প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কাঠমান্ডুর হোটেল অ্যালফট থেকে নাগরকোটের উদ্দেশে গাড়িতে উঠি। নেপাল এমনিতেই ঠান্ডার দেশ। এর মধ্যে বৃষ্টি, তাই ঠান্ডা যেন আরও বেড়েছে। ঠান্ডা ঠেকাতে যথা সম্ভব কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিয়েছি। তবু যেন ঠান্ডা লাগছেই। দুটি রিজার্ভ গাড়িতে আমারা যাচ্ছি। আর ভ্রমণসঙ্গী সিনিয়র সাংবাদিকসহ ৩৩ জন। গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেড এ ভ্রমণের আয়োজন করেছে। ভ্রমণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ট্যুর এজেন্সি ট্রাভেল কাইটস। টিম লিডার গ্রের মো. আবদুল্লাহ আল কাফি। আর সার্বিক দায়িত্বে আছেন নোশিন ফারজানা প্রজ্ঞা, তাসকিন আল আনাস ও কবির হোসেন।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নেপালের মানুষও যে যার কাজে যাচ্ছেন। যারা বাইকে যাচ্ছেন, তাদের দেখি বাইকসহ নিজেকে রেইনকোটে মুড়িয়ে নিয়েছেন। ফলে শুধু বাইকের চাকা ভিজছে। বাকি সব বৃষ্টির বাইরে। এ বৃষ্টিময় শহর দেখতে দেখতে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কাঠমান্ডু শহর ছেড়ে গ্রামের পথ ধরি।
আঁকাবাঁকা উঁচুনিঁচু পথ পেরিয়ে আমরা চলছি এগিয়ে। মাঝেমধ্যেই দেখা মিলছে গ্রাম, বাজার। আর দূরে উঁচু উঁচু পাহাড়। তবে মানুষের চলচল একটু কমই মনে হচ্ছে। এছাড়া নেপাল পাহাড়ের দেশ। তাই পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজেই চলে এখানকার চাষাবাদ। পাহাড়ি এ চাষাবাদ দেখি যেতে যেতে পথের দুই পাশেই। অবশ্য অল্পস্বল্প সমতল জমিনও আছে। সেসব জমিনেও চাষাবাদ চলছে। আর পথের বাঁকে বাঁকে বা ফসলি জমিনের পাশ দিয়ে নেপালিদের বাড়িঘর। অধিকাংশ বাড়ি একতলা আকৃতির ও খুব একটা বড় না। এছাড়া বেশিরভাগ বাড়িই কাঠের তৈরি ও ছিমছাম। আর যে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে বেরিয়েছিলাম, সেই বৃষ্টি মাঝেমধ্যে থেমে যায়, আবার আসেও। পাহাড়, বৃষ্টি, আঁকাবাঁকা উঁচুনিঁচু পথ, সব মিলিয়ে যাত্রাটা ভালোই লাগছে।
নেপালের ম্যাপ অনুযায়ী সড়ক পথে কাঠমান্ডু থেকে নাগরকোটের
দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার বা একটু বেশি হবে। এ পথ পেরিয়ে আমরা যখন নাগরকোট আসি, তখনও বৃষ্টি পড়ছে। আমরা উঠি ক্লাব হিমালয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি হোটেলে। এটি নাগরকোটের অন্যতম হোটেল বা রিসোর্ট। এখানে আমাদের জন্য চা-কফির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠান্ডায় আমরা প্রায় সবাই জমে গিয়েছিলাম। তাই গরম গরম চা-কফিতে চুমক দিয়ে সবাই চাঙ্গা হই। রং চা, দুধ চা সব চা-ই ছিল।
রিসোর্টটির নিচতলায় একটা গিফটশপ আছে। সেই শপে দেখি একজন ছবি আঁকছেন। পাহাড়ের ছবি। এ ছবি বিক্রির জন্য। এছাড়া শপে আছে নেপালের ঐহিত্যবাহী নানা পণ্য ও পর্যটন স্মারক।
রিসোর্টটির বারান্দায় বসার চমৎকার ব্যবস্থা আছে। তবে বসতে পারছি না। কারণ, বাইরে তখনও বৃষ্টি পড়ছে। আর মেঘের কারণে দূরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, শুধুই কালো কালো মেঘ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় তুষারপাত। আমরা প্রায় সবাই রিসোর্টের বাইরে এসে সেই তুষারপার উপভোগ করি। আর তুষারপাত উপভোগ করতে গিয়ে ঠান্ডায় হাত প্রায় বরফ হয়ে যাচ্ছিল। তারপর কোনো রকমে হাতে হাত ঘঁষে হাত গরম করি।
এর আগে দুইবার নেপাল এসেছি। এর মধ্যে প্রথমবার নাগরকোট এসেছিলাম। দ্বিতীয়বার আসা হয়নি। আর তৃতীয়বার এসে এ তুষারপাত দেখি। এখানে তুষারপাত খুব ঘন ঘন হয়, তা নয়। মাঝেমধ্যে বা কয়েক বছর পরপর হয়। তাই তুষারপাত দেখে কেবল আমরাই যে আনন্দ পেয়েছি, তা নয়। এখানকার মানুষও দেখি বেশ আনন্দ পেয়েছেন মনে হলো। তুষারপাাতের ভেতরেই আমরা আবার রওনা হই কাঠমান্ডুর উদ্দেশে। ফিরতে ফিরতে দেখি নাগরকোটের মানুষও তুষারপাত উপভোগ করতে বাড়ির বাইরে এসেছেন। অবশ্য আমি এর আগে তুষারপাত দেখেছি ভারতের সিকিমে।
পাহাড়ি গ্রাম নাগরকোট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ১৯৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। আর এখান থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্ট ও অন্যান্য পর্বতের ভিউ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া এখানকার বাড়িগুলো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তৈরি। আর এ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে হয় ফসলের চাষাবাদ। নেপালের অন্যান্য স্থানে অনেক দর্শনীয় স্থান থাকলেও নাগরকোটে তেমন কোনো ঐতিহ্যবাহী কিছু নেই। তথাপি নাগরকোটের মূল বৈশিষ্ট্য এখান থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্ট ও অন্যান্য পর্বতমালার ভিউ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। সে কারণেই নাগরকোটে সারা বছরই পর্যটকের পদচারণা থাকে। আর এখানকার এভারেস্ট ভিউ থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য খবুই দারুণ। আবার এভারেস্ট ভিউ থেকে সূর্যোদয় দেখাটাও সত্যিই অন্যরকম। সব মিলিয়ে নাগরকোটের প্রধান আকর্ষণ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা। সেজন্য এখানকার প্রায় সব হোটেলও পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তৈরি ও সূর্যোদয়মুখী।