মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুরে ইলিশের আকাল
অনলাইন ডেস্ক

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ইলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০০২ সালে ইলিশ রক্ষার জন্যে মা ইলিশ ও জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

স্বাদ, গন্ধে এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ চাঁদপুরের ইলিশ। ইলিশের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। ইলিশের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বেশ ভালো কাজ করে। এছাড়া চর্বি-সংক্রান্ত সব সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। ইলিশের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ৪০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। ইলিশে থাকা ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ইলিশে এল-আরজিনিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা মাংসপেশি ও টিস্যু তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলিশে এল-আরজিনিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা মাংসপেশি ও টিস্যু তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলিশে যে প্রোটিন থাকে, তা কোলাজেনসমৃদ্ধ। কোলাজেন হচ্ছে অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা কোষের যোগাযোগক্ষমতা বাড়িয়ে কোষের সার্বিক কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া ইলিশে ভিটামিন সি থাকে, যা ত্বক সুস্থ রাখে। এর কোলাজেন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় ইলিশ পেটের সমস্যা যেমন আলসার, কোলাইটিস ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। মানুষের মস্তিষ্কের ৬০ ভাগই চর্বি (ফ্যাট) থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ওমেগা-৩ ছাড়াও ইলিশে আছে ভিটামিন বি১২, যা ¯œায়ুকোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকি কমায়। ইলিশ ভিটামিন ডির ভালো উৎস। ভিটামিন ডি মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। ইলিশে থাকা আয়োডিন, জিংক ও পটাশিয়ামের মতো বিভিন্ন খনিজ উপাদান রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে, কোষের সংক্রমণ কমাতে ও থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ। যারা নিয়মিত মাছ খান, তাদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।ও মেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি), পোস্ট-ন্যাটাল ডিপ্রেশন (সন্তান প্রস্রব-পরবর্তী বিষণ্নতা) কাটাতে সাহায্য করে ইলিশ মাছ। বিশ্বজোড়া রয়েছে চাঁদপুরের ইলিশের সুখ্যাতি।

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। চাঁদপুরের ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে ইলিশ। কিন্তু ভরা মৌসুমেও সেই চাঁদপুরেই চলছে ইলিশের আকাল। ইলিশ চাঁদপুরের প্রধান প্রধান সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নদী এবং ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত। কর্মসংস্থান ও দারিদ্রবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ইলিশ। চাঁদপুর, হাইমচরের সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশের স্বাদ এখন নাগালের বাইরে। ইলশের আকালে জেলেরা একধরনের হতাশায় ভুগছেন। তাদের মনে সুখ নেই আছে নিদারুণ দুঃখ, কষ্ট। জীবন জীবিকায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। ইলিশ মূলত গভীর জলের মাছ। ইলিশকে রক্ষা করতে এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। ইলিশ শুধু আমাদের মাছ এবং আমিষের চাহিদাই পূরেণ করে না, ইলিশ রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) আয় করি। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। ইলিশের আকাল দূর করে জেলেদের মুখে হাসি ফুটানোও সম্ভব কিছু কর্মপরিকল্পনার গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। তবে সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে কঠিন কঠোর হতে হবে এবং তার সাথে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাঁদপুরে ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল মূল কারণ বলে মনে করেন হওয়া নদীর নাব্যতা হ্রাস, ডুবোচর, নতুন জেগে ওঠা চর, নদী দূষণ, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে রক্ষা করতে না পারা, জাটকা মৌসুমে জাটকা রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া, কারেন্ট জালের উৎপাদন ও ব্যবহার অব্যাহত রাখা ইত্যাদি। জেলেদেরকে সচেতন করতে হবে কারেন্ট জাল ব্যবহার না করতে অন্যদিকে কারেন্ট জাল উৎপাদর বন্ধে আরো কঠোর এবং কঠিন হতে হবে রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে। কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করতে পারলে শুধু ইলিশ নয়, দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কারেন্ট জাল শুধু মাছেরই শত্রু নয়, এই জাল পরিবেশের জন্যেও হুমকি।

চাঁদপুরের মেঘনাতে অসংখ্য ডুবোচরসহ বেশ কিছু চর জেগে উঠেছে। এই চরগুলো নদীর নাব্যতা ও স্বাভাবিক প্রবাহকে (স্রোত) বাধাগ্রস্ত করছে। এতে ইলিশের স্বাভবিক চলাফেরা ব্যহত হয়। ইলিশের বিচরণে নদীর যে নাব্যতা ও গভীরতা প্রয়োজন চরগুলো সেই নাব্যতা ও গভীরতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ডুবোচর এবং নতুন জেগে উঠা চরগুলো যদি খনন করা হয় তবে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে চাঁদপুরে ইলিশের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নদীর দুই তীরের নিরাপত্তাও মজবুত হবে। নদী দূষণ, কারেন্টজাল উৎপাদন ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, জাটকা রক্ষায় কঠোর হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর এবং জনগণকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা সর্বোচ্চ বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদেরকে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসনের কঠোরতাই বৃদ্ধি করতে পারে ইলিশের উৎপাদন। আমরা আশা করি, সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবেন। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে, আমাদের মাছের চাহিদা পূর্ণ করে বিদেশেও মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়