সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ০০:০০

সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির কারণ
অনলাইন ডেস্ক

প্রথমেই কয়েকটি ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করি। গণমাধ্যমের কল্যাণে এসব ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে। এর মধ্যে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে গত ১০ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন ওরফে সুজন খানের দুই সন্তান ইয়াছিন (৭) ও মোরসালিনের (৫) জ্বরের সিরাপ পান করে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, দুই শিশুর মা রিমা বেগমই পরকীয়ার জেরে প্রেমিক ও চালকলের শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর দেয়া বিষমাখা মিষ্টি খাইয়ে তাদের হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৬ মার্চ রাতে রিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আরও একটি নৃশংস ঘটনা ঘটে গত ২৬ মার্চ রাতে। রাজধানীতে বসবাসরত তানিয়ার বাসায় এসি মেরামত করতে যায় টেকনিশিয়ান বাপ্পী। ওই নারীকে খুন করে তিন-চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি মোবাইল ফোনসেট ও প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় সে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পী এসি ঠিক করতে এসে সুযোগমতো মালপত্র লুট করতে গেলে তানিয়া বাধা দেন। এ কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

অন্যদিকে গত ২৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন গরিবের ডাক্তারখ্যাত দাঁতের চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল। তাকে ছুরিকাঘাতে মারা হলেও দুর্বৃত্তরা তার কাছে থাকা টাকাণ্ডপয়সা ও মোবাইল ফোনসেট নেয়নি। এছাড়া সন্তানের হাতে বাবা খুন, বাবা কিংবা মায়ের হাতে সন্তান খুন, স্বামীর হাতে স্ত্রীর মৃত্যু, স্ত্রীর হাতে স্বামী নিহত, ভাইয়ের হাতে ভাই খুনসহ নানাবিধ হত্যাকাণ্ড প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। এভাবেই প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললে দেখতে পাই- পরকীয়া, খুন, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের সংবাদে পাতা ভরে থাকে। শুধু যে রাস্তা ও গলি বা ঘর থেকে বের হলেই এ ধরনের অপরাধের সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ, তা নয়। পরিবারের ভেতরেও এমন অপরাধের মাত্রা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এর বাইরেও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য এখন লাগামহীন।

যে কোনো তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটছে। এর পাশাপাশি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে অনেক নারীকে খুন করছে। পারিবারিক সহিংসতার কারণে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা। এই যে এতো ঘটনা, অপরাধ, হত্যাকাণ্ড- এর আসলে কারণ কী? অনেকের মনের মধ্যেই এমন প্রশ্নের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। তাই স্বাভাবিকভাবে এর সঠিক উত্তর কার কাছে পাওয়া যাবে? তবে সুশীল সমাজ মনে করে, এর পেছনে অর্থনৈতিক হতাশা একটি বড় কারণ হতে পারে। কারণ যা-ই হোক, সব মিলিয়ে বলা যায়- সামাজিক অপরাধ দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

অপরাধবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, লোভ, অনৈতিকতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিচারহীনতা, প্রযুক্তির প্রসারের কারণেই এসব ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেনো বাড়ছে সামাজিক অপরাধ, অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়? এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? যতোদিন পর্যন্ত এসব প্রশ্নের সুরাহা না হবে, ততোদিন এ সমস্যার মূলোৎপাটনও সম্ভব হবে না। যেমন রোগ নির্ণয় করতে না পারলে তো নিরাময়ও সম্ভব নয়। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি পরিবারেরই ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকে। আর অনেক কারণ একত্র হয়ে এ ধরনের পারিবারিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তবে এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে হতাশা, পরকীয়া, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে পরিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি সহনশীলতার মাত্রা কমে যাচ্ছে। এছাড়া সামাজিক অস্থিরতার জন্যে জীবনে বাড়ছে হতাশা, মানসিক বিষণœতা ও আর্থিক দৈন্য। ফলে সমাজে বেড়ে চলেছে অপরাধ। এ অপরাধ এখন পরিবারে ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে সমাজে ভোগবাদী প্রবণতা বৃদ্ধিও এর একটি কারণ।

এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, উন্নয়নশীল বিশ্বে অপরাধপ্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতির মতো সামাজিক অপরাধ। এর প্রধান কারণ আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকা ইত্যাদি। আমরা জানি, বিশ্বের সবচেয়ে কম অপরাধের দেশ হলো সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। আর সবচেয়ে বেশি অপরাধের দেশ হলো পাপুয়া নিউগিনি, জ্যামাইকা, গিনি, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, হন্ডুরাসের মতো দেশগুলো। ফলে বোঝাই যায়, যখন অর্থনীতিতে কিছুটা সক্ষমতা আসে, তখন অপরাধ কমে যায়। আবার দুর্বল অর্থনীতি আরও দুর্বল হলে সামাজিক অপরাধ তীব্র আকার ধারণ করে। অর্থাৎ অপরাধের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতার একটি নিবিড় যোগসূত্র আছে।

বাংলাদেশেও করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। বেকারত্ব, অসচ্ছলতা ঘরে ঘরে নতুন করে দেখা দিয়েছে। তাই দেশে অপরাধ কমাতে হলে অর্থনীতির গতি ফেরাতে হবে, দ্রব্যমূল্য মানুষের হাতের নাগালে রাখতে হবে, মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। তবে শুধু অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও অপরাধ বাড়িয়ে তোলে। আমাদের সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

দেশ সমৃদ্ধ হলে অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে। অভাবের তাড়নায় স্বভাব নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা কম ঘটবে। এর পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধকেও বৃদ্ধি করতে হবে। কোনো ধর্মেই সহিংসতা, খুন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হয় না। তাই সচেতন মহলকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করতে হবে। যিনি আজ অপরাধকে প্রশ্রয় দেবেন, কাল তিনিও অপরাধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : কথাশিল্পী ও গণমাধ্যমকর্মী।

* সুচিন্তা বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়