প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
সাংস্কৃতিক চেতনার পুনঃপাঠ
একজন আবদুল আলীমের জন্মদিন
আমিনুল ইসলাম
কোনো একটি জনগোষ্ঠীর ‘জাতি’ হয়ে ওঠার পেছনে জনসংখ্যার সাথে কাজ করে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও সমৃদ্ধি। সমৃদ্ধ ও সবল সংস্কৃতি থাকলে সেই জাতিরূপী জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে পরাজিত করতে পারে না কোনো শক্তি। কখনো সামরিকভাবে পরাজিত হয়ে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেললেও তারা সংগ্রাম করে সময়ের ব্যবধানে পুনরুদ্ধার করে নেয় সেই সার্বভৌমত্ব। আরবজাতি একসময় সারা মধ্যপ্রাচ্য জয় করে ফেলেছিল। অধিকাংশ দেশে চাপিয়ে দিয়েছিল আরবি ভাষা ও সংস্কৃতি। কিন্তু পারস্যদেশ জয় করেও সেখানে আরবরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে পারেনি। কারণ পারস্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল অনেক পুরোনো এবং অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। এক মহাকবি ফেরদৌসীর ‘শাহনামা’ মহাকাব্য পড়ে নিজেদের অতীতদিনের বীরত্ব ও গৌরবময়তার কথা সম্পর্কে পুনশ্চ সচেতনতা ফিরে পেয়ে এবং তার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে পারসিয়ানরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এবং ফিরে পেয়েছিল রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বসহ হারানো সকল গৌরব। ‘শাহনামা’ সম্পর্কে কবি মোহিতলাল মজুমদার তাঁর বিখ্যাত ‘স্বপনণ্ডপসারী’ কাব্যগন্থের একস্থানে বলেছেন, ‘‘তার সেই পৌরুষের প্রবল বন্যায়/জীবনের সর্বগ্লানি নিত্য ধুয়ে যায়।’’
দুই.
বৃটিশরা একসময় পৃথিবীর বড় অংশই দখল করে নিয়েছিল। বিজিত জাতিগুলোর চাপিয়ে দিয়েছিল নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি। আজ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং আরও অনেক দেশের আদি বাসিন্দারা প্রায় অস্তিত্বহীন। কারণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকলেও তা বিজয়ী জাতিকে প্রতিহত করার মতো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু ১৯০ বছর শাসন শোষণ করেও বৃটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ ইলোরাণ্ডঅজন্তাণ্ডমেঘদূতণ্ডতানসেনণ্ডতাজমহলের ভূগোল বৃটিশদের নিজস্ব দেশ ও সংস্কৃতির চেয়ে অনেক অনেক বেশি পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ। পাকিস্তানী শাসকরাও বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি কারণ বাঙালির সাহিত্য সংস্কৃতি অনেক মজবুত ও সমৃদ্ধ। আমরা যদি বর্তমান সময়ের পৃথিবীর দিকে তাকাইণ্ডণ্ডদেখতে পাবোণ্ডণ্ডবড় বড় রাষ্ট্রগুলো অবার সেই ‘‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন’’ চালাচ্ছে নানাভাবে নানা কৌশলে এবং ভয়ংকর চাতুর্যের সাথে। তাদের প্রধান অস্ত্র ভাষা ও মিডিয়া। এসব কারণেই সাহিত্যণ্ডসংস্কৃতির অঙ্গনের মানুষগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের অবদানের সঙ্গে অন্যদের অবদান তুলনীয় নয়। সংস্কৃতির প্রধান প্রধান দিকগুলো হচ্ছে ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, সিনেমা এবং চিত্রকলা। বাংলাদেশ ভাষা , সাহিত্য ও সংগীত এই তিনটি ক্ষেত্রেই অনেক বেশি সমৃদ্ধির অধিকারী।
তিন.
আজকের বাংলাদেশ সংগীতের যে শাখায় অতুলনীয়ভাবে সমৃদ্ধি ও স্বাতন্ত্র্যণ্ডএর দাবিদার, তা হচ্ছে লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। আর এই গানের কাণ্ডারীদের,বলা যায়, প্রধান হচ্ছেন আবদুল আলীম। সেই কাণ্ডারী কণ্ঠশিল্পী আবদুল আলীমের আজ ৯০তম শুভ জন্মদিন। উল্লেখ্য, আব্বাসউদ্দীন আহমদ পল্লীগীতির প্রতিষ্ঠাতা স্ম্রাট। আবদুল আলীম পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন অধিকতর বিস্তারিত স্ম্রাজ্যের স্ম্রাটট। তাঁরা যেন লোকসংগীত স্ম্রাজ্যের যথাক্রমে স্ম্রাট বাবর এবং স্ম্রাট আকবর। আবদুল আলীম পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশক বাংলার সঙ্গীতভুবনে রাজত্ব করেছেন আবদুল আলীম। তিনি প্রধানত লোকসংগীত শিল্পী ছিলেন। ছিলেন পল্লীগীতির রাজ্যের রাজা। তাঁকে মরমী শিল্পীও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু পল্লীগীতি নয়, অসংখ্য ছায়াছবির গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। গেয়েছেন লালনগীতি, কিছু নজরুলসংগীতও। তিনি যেণ্ডগানই গেয়েছেন সেণ্ডগানই তুমুলভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি এমনই কণ্ঠণ্ড মাধুর্য এর অধিকারী ছিলেন যে তাঁর কণ্ঠে গানের প্রতিটি শব্দ হয়ে উঠতো সুরের পাত্র। বাংলা সাহিত্যণ্ডসংগীতের বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল কোলকাতাকে কেন্দ্র করে। কারণ লালনণ্ডহাসন রাজা ছাড়া প্রধান প্রায় সকল গীতিকারণ্ডসুরকারণ্ড শিল্পীর কাজের শুরু হয়েছিল কোলকাতা থেকে।
চার.
সেই ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর সাহিত্য সঙ্গীতের আরেকটি কেন্দ্র হয়ে ওঠে ঢাকা। অনেক শিল্পীর মতো আবদুল আলীমও কোলকাতা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। অচিরেই তিনি হয়ে ওঠেন লোকসঙ্গীত ও ছায়াছবির গানের প্রধান কণ্ঠ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ( যা আজ বাংলাদেশ) সঙ্গীতভুবন স্বনির্ভর ও স্বাতন্ত্র্যখচিত হয়ে ওঠে যে ক'জন কণ্ঠশিল্পীর অসামান্য অবদানে, আবদুল আলীম ছিলেন তাদের শিরোমণি। সত্যিকথা বলতে কি তিনি পশ্চিম বাংলার লোকসংগীত ও পূর্ব বাংলার লোকসংগীত ( তখন বলা হতো পল্লীগীতি) এর মাঝে একটি স্পষ্ট ব্যবধানরেখা এঁকে দেন। পূর্ব বাংলার লোকসংগীত পশ্চিম বাংলার লোকসংগীতকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে যায়, অনেক বিস্তৃতি লাভ করে, অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, শহরের শিক্ষিত লোকেরাও লোকসংগীতের ভক্ত হয়ে ওঠেন। এই গান একইসাথে গ্রামের অশিক্ষিত আধাশিক্ষিত মানুষের এবং শহরের শিক্ষিত বিদগ্ধ জনের গান হয়ে ওঠে। আর এর মূল কৃতিত্ব ছিল আবদুল আলীমের। মাঠের কিষাণ, ঘাটের মাঝি, পালের রাখাল, স্কুলণ্ডকলেজের শিক্ষার্থী, বালক থেকে বৃদ্ধ সবাই শ্রোতা ওঠে আবদুল আলীমের গানের। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরাও সমাজে প্রচলিত বহুদিনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে তাঁর গানের গভীর ভক্ত হয়ে উঠেন। আমার বাপণ্ডচাচারা ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন কিন্তু রেডিওতে নিয়মিত শুনতেন আবদুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, নীনা হামিদ, ফেরদৌসী রহমানদের গান। তবে সবারই প্রধান পছন্দ ছিলেন আবদুল আলীম।
পাঁচ.
আবদুল আলীমের গান হয়ে ওঠে প্রাণজুড়ানিয়া পূবালী বাতাস। এদেশের ছায়াছবির গানও শুরু হয় আবদুল আলীমের প্লেব্যাক দিয়ে। আশির দশক অবধি গ্রামের বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল মাইকে রেকর্ডের গান বাজানো, আর আবদুল আলীমের গান বাজতেই হবে সেখানে। আবদুল আলীমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ করে কোলকাতার এইচএমভি তাঁর গানের এলপি বের করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ছয়.
আমি ভাগ্যবান যে আমার শৈশবণ্ডকৈশোরণ্ডপ্রথম যৌবনকে সঙ্গীতমুখী ও সুরময় করে তুলেছিলেন প্রধানত আবদুল আলীম। আমি যে আজ সঙ্গীত নিয়ে এত ভাবি, এত সময় ও সামর্থ্য ব্যয় করি, আমার জীবন যে আজও সুরময়, তার পেছনে কৈশোরের আবদুল আলীম কাজ করেন নীরবে গোপনে। তাঁর গাওয়া কত গানই তো পুরো বা আংশিক মুখস্থ আজও আমার। ‘সর্বনাশা পদ্মানদী, তোর কাছে শুধাই’, ‘আর কতকাল ভাসবো আমি দুঃখের সারি গাইয়া’, ‘আমারে সাজায়ে দিও নওশারও সাজন’, ‘পরের জাগা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই’, ‘বহুদিনের পিরিত গো বন্ধু, একইদিনে ভেঙ্গো না’, ‘হলুদিয়া পাখি সোনার বরণ পাখিটি ছাড়িল কে’, ‘দোল দোল দোলোনি রাঙা মাথার চিরুনী’, ‘অসময় বাশি বাজায় কে রে পরান আমার বাইরাম বাইরাম করে’, ‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না’, ‘এ পারে তোর বসতবাড়ি রে’, ‘রূপালি নদীরে রূপ দেখে তোর হয়েছি পাগল’, ‘‘তোমার লাগিয়ারে সদাহ প্রাণ আমার কান্দে বন্ধুরে’’, ‘দুখিনীর পরানের বন্ধু রে, আমায় কই গেলি ফেলিয়া’, ‘পিঞ্জিরার পাখির মতো উইড়া যাইয়া দেখি, কোথায় গো আমার কালো পাখি’, ‘ও সুজন বন্ধুরে, আমার যাবার বেলায় নয়নজলখানি যদি তোমার মনে না লয় আমি না যেন জানি’, ‘উজান গাঙের নাইয়া’, ‘স্বরূপ তুই বিনে দুখ বলবো কার কাছে’, ‘মেঘনার কূলে ঘর বান্ধিলাম বড়ই আশা করে’, ‘কে কান্দেরে নদীর কিনারায়, আউলাচুল বাতাসে উড়ে ঘোমটা নাই মাথায়’, ‘এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই’, ‘শোনো গো রূপসী কন্যা গো, কার লাগিয়া গাথো ফুলের মালা’, ‘কে গো নিরালে বসি’, ‘ভাটির গাঙে ভাইটাল সুরে বাঁশি কে বাজাইয়া যাও ও রে বন্ধু একবার চাও ফিরে’, ‘কেহ করে বেচাকেনা কেহ কান্দে রাস্তায় পড়ে’, ‘অকূল দরিয়ায় দিলাম নাও ভাসাইয়া, দয়াল তোমার নাম লইয়া’, ‘প্রেমদরিয়ায় এত যে ঢেউ আগে না জানিতাম’, ‘দুয়ারে আইসাছে পালকী’, ‘মন ভোমরা মজলি না তুই রসুল নামের রসে’, ‘এ সংসারে কেউ নয় আপনজনা’, ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালুহু’, ‘কত যে রঙের খেলা জানো দয়াল আল্লারে’, ‘ও যার আপন খবর আপনার হয় না’, ‘এই সুন্দর ফল সুন্দর ফুল, মিঠা নদীর পানি’, ‘একূল ভাঙে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা’, ‘বাবু সেলাম বারে বার’, ‘সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা’, ‘আমার দেশের মতো এমন দেশ কি কোথাও আছে’অসম্ভব রকমের জনপ্রিয় এমন কত যে গানের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন আবদুল আলীম।
সাত.
আবুদল আলীম একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তার কাছে সেসব ছোটোই বলা চলে। প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদের ‘‘আবদুল আলীম স্মরণে “ কবিতাটির কথা মনে পড়ছে।
“কিছু কিছু নাম জানি যার অর্থের/কোনো স্থিরতা নেই/কিংবা এমনই অর্থবহ যে নদীর ঢেউয়ের/ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে/সে পার হয়ে যায় নদী।/গাছের সবুজের মধ্যে সে মিশে যেতে পারে।/পারে সবুজ পতাকার ভেতর/সূর্যের স্থায়ী লাল রং বিছিয়ে দিতে।/আবদুল আলীমণ্ডণ্ড/যেন ধানের জমির ওপর দিয়ে/বয়ে যাওয়া বাতাস।/যেন মেঘনার মাঝির ঘাম মুছে ফেলা/ঠাণ্ডা শরীরের ওপর/অস্তগামী আলোর শেষ রশ্মি।/যখনই তার কথা ভাবি, আমার ভেতরের/সবগুলো শিরায় রক্তের কলরোলণ্ডণ্ড/যেন আত্মা এক গায়ক মাঝির ভাটিয়ালি।/যার অনিঃশেষ গানের মাধুরী বৃষ্টি মতো/গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে/পানির ফোঁটা ঝরিয়ে যায়।’’
আরও অনেক কবির কবিতাতেই আবদুল আলীম নামটি কখনো উপমা, কখনো প্রতিতুলনা, কখনোণ্ডবা বিষয় হয়ে উঠে এসেছে। আমার নিজেরও একাধিক কবিতায় এসছেন এই নামটি।
“নদীর বিরুদ্ধে আজ উচ্চকণ্ঠ রমনার খাল,/সাম্পানণ্ডনিন্দায় দ্যাখো ঝড় তোলে বৃদ্ধবটমূলে,/নবীন মাল্লারা ছিঁড়ে নিজহাতে সাতরঙা পাল/খালের প্রশস্তি গায়ণ্ডণ্ডআলীমের ভাটিয়ালি ভুলে।/(নূতন বাতাসে বাজে খালের প্রশস্তি)
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “...নামে মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাকাইয়া তোলে।’’ আবদুল আলীম নামটিও সেভাবেই আজ কিংবদন্তীতে উন্নীত হয়েছে।
আট.
আমার সহকর্মীরা এবং রাজনীতিবিদগণের অনেকেই দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর স্বপ্নের কথা বলেন। আমি প্রতিবাদ করি। আমরা সিঙ্গাপুর হতে যাবো কনে? সিঙ্গাপুরের কিছু অর্থ ছাড়া আর কী আছে ? তাদের কী চণ্ডিদাস, আলাওল, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বেগম রোকেয়া, জীবনানন্দ দাশ, জয়নুল অবেদীন, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, আবদুল আলীম কিংবা একজন রুনা লাইলা আছে? তাদের কি একজন ববিতা আছে? তাদের কোনো লালনগীতি নেই, গীতাঞ্জলি নেই, অগ্নিবীণা নেই, সোনালি কাবিন নেই; নেই ভাটিয়ালি কিংবা ভাওয়াইয়া। আবদুল আলীমের মরমী কণ্ঠে আজও যখন শুনি, ‘‘আমার দেশের মতেন এমন দেশ কি কোথাও আছে ‘’, তখন মন ভরে ওঠে আনন্দে ও গর্বে।
নয়.
অথচ নতুন প্রজন্ম আজ ভুলে যেতে বসেছে এইমহান শিল্পীর কথা। আমরা নিজেরাই ভূমিকা রাখছি সেই সর্বনাশা বিস্মৃতি সংঘটনে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনিক প্রথম আলো, বণিক বার্তা এবং আরও কয়েকটি সংবাদপত্র দেখলাম। কোথাও এই মহান শিল্পীর জন্মদিনের কথা নেই। কেবল ব্যবসা আর ব্যবসা! আর নেতিবাচক সংবাদ দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের সর্ববিধ প্রয়াস। যারা আমাদের সাহিত্যণ্ডসংস্কৃতির যারা মজবুত ভিত রচনা করে দিয়ে গেছেন, তাদের কথা আমাদরে নতুন প্রজন্মকে জনাতে হবে, শোনাতে হবে। বিস্মৃতি যেন আমাদের সোনালি গৌরব থেকে বিমুখ না করে দেয়। আমাদের গভীর নিবিড় ও নিরবচ্ছিন্ন সক্রিয় সাংস্কৃতিক চেতনাই জাতি হিসেবে টিকে থাকার এবং আরও বেশি স্বকীয় সমৃদ্ধি অর্জনের প্রকৃষ্ট পথ। একটা কবিতার উদ্ধৃতি সহযোগে কথা শেষ করা যায় :
“বিস্মৃত বাঁশের কেল্লা, জলে ভাসে আলাওল নাম/কালের করাত হাসে: বটভায়া, দ্যাখো দফারফা!/সুরের অরিশ ভুলে প্রেমেণ্ডভরা নগরের ধাম/শেরাটনে হয়ে ওঠে কৌটিল্যের গোপন মুনাফা।/পাহাড়পুরের সোনা চূর্ণরেণু কালের ধুলায়/সেণ্ডধুলায় ধুলিচাপা মাঝিহীন গন্ধেশ্বরীণ্ডঘাট/শ্রীজ্ঞানের পাঠাশালা উড়ে যায় শিমুলতুলায়/শিক্ষার্থী বিকেল ফেরে বুকে নিয়ে বনসাইপাঠ।/তথাপি বেহুলাণ্ডপ্রেম স্বপ্ন হয়ে সাজায় পাঁজর/আকাশের ছাদ হয়ে পূবালিতে উঠেছে মশারি/স্বপ্নের সোপানে হাসে সুগভীর সম্মত আদর/আঁধারের চোরাপথে টর্চ হাতে অতন্দ্র প্রহরী।/সবুজ নিয়তে, দ্যাখো, মাটি ফোঁড়ে প্রতœপ্রাণ কত/বিনির্মাণে বিশ্বগ্রামণ্ডপ্রকৃতার্থে আলোকসম্মত।”
জয়তু আবদুল আলীম!