মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

উদ্যোক্তা হতে হলে অজুহাতকে না বলুন
অনলাইন ডেস্ক

মুন দাস। পেশায় আইনজীবী হলেও তিনি একজন উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন, উদ্যোক্তা হতে হলে অজুহাতকে না বলতে হবে। বাংলার গর্ব জামদানি শিল্প নিয়ে কাজ করেন তিনি। এ শিল্প সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে চান তিনি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

মুন দাস : ভীষণ ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

মুন দাস : ল’ সাবজেক্ট নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছি Stamford University of Bangladesh থেকে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উদ্যোক্তা কেনো হলেন?

মুন দাস : আমি একজন Social Entrepreneur হিসেবে কাজ করছি। সমাজের মানুষের জন্যে কিছু করতে চাই। বিশেষ করে নারীরা যেনো নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারে, আইন জেনে এবং আইন মেনে ব্যবসা করে সম্মানের সাথে নিজেরসহ তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারে। একজন নারী অনেক বেশি পড়াশোনার সুযোগ না পেলে বা বিয়ের পর বাংলাদেশের কালচার অনুযায়ী অনেক নারী ঘরবন্দি হয়ে জীবনের কাছে যেনো হেরে না যায়, যে হতাশায় তারা থাকে, এমন ২ জন নারীকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সামনে নিয়ে আসতে চাই। যেনো তাদের দেখে আরও ২ জন অনুপ্রাণিত হয়। এভাবে যেনো সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। আমি বোঝাতে চাই, আপনাদের নিজেদের যদি ইচ্ছে থাকে, তাহলে শুধু সাহস রাখুন, অজুহাতকে এক সাইডে রাখুন। আমি ততোক্ষণ কিছুই করতে পারবো, যতোক্ষণ আমি নিজে না নিজেকে সহযোগিতা করতে চাইবো। আমি এই কাজগুলো করার পদক্ষেপ নিয়েছি এই ভাবনা থেকে যে, আমি পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি, আমি চেষ্টা করলে দুজনকে কিছু করার সুযোগ করে দিতে পারবো। আমি মনে করি, অনেকেই তার চারদেয়ালের বাইরে যে একটা জগৎ আছে, সে-ও যে চেষ্টা করলে নিজেকে গড়তে পারবে, সেই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসা। একজন শিক্ষিত নাগরিকের তার দেশের প্রতি, দেশের মানুষের জন্যে কিছু করার দায়বদ্ধ থাকা উচিত।

আমার বিবেক আমাকে এটাই বলে, পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়ে শুধু ১০ থেকে ৫টা সিডিউল জব করে নিজে সুখে থাকার জন্যে জন্ম হয়নি। যদি সুযোগ হয় একটা মানুষেরও উপকার করে দিয়ে যেতে চাই। আমি একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নিবো, কিন্তু আমার নাম যেনো মানুষ সম্মানের সাথে স্মরণ করে। আর আমার মা সেই সম্মান পাবে, যার জন্যে আজকের আমি যতোটুকুই পড়াশোনা করেছি এবং অন্যের জন্য কিছু করার চিন্তা করছি। যিনি আমায় গড়েছেন সবার বিরুদ্ধে গিয়ে। আর সহযোগী ছিলেন এখনো আছেন আমার ৪ জন বড় বোন (মাসির মেয়ে)। উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে যতোভাবে সাপোর্ট দেয়া তারা দিচ্ছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি জামদানি নিয়ে কাজ করেন। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

মুন দাস : জামদানি বাংলার গর্ব, যাদের হাতে জামদানি তৈরি হয় তাদেরকে আমরা বলি তাঁতীশিল্পী। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই শিল্পীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমি আগেই বলেছি, আমি সমাজের মানুষের জন্যে কিছু করতে চাই। আমি যখন তাদের কাজ নিজে তাদের কাছে গিয়ে তাদের জীবনযাপন নিয়ে স্ট্যাডি করলামণ্ডতাদের অভিযোগ তারা যথেষ্ট মজুরি পায় না এবং তারা তাদের সন্তানদের এই পেশায় আসতে দিতে ইচ্ছুক নন। ক’জনের চিন্তা ভালো লেগেছে। তারা তাদের সন্তানদেরকে পড়াশোনা করাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কীভাবে বিক্রি করতে পারে তাদের পণ্য, সেসব বিষয় যেনো ভালো পারে। আর অন্য বাচ্চারা যারা এই কাজই বংশগতভাবে শিখতে চায় তাদেরকে শিখাবে। কারণ তারা এই কাজ ছাড়া আর কোনো কাজই পারে না।

কাজ শুরু করেছি এই চিন্তা থেকে যতো বেশি মানুষ জামদানি বিক্রিতে সহযোগিতা করতে পারবে, ততো বেশি তারা অর্ডার পাবে এবং তাদের যে অবহেলা কাজে অর্ডার পেলে কাজ বাড়লে আগ্রহ হারাবে না। দিনশেষে তার আয় না থাকলে তার নিজের জীবনযাপন যেমন সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকবে না, তেমনি তাদের প্রজন্মও সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠবে না।

একটা সমাজ কখনোই একটা শ্রেণির জন্যে গড়ে উঠে না। সুস্থ সমাজ এবং সুন্দর পরিবেশ প্রতিটি মানুষ ডিজার্ভ করে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী। তাই রূট লেভেলের মানুষদের জীবন সুস্থভাবে বেড়ে না উঠলে তারাও টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হবে বাংলার গর্ব জামদানির ইতিহাস।

এখানে আমার চেষ্টা হচ্ছে, তাঁতশিল্পীদেরকে সহযোগিতা করা এবং আমি যেহেতু জামদানি পণ্যের একাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি, এখানে তাঁতশিল্পীরা কাপড় বুনন করে দেয়ার পরে তা আরও কয়েক ধাপে কাজ করা হয়, যা দিয়ে তৈরি হয় জামদানি লংটাই, বো-টাই, জামদানি সুতি শার্ট এবং জামদানি গজ কাপড় দিয়ে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পোশাক। এই পোশাকগুলো বহন করতে ব্যবহার করছি পাটের শপিং ব্যাগ, যা নারীরা সহজেই বাসায় বসে সেলাই করে নিজের আয়ের পথ তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। খুব ছোট পরিষরে আমার এই কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : জামদানির কী কী পণ্য সরবরাহ করেন?

মুন দাস : জামদানি জন্মলগ্ন থেকে মেয়েদের পোশাক হিসেবে পরিচিত শাড়ি, থ্রি-পিস এবং ছেলেদের জন্যে ছিলো শুধুই পাঞ্জাবি। আমি চেষ্টা করছি জামদানিতে ছেলেদের পোশাকের চাহিদা বাড়াতে। তাই তৈরি করাচ্ছি ছেলেদের জন্যে জামদানি টাই, জামদানি সুতি শার্ট, ওয়েস্টকোট, জামদানি ফতুয়া, জামদানি সুতি এবং হাফ সিল্ক গজ কাপড় এবং সরবরাহ করা হয় জামদানি শাড়ি, থ্রি-পিস এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : জামদানির প্রতি মানুষের চাহিদা ও আগ্রহ কেমন?

মুন দাস : জামদানি যেহেতু হাতে বুনন করতে হয়, তাই দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু জামদানিতে ছেলেদের পোশাকের যে ভিন্নতাগুলো নিয়ে কাজ করছি সে পণ্যগুলো আমার সাধ্যমতো যতটুকু পরিচিত করাতে পারছি এতে দেখা যাচ্ছে, এই পণ্যগুলোর চাহিদা আছে এবং মূল্য সাধ্যের মধ্যে এই বিবেচনায় যেহেতু জামদানি তৈরি হয় হাতে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মুন দাস : আমি প্রতিষ্ঠানটি এখন একক মালিকানা হিসেবে পরিচালনা করছি। আগামীতে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করার ইচ্ছে আছে। কারণ আমি চাই, আমি না থাকলেও প্রতিষ্ঠান যেনো থাকে এবং আমি যাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্ছি তারা যেনো হারিয়ে না যায়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হন?

মুন দাস : ফ্যাশন ডিজাইনার শ্রদ্ধেয় বিবি রাসেল আপাসহ অনেকেই আছেন, সবাইকে স্মরণ করি শ্রদ্ধার সাথে। স্কুল জীবনের শিক্ষকসহ ভার্সিটির শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, যারা আমার কাজ নিয়ে অনুপ্রেরণা দেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসর সময়ে কী করেন?

মুন দাস : আমার বিজনেসের পণ্যগুলো নিয়ে আরও কীভাবে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলা যায়, পরিচিতি বাড়ানো বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করি এবং আইন বিষয়ে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে যেহেতু কাজ করি, আসলে কিছু না কিছু কাজেই ব্যস্ত রাখি নিজেকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়