বেশ কয়েকজন এবং অন্যান্য সহায়ক পদেও লোকজন নিয়োগ হয়েছে। চালকদের চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাস এবং ঢাকায় আরো চার মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রো রেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মেট্রো রেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। ভবিষ্যতে তাঁদের দিল্লি মেট্রো রেল একাডেমি এবং জাপানেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের। স্মার্ট কার্ড-বেজড স্বয়ংক্রিয় প্রবেশ ও বহির্গমন গেট স্থাপন করা হয়েছে মেট্রো স্টেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। রেলের অভ্যন্তরে ও মেট্রো রেল স্টেশনে যাত্রীদের করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো সচিত্র উপস্থাপনার মাধ্যমে দেখানোর ব্যবস্থা আছে। ভিডিও এনিমেশন এবং টিকিট সংগ্রহের পদ্ধতি প্রদর্শনের জন্য ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

দুই ধরনের টিকিট নিয়ে চলাচল করবে মেট্রো রেলের যাত্রীরা। প্রথমটি একবার ভ্রমণের জন্য, দ্বিতীয়টি এমআরটি পাস বা স্থায়ী ভ্রমণের জন্য। একবার ভ্রমণের জন্য যাত্রীকে প্রতিবার যাত্রার আগে টিকিট কাটতে হবে। যাত্রা শেষ করে টিকিট স্টেশনের স্বয়ংক্রিয় দরজায় জমা দিয়ে আসতে হবে। কারণ এই টিকিট জমা না দিলে দরজা খুলবে না, ফলে যাত্রী স্টেশন থেকে বের হতে পারবে না। এমআরটি পাসের জন্য যাত্রীকে একবার একটি টিকিট কিনলেই হবে। টাকা শেষ হলে রিচার্জ করতে হবে। এই টিকিট যাত্রীকে স্টেশনে জমা দিতে হবে না। যাত্রীর কাছেই এই টিকিট সংরক্ষিত থাকবে। স্টেশনে থাকা টিকিট কাউন্টারের কর্মীদের কাছ থেকে এবং টিকিট বিক্রয় মেশিনের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিট বিক্রয় মেশিনের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হলে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে বাংলা অথবা ইংরেজি অপশন নির্বাচন করে সিঙ্গল ও পারমানেন্ট ভ্রমণের জন্য টিকিট নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে যাত্রীদের গন্তব্যের তালিকা। কোন্ স্টেশনের কত ভাড়া সেই তালিকা দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে তার গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। তারপর কয়টি টিকিট কাটবে তার অপশন আসবে। সিঙ্গল জার্নির জন্য একজন যাত্রী একবার যাত্রায় পাঁচটির বেশি টিকিট কাটতে পারবে না। এরপর ওকে বাটনে চাপ দিলেই মেশিন টাকা চাইবে। টাকা দিলেই টিকিট বেরিয়ে আসবে। মেশিনে সর্বনিম্ন ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা প্রবেশ করানো যাবে। অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ফেরত আসবে। এভাবে প্রতিটি স্টেশনে টিকিট পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে এমআরটি পাস রাজধানীর বিভিন্ন স্টেশনারি দোকানে ও শপিং মলে পাওয়া যাবে। যাত্রীরা সেসব জায়গা থেকে এই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে। ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন, এটিএম বুথ এবং অনলাইনেও (ই-টিকিট) ক্রয় করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেনটি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় কখনো বন্ধ হয়ে যাবে না। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ নজর রাখতে হবে। স্মার্ট যানের সঙ্গে স্মার্ট আচরণ করতে হবে। অযথা বসে বসে গল্প-আড্ডা করা যাবে না, পান-সিগারেট খাওয়া যাবে না, পোস্টার লাগানো যাবে না। ফেরিওয়ালা, ভিখারি কোনোভাবেই যেন উঠতে না পারে, সংলগ্ন ফুটপাতে ছোট ছোট দোকান যেন না বসে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যথাস্থানে ফেলতে হবে, টয়লেটগুলো যেন বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চ টার্মিনালের মতো না হয়। ঝকঝকে ফ্লোর দেখে এটি যেন ভবঘুরে কিংবা মাদকসেবীদের ঘুমানোর স্থান না হয়। যেন না হয় এলাকার বড় ভাইদের মোটরবাইক রাখার পার্কিং এবং ফাস্ট ফুডের দোকান। প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত স্মার্ট মেট্রো রেলটি আমাদের জন্য স্মার্ট নাগরিক হওয়ার প্রথম পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হব, স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখব।

লেখক : অধ্যাপক এবং তথ্য-প্রযুক্তিবিদ আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়