সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১২ মে ২০২২, ০০:০০

পণ্যের মূল্যে ঘষামাজা ও প্রতারণা
অনলাইন ডেস্ক

করোনাকালে অনলাইন পণ্য সরবরাহ এবং মূল্য পরিশোধের যে প্রতারণা আমরা দেখেছি তা সহজে ভোলার নয়। মূল্য পরিশোধ করার পরও দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও পণ্যটি আসেনি কিংবা যে পণ্য দেওয়ার কথা তা না দিয়ে নিম্নমানের অন্য কিছু পাঠিয়ে দায় সেরেছে। আবার কোনো কিছু না দিয়েই টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। এসব হায় হায় কম্পানির কিছু কিছু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী চিহ্নিত করতে পারলেও ভুক্তভোগী মানুষের দুর্ভোগ মোটেও লাঘব হয়নি।

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে গ্রামের ও বস্তির গরিব ও দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের কাছ থেকে অল্প অল্প টাকা নিয়ে বেশি টাকা ফেরত দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকাণ্ডপয়সা আত্মসাৎ করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। এভাবে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। অব্যাহত প্রতারণার সঙ্গে নতুন করে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যে ঘষাঘষি করে নতুন মূল্য লিখে দেয়া। বিভিন্ন উৎসব, বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে পণ্যের মূল্যের হরহামেশা পরিবর্তন বর্তমান সময়ে মিডিয়ার কল্যাণে সবার নজরে এসেছে। একই পণ্যের ওপর একবার নয়, দুবার নয়, তিনবার পরিবর্তন করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা প্রতারণার কোন্ পর্যায়ে পড়ে তা ভেবে দেখা দরকার। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গ্রাহকদের কষ্টের টাকার এই জলাঞ্জলি, কষ্টের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

সম্প্রতি বিভিন্ন শপিং মলে এ ধরনের প্রতারণার দৃশ্য প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত এদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এ ধরনের চক্র এতো বেশি যে সামান্য কয়েকজন লোকবল দিয়ে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণার এই কার্যক্রম শুধু পণ্যের মূল্য পুনর্নির্ধারণ কিংবা খাদ্যে ভেজালই নয়; প্রতারণা চলছে খাদ্যে রং মিশিয়ে, মরা মাছে গরুর রক্ত মিশিয়ে, মহিষের মাংসকে গরু এবং কুকুরের মাংসকে খাসির মাংস বলে, পুকুরের মাছকে নদীর মাছ বলে। প্রতারণা আছে পোড়া মবিল দিয়ে ভাজাপোড়া করা, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বেচাকেনা করা, রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি এবং সিমেন্টের স্থলে বালি ব্যবহার করা ইত্যাদি। জাকাতের কাপড় দেয়ার নামে মানুষকে পায়ে পিষ্ট করে মেরে ফেলা প্রতারণা নয় কি? ত্রাণের প্যাকেটে ১০ কেজির স্থলে সাত কেজি দেয়া প্রতারণা নয় কি? গরিবদের জন্যে সরকারি সহায়তা তাদের না দিয়ে নিজের ঘরে খাটের নিচে কিংবা গুদামজাত করা প্রতারণা নয় কি? ফুটপাতে গরিব, অসহায় হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা প্রতারণা নয় কি? এগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা এতো শক্তিশালী যে সরকারপ্রধানকেও ভয় পায় না। প্রমাণস্বরূপ আমরা দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত ভূমিহীন অসহায় মানুষের জন্য তৈরি আশ্রয়ণ প্রকল্প, যেখানে নবনির্মিত ঘরগুলো উদ্বোধন করার কিছুদিনের মধ্যেই ধসে পড়েছে। জাতির সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা নির্দ্বিধায় যারা করে যাচ্ছে তাদের এখনই কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন।

এটা সত্য যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু রমজানকে কেন্দ্র করে অনেক মুসলিম দেশে পণ্যের দাম কমিয়েছে। অথচ দুর্ভাগা এই বাংলাদেশে রমজান মাস এলেই পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে। মহামান্য রাষ্ট্রপতিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অসৎ ব্যবসায়ীদের এসব কারসাজিকে গজব বলে উল্লেখ করেছিলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এক ধরনের পাপ এবং লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধ করারও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু এসব অপকর্মের জন্য দায়ী এক ধরনের অসৎ ও লোভী ব্যবসায়ী। অধিক লাভের আশায় পণ্যের গুদামজাত করা, বাজারে কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করা এবং সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার অধিকার তাদের নেই, কোনোভাবেই কাম্যও নয়। বাজারমূল্য ও সরবরাহ সঠিক রাখার লক্ষ্যে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় এবং বিক্রয় মূল্যের চার্ট ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও তা অনেকেই মানেন না। এ কাজে ব্যবসায়ীদের আন্তরিক হতে হবে। সব মার্কেটের সব পণ্যে সঠিক মূল্যের লেভেল বা স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে পণ্যের মূল্য কত তা ক্রেতাকে জিজ্ঞেসই করতে না হয়।

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ও ধৈর্য ধরে ব্যবসা পরিচালনা করলে একদিকে যেমন অনেক সওয়াব হয়, অন্যদিকে ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা উভয়ের স্বার্থই সংরক্ষণ হয়। পণ্যের মূল্য ঘষামাজা করে ব্যবসার পরিবেশ এবং ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা মধুর সম্পর্ক নষ্ট করা মোটেও কাম্য নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত হয়তো শুধু জরিমানা করবেন; কিন্তু পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হতে পারে, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বিক্রেতাই বেশি।

সম্প্রতি নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের মানুষ খুবই হিমশিম খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রোজার মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির পর এবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রাজধানীর ১০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে সুলভে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করছে। এ উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য কিনতে পেরে অনেকের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র। তবে অভাবী জনসংখ্যার অনুপাতে এ ধরনের উদ্যোগ আরো বেশি নেয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো অধিক জনবল নিয়োগসহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

উন্নত দেশের মতো হাট-বাজার, ছোট-বড় দোকান ও শপিং মল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খোলা এবং বন্ধ করার অভ্যাস খুবই জরুরি। এসব স্থানে কর্মরত শ্রমিকদের সার্ভিস আইডি/অ্যাকাউন্ট প্রদান, ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ এবং বৃদ্ধ বয়সে যাতে পেনশন ভোগ করতে পারেন সেজন্যে মালিক-শ্রমিক ও সরকারের সহায়তায় প্রতি মাসে সামান্য কিছু টাকা ওই অ্যাকাউন্টে জমা রাখার পরিকল্পনা করা উচিত।

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার : অধ্যাপক, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়