মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

আওয়ামী লীগ সংগ্রাম ও সমৃদ্ধির প্রতীক
অনলাইন ডেস্ক

গভীর অমানিশা। বাঙালি জাতির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের যন্ত্রণা চরমে। অতঃপর বঙ্গবন্ধুর হুঙ্কার দেয়া স্বাধীনতার ডাক। রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা লাল-সবুজের স্বাধীনতার পতাকা। মুক্ত আকাশ, অস্তিত্বের মানচিত্র অঙ্কনের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দলটি যেমন দেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী দল, তেমনি এই দলটির হাত ধরে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তাই এই দলটিই দেশের সংগ্রাম ও সমৃদ্ধির প্রতীক।

১৯৪৯ সালের এইদিনে পুরানো ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম হওয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দলটি আজ বাংলাদেশের বৈঠা ধরেছে। বাঙালি জীবন থেকে অভিশাপ মুছে দেয়ার নাম আওয়ামী লীগ, মুক্তির স্বাদ হাতে তুলে দেয়ার নাম আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের আরেক নাম যদি হয় বঙ্গবন্ধু, তবে মুক্তির নাম বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। যে দল পাকিস্তান গঠনে মানুষের সমর্থন পেতে দিনরাত ছুটেছে দ্বারে দ্বারে। সেই দলই পরবর্তীতে পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে মানুষের অধিকারে। আওয়ামী লীগ গায় সাম্যের গান। জন্ম নেয়ার দুই দশক পরই আওয়ামী লীগের বড় অর্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন। তাই তো ‘বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ’ এই তিনটি নাম ইতিহাসে এক সূত্রে গাঁথা, বাঙালির মেলবন্ধনের স্থান।

আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। আওয়ামী লীগ মানেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। উপমহাদেশের রাজনীতিতে গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে এই দলটি। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ধ্রুবতারার মতোই প্রত্যুজ্জ্বল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের যুগান্তকারী নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জয়ী হওয়ার গৌরব রয়েছে আওয়ামী লীগের।

দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে চলছিলো, ঠিক তখনই আঘাত হানে ঘাতকরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সেই বেদনার ছাপ বুকে রেখেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে তিনিই সভাপতি। একুশ বছর লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। মাঝে এক মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের অনেক নেতা-কর্মী হতাহত হন। ২০০১ ও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় দলটি। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশ জন্মের সেই শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাণ্ডারি হয়ে আজও কোটি মানুষের পাশেই আছেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সব সময় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে স্বৈরাচারী শাসকরা প্রায় ২১ বছর ক্ষমতা দখল করে রাখেন, তারা রাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক ভিত্তি বদল করে পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যান। দেশে দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করে যান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে একদিকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমন এবং অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতার অভ্যুত্থান রোখার কাজে ব্রতী হন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। তাঁর আমলে কৃষিভিত্তিক দেশকে শিল্পোন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যান। হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের এই সময়টা বাংলাদেশের উন্নতির স্বর্ণযুগ। আওয়ামী লীগ তার ৭৩ বছর বয়সের মধ্যে জাতি গঠন করেছে, স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করেছে-এর তুলনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। আর কোনো রাজনৈতিক দল এই গৌরব অর্জন করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ ৭৪ বছরে পা দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক তরুণ নেতা আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ঘিরে যে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে তাতে মনে হয় আওয়ামী লীগ চিরসবুজের শক্তিতে বলীয়ান থাকবে দীর্ঘকাল। তাইতো বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা, যা মোটেও সহজ কাজ নয়। এসব একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রগতিশীল নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম ও পরিশ্রমের ফসল।

প্রধানমন্ত্রীর সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনায় বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯-এর করাল গ্রাস থেকে দেশের আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশাল অবদান রেখেছে। গত ২৫ জুন উদ্বোধন হলো মানুষের হৃদয়ের আবেগ, আশা ও অনুভূতির পদ্মা সেতু। সকল চ্যালেঞ্জকে জয় করার অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ এই পদ্মা সেতু। নির্মিত সেতুটি উন্মুক্ত করেছে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুয়ার। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করার পর সরে যায় আন্তর্জাতিক আরো তিনটি সংস্থা; এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। পরের ইতিহাস আমাদের জানা। কথায় আছে ‘রক্ত কথা বলে’। সাহসী পিতার সাহসী কন্যা সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেন। কেটে যায় জাতির ভাগ্যাকাশের কালো মেঘের ঘনঘটা। দিগন্ত আলোকিত করে বাংলার আকাশে হেসে উঠে বিজয়ের সূর্য। এছাড়াও দেশে চলমান রয়েছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ মানেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শে চলা আওয়ামী লীগের হাতেই আজ বাংলাদেশ। সেই আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি যখন মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনা- তখন নিশ্চিন্ত বাংলাদেশ, নিশ্চিন্ত বাংলার কোটি মানুষের ভরসাস্থল।

লেখক : উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়