প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
রোজ সকালে উঠেই ক্লাস, নয়তো অফিস কিংবা সংসারের দেখভাল। আর আজ পরীক্ষা তো কাল প্রেজেন্টেশন। আবার প্রতিটি কাজও হওয়া চাই ঠিকমতো। এই তো আমাদের নিত্যকার যান্ত্রিক জীবন। জীবনের চলার গতিটা যান্ত্রিক হলেও আমাদের মন তো আর যান্ত্রিক নয়। আমরাও কোনো যন্ত্র নই। হাঁপিয়ে উঠি কর্মব্যস্ততার মধ্যে। নিজেকেই বলে বসি, ‘দূর, কাজটা এবার না হয় না-ই করলাম।’ আবার সেই ব্যস্ততার মধ্যেই ফিরে আসা।
হ্যাঁ, ব্যস্ততা তো থাকবেই। নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রয়োজনও আছে। পাশাপাশি নিজেকে একটু সময় দিতে হবে। এতে জীবনের একঘেয়ে ভাব কাটিয়ে তোলা যায়।
নিজের জন্য কিছুটা সময়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রের কাউন্সেলর মরিয়ম সুলতানা বলেন, ‘যে কোনো বয়স, পেশার মানুষের জন্যেই এটা প্রয়োজন। আমাদের শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মস্তিষ্কও একটা পর্যায়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কাজ যতো সহজই হোক না কেনো, সেটাকে কঠিন মনে হয়।’ নিজের পছন্দের কোনো কাজও একটানা করার ফলে বিরক্তি চলে আসে। একঘেয়েমি সেখানেও আসতে পারে। এই একঘেয়েমি হতে পারে নানা কারণে।
কেন এমন হয়?
কাজের ফল না পেলে
প্রত্যেকেই কাজ করেন সাফল্যের কথা চিন্তা করে। যখন দীর্ঘদিনের শ্রমে কোনো প্রাপ্তি বা পুরস্কার মেলে, তখন কাজ করার ইচ্ছা বেড়ে যায়। এর বিপরীত অবস্থা হলে স্বাভাবিকভাবেই কাজটির প্রতি অনীহা চলে আসে। মরিয়ম সুলতানা বলেন, ‘ছাত্র কিংবা একজন চাকুরে যখন দেখবেন তিনি তাঁর পরীক্ষায় বা কর্মক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না, তখন তিনি কাজে তেমন আগ্রহ পাবেন না।’
অতিরিক্ত চাপ
ব্যস্ততা তো সবার থাকেই। কিন্তু এরও একটি সঠিক পর্যায় থাকা দরকার। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করেন, যেসব কর্মজীবী নারীকে সংসারের দায়িত্বটাও নিতে হয়, তারা বেশি চাপে পড়েন। যত বেশি নিজেকে ঘড়ির কাঁটায় আবদ্ধ করে ফেলবেন, ততো বেশি হাঁপিয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়।
বিরতিহীন কাজ
কাজের মধ্যেও চাই বিরতি। এটি শরীর এবং মন দুটির জন্যেই প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন কিংবা প্রতিটি সপ্তাহে যদি আপনি লাগামহীনভাবে কাজ করতে থাকেন, বিরক্তি এমনিতেই চলে আসবে।
নিজের জন্যেই মেনে চলা দরকার
মরিয়ম সুলতানা জানান, পরিবার কিংবা প্রিয়জন তো আছেই। এর বাইরে শুধুই নিজের জন্যে কিছুটা সময় খুঁজে নেয়া উচিৎ। হয়তো ভাবছেন, তা কি আর সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা ঘরে বসেও চাইলে উপভোগ করতে পারেন একান্তে কিছুটা সময়।
সময়টা পরিকল্পনা করে নিন
এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি পাচ্ছেন। ওই দিনই নাহয় কাছাকাছি কোথাও ঘুরে এলেন। যে কাজের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান, সেটাই করুন। হতে পারে ছবি আঁকা, বই পড়া কিংবা পছন্দের কোনো সিনেমা দেখা। নিছক চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভালো লাগলে তাও করতে পারেন।
আর দীর্ঘদিন পর শহরের বাইরেও কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। দরকার আপনার সঠিক পরিকল্পনা।
সব সময়েই সাফল্য নয়
জীবনে বা প্রতিটি পর্যায়ে শুধু সাফল্য আসবে- এমন চিন্তা করাটা কিন্তু ভুল। ব্যর্থতাও জীবনের একটা অংশ। তাই নিজের পরাজয়কে মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন। যে কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারছেন না, সেগুলো নিয়ে চেষ্টা করুন। অন্যের সাফল্যে মন খারাপ না করে গঠনমূলকভাবে নেয়ার চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত কাজের চাপ না নেয়া
যতো কাজের চাপই থাকুক না কেনো, তা নিয়ে বেশি ভাববেন না। কেননা, কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত থেমে থাকে না। তাই আগে ভাবুন, তারপর ধীরে-সুস্থে কাজটি করার চেষ্টা করুন। যদি একান্তেই না হয়, তবে চিন্তা করুন কোনটি আপনার জন্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটির দিকেই মনোযোগ দিন।
প্রিয়জনের সঙ্গে কিছুটা সময়
হতে পারে আপনার কাছের বন্ধু কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য। তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় আলোচনা করতে পারেন। তাদের নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসতে পারেন। এর জন্যে একেবারেই আলাদা কোনো পরিকল্পনার দরকার নেই। অফিস বা ক্লাস শেষে একটু সময় বরাদ্দ রাখলেন।
কিছুক্ষণ বিরতি
আর কাজ যতোটা গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, একনাগাড়ে তা করতে যাবেন না। এতে ভুল বা সমস্যাগুলোও অনেক সময় চোখ এড়িয়ে যায়। তাই এক কিংবা দুই ঘণ্টা পর ক্লান্তি দূর করার জন্য বিরতি নেন। সে সময়টা নাহয় গান শুনুন, হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করুন।