প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
মানুষের সমৃদ্ধ বংশপরিচয় অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার অঙ্গনে ব্যাপক অবদান রাখে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির ইতিহাসের অবিসংবাদিত মহানায়ক, বাঙালির সকল স্বাধিকার অর্জনের কিংবদন্তি, অকুতোভয় মহান নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রয়েছে এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় ঐতিহ্যিক পরিচয়। উচ্চ বংশীয় ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তাঁর মাঝে আশৈশব ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিক চেতনা বোধের উন্মেষও ঘটেছিল।
পবিত্র ইসলামেও বংশ পরিচয়ের মূল্যায়নে শিক্ষণীয় নির্দেশনা লক্ষ করা যায়। যদিও ইসলামে বংশ পরিচয় বিদ্যার উপর নানান চর্চা আমরা দেখতে পাই, প্রকৃতপক্ষে এ সংক্রান্ত জ্ঞানচর্চা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল। এমনকি ইসলাম পূর্ব জেহালতের যুগেও বংশ পরিচয় বিদ্যার উল্লেখযোগ্য প্রচলন ছিল। আমরা ইতিহাসে এ বিদ্যার সর্বাপেক্ষা উন্নত গ্রন্থ হিসেবে মুয়াররায বিন সাদুসি রচিত হাযফুম মিন নাসাবিন কোরাইশ ও হিশাম বিন মুহাম্মদ কালবি রচিত জামহারাত আন নাসাব গ্রন্থদ্বয় উল্লেখযোগ্য। শেষোক্ত গ্রন্থটি হিজরি দ্বিতীয় শতকে রচিত হয় এবং এটি তৎকালীন বংশ পরিচয় বিদ্যার আকরগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত; পরবর্তীকালে অন্যান্য ঐতিহাসিক এ-সংক্রান্ত গ্রন্থ প্রণয়নে উপরিউক্ত গ্রন্থের ব্যাপক সহযোগিতা নিয়েছেন।
মূলত ইসলাম বংশ পরিচয়ের আভিজাত্যকে গৌণ করে মানুষের যোগ্যতা, বিশ্বাস ও ন্যায়-নীতি-নিষ্ঠাকেই ব্যক্তির মর্যাদার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। ইসলামের এই সর্বজনীন ও মানবিক বিধান মেনে নিয়েও আমরা বলতে পারি, ভাষা, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় ও বংশীয় আভিজাত্য অনেক সময় ব্যক্তির রুচিবোধ, স্বাতন্ত্র, বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক বা সম্পূরক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্যই আমরা বলে থাকি, ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। উচ্চ বংশীয় একজন মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই সাধারণত উন্নত মানসিকতা ও সমৃদ্ধ রুচিবোধের পরিচয় বহন করে থাকেন; ব্যতিক্রম যা রয়েছে তা এ সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সম্ভ্রান্ত উচ্চ বংশীয় ঐতিহ্যের ধারক ছিলেন। তিনি ‘শেখ’ বংশীয় উত্তরাধিকার বহন করে আছেন। ‘শেখ’ কথাটি এসেছে আরবি থেকে। যার সাধারণ অর্থ হচ্ছে- খুবই শক্তিশালী, বিপুল ক্ষমতাধর বা আভিজাত্য সম্পন্ন। এটি সম্মানসূচক এক আরবি অভিধা বা পদবি হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাবান শাসকদের পদবি হিসেবেও শেখণ্ডএর ব্যবহার রয়েছে এবং সাধারণভাবে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা মুসলমানদের কারো কারো পদবি হিসেবেও শেখ শব্দের ব্যবহার করা হয়।
উল্লেখ্য, আরব সভ্যতার সাংস্কৃতিক বিকাশ ও প্রভাবে এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রসার ও সম্প্রসারণের ফলে আজ এই পদবি নানা দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় ও সম্মানসূচক অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে; যা বর্তমানে মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ল্যাটিন শব্দ ‘সেনেক্স’-এর বাংলা ‘বয়োবৃদ্ধ বা সম্মানিত’-এর আরবি প্রতিশব্দই হচ্ছে ‘শেখ’। তবে বর্তমানে এ পদবিতে যারা পরিচিত ও সংশ্লিষ্ট, তার পেছনে রয়েছে অনবদ্য তাৎপর্যময়তা। ইসলামের মহান পয়গম্বর ও মানবতার পরম বন্ধু হজরত মোহাম্মদ (সা.) ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে যাঁদের সরাসরি তিনি মুসলিম করেছেন, ইতিহাসে তাঁরা ‘শেখ’ অভিধায় ভূষিত। আমাদের এই প্রাচীন বঙ্গীয় জনপদে যাঁরা ইসলামের শাশ্বত পয়গাম নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই আরব আর পারস্য থেকে ইতিহাসের নানা সন্ধিক্ষণে এ ভূখণ্ডে আগমন করেন। তাঁদের কেউ ছিলেন মহানবী (সা.)-এর সাহাবি আর কেউবা তাবেয়ি, তৎপরবর্তীকালে আরো যাঁরা আসেন তাঁরা হলেন সুফি, দরবেশ, গাউস, কুতুব, অলি ও বুজুর্গ হিসেবে পরিচিত।
মহামতি শেখ আউয়াল নামে ঠিক এমনি এক দরবেশের আগমন এই বঙ্গে ঘটেছিল, আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু তাঁরই বংশের এক সৌভাগ্যবান অধস্তন বংশধর। খোকা নামের নবজাতক সন্তানের শ্বেত-শুভ্র পোশাক ও শশ্রুমণ্ডিত বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের ধারণকৃত এক ভিডিও দলিলের বরাতে বলা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্মলাভ করেন। আশৈশব যিনি অকুতোভয়, সৎসাহসী, সচ্চরিত্র, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দৃঢ়চেতা, স্বাধীনতাপ্রিয়, নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন, দরিদ্রের প্রতি দয়ালু, মানুষের প্রতি মমত্ববোধসম্পন্ন এবং বাবা-মায়ের কথা ও উপদেশের ফরমাবরদার হিসেবে অনন্য ছিলেন বলে উল্লিখিত দলিলে জানিয়েছেন তাঁরই শ্রদ্ধেয় পিতাণ্ডমাতা।
বিভিন্ন গ্রন্থসূত্রে জানা যায়-দরবেশ শেখ আউয়াল ব্যবিলনীয় সভ্যতার লীলাভূমি ইরাক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে বিশ্বখ্যাত অলিয়ে কামেল ও সুলতানুল আরেফিন হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রাহ.)-এর সফরসঙ্গী হয়ে ইসলাম প্রচারের মহান ব্রত নিয়ে বঙ্গে আগমন করেন। আল্লাহর এ মহান অলি সমুদ্রপথে জাহাজে করে আসেন বলে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত চট্টগ্রামে আস্তানা গেড়েছিলেন। দরবেশ শেখ আউয়াল ছিলেন হজরত বায়েজিদের (রাহ.) ঘনিষ্ঠদের অন্যতম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ আউয়াল দরবেশেরই সপ্তম অধস্তন বংশধর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বংশীয় ঊর্ধ্বতনদের খ্যাতনামা আরেক ব্যক্তি হলেন শেখ বোরহান উদ্দিন, যিনি দরবেশ শেখ আউয়ালের ছেলে শেখ জহির উদ্দিনের দৌহিত্র ছিলেন আর শেখ বোরহান উদ্দিনের বাবা ছিলেন শেখ জান মাহমুদ ওরফে তেকড়ি শেখ।
বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার গল্প গ্রন্থের বরাতে বলা যায়, অলিকুল শিরোমণি বায়েজিদ বোস্তামি (রাহ.) একদা শেখ আউয়ালকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তিনি যেন মেঘনাপাড়ের এলাকায় গমন করেন এবং তথাকার অধিবাসীদের মাঝে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার করেন। মুর্শিদের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দরবেশ আউয়াল চলে আসেন মেঘনা বিধৌত সোনারগাঁও এলাকায়। সেই সুবাদে দরবেশ শেখ আউয়ালের পরবর্তীকালে তাঁরই সন্তান শেখ জহির উদ্দিনও এই অঞ্চলেই বসবাস করেন। অতঃপর শেখ জহির উদ্দিনের ছেলে তেকড়ি শেখ সোনারগাঁও এলাকায় অনেকদিন বসবাসের পর একসময় ব্যবসার উদ্দেশে খুলনার দিকে পাড়ি জমান। আর দাদা ও বাবার আস্তানার দায়িত্ব দিয়ে যান অন্য বিশ্বস্ত লোকদের। তেকড়ি শেখের ছেলে শেখ বোরহান উদ্দিন তাঁর জনৈক বন্ধুর কাছে মধুমতি ও ঘাঘোর নদীদ্বয়ের মাঝখানে গড়ে ওঠা টুঙ্গিপাড়া গ্রামের কথা জানতে পারেন। পরবর্তীতে বন্ধুকে নিয়ে রূপসা নদী অতিক্রম করে তিনি চলে আসেন টুঙ্গিপাড়া, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এক কাজি পরিবারে এবং আজীবনের তরে এখানেই স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। আর এভাবেই বিখ্যাত শেখ পরিবারের গোড়াপত্তন হয় ঐতিহাসিক টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে।
শেখ বোরহান উদ্দিনের নাতী শেখ জাকির হলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের দাদা, আর শেখ লুৎফর রহমান হলেন শেখ আব্দুল হামিদের সন্তান এবং শেখ জাকিরের বাবা হলেন শেখ আকরাম। এই বংশ পরম্পরায় একটি ট্র্যাজিক ঘটনা রয়েছে। সেটি হলো-এই শেখ পরিবারের গোড়াপত্তনকারী শেখ দরবেশ আউয়াল পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কা শরিফে গমন করেছিলেন। হয়ত হজ¦-কার্যও সম্পন্ন করেছিলেন এবং হজ্বের মৌসুম শেষ হলো। কিন্তু অনেক দিন অতিক্রান্ত হলেও পুণ্যাত্মা দরবেশ আউয়াল একদা যে আরব ভূমি থেকে এদেশে এসেছিলেন, সেখান থেকে আর কোনোদিন তিনি আপনজনদের মাঝে প্রত্যাবর্তন করেননি। শেখ জহির উদ্দিনসহ পরিবারের অন্য সকলের উপর বয়ে যায় বিষাদের ছায়া; আজ অবধি তা এক অজানা রহস্যই থেকে গেল। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ভাষায় আমরা যাঁরা বেঁচে আছি তাঁরা এই দুই ভাইয়ের বংশধর আর দুই ভাই বলতে শেখ আকরাম ও শেখ কুদরত। তাঁদের দুজনের মৃত্যুর দুই এক পুরুষ পর থেকেই শেখ বাড়ির পতন শুরু হয়। পরপর কয়েকটি ঘটনার পরেই শেখদের আভিজাত্যটাই থাকল, অর্থ ও সম্পদ শেষ হয়ে গেলো।
বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য মেনে নিয়েই আমরা বলতে পারি, যদিও শেখ পরিবারের নামণ্ডযশ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, বিত্ত-বৈভব হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু তাঁর সুমহান ঐতিহ্য ও পরিবারের সমৃদ্ধ ইতিহাস কখনোই বিস্মৃত হয়ে যায়নি; বরং সময়ের বিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে সেই পরিবার আবারো সুকীর্তির শীর্ষে উপনীত হয়েছে এবং এমন আলোকপ্রভার বিকিরণ করেছে যা আর কখনোই ম্রিয়মান হবে না।
শেখ আকরামের দুই সন্তান : শেখ জাকির হোসেন ও শেখ ওয়াসিম উদ্দিন। শেখ জাকির হোসেনের তিন পুত্র : শেখ আবদুল মজিদ, শেখ আব্দুল রশিদ ও শেখ আবদুল হামিদ। আগেই বলেছি, এই শেখ আব্দুল হামিদই বঙ্গবন্ধুর দাদা। শেখ আবদুল মজিদের বংশধর বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন এবং শেখ ওয়াসিম উদ্দীনের বংশধর বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা। শেখ ফজিলাতুন নেছার পিতার নাম শেখ মোঃ জহুরুল হক (দুদু মিয়া) ও দাদার নাম শেখ মোঃ আবুল কাশেম।
টুঙ্গিপাড়ার ইতিহাস খতিয়ে দেখা যায়, আড়িয়াল খাঁর একটি শাখা ভাঙ্গা-টেকেরহাট ও রাজৈর হয়ে বাইগ্যার বিলের মধ্যে পতিত হয়েছে। এ শ্রোতধারার প্রাচীন রাজধানী কোতয়ালী পাড়ায় বয়ে যাওয়ার নাম ঘাঘোর নদী। পশ্চিমে মধুমতী আর পূর্বে ঘাঘোর নদী। মাঝ বরাবর জলাভূমি। টঙ্গ থেকে টুঙ্গি। জনবসতি গড়ে ওঠার পর টুঙ্গিপাড়া। এ পাড়ার বনেদী পরিবার-শেখ পরিবার। এ পরিবারে জন্মেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জন্মের পর তাঁর নানা শেখ আবদুল মজিদ নাম রাখেন মুজিব অর্থাৎ সঠিক উত্তরদাতা। মা-বাবা তাঁকে ডাকতেন খোকা বলে। সেই খোকা একদিন ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠলেন এবং পরবর্তীতে বাঙালি জাতি তাঁকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট একদল উচ্চাভিলাষী সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন পুত্র লে. শেখ কামাল, ক্যাপ্টেন শেখ জামাল ও শিশু রাসেল, দুই নববিবাহিতা পুত্রবধূ ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল ও পারভিন কামাল, একমাত্র ছোটভাই শেখ আবু নাসেরকে হত্যা করে ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে।
ঘাতকদল বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তার দু সন্তান বেবী ও আরিফ, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহকে হত্যা করে। সেরনিয়াবাতের স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মেজোবোন আমেনা খাতুন গুলিবিদ্ধ হন সেদিন। শরীরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি ৩০ বছর বেঁচেছিলেন। ২০০৫ সালের মৃত্যুবরণ করেন। সেই ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণিকেও হত্যা করে ঘাতকদল। বঙ্গবন্ধুকে দাফন করা হয় তাঁরই জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায়।
বঙ্গবন্ধুর বংশের তথা তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু দু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম এক প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত প্রবাসী জীবন কাটাতে হয় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিভিন্ন দেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরতে সক্ষম হন তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি তার দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে বিদেশের মাটিতে রেখে এদেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন।
শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়েজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পিতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন তাদের দাদা। অপর দিকে বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহেনার তিন সন্তান হলো- টিউলিপ সিদ্দিকী, রেদওয়ান সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী হিসেবে দুই কন্যার ঘরে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ নাতি-নাতনী এবং নাতি-নাতনীদের ঘরে তাদের তিন সন্তানের তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যমতে- সজীব ওয়াজেদ জয়ের সন্তান সোফিয়া রেহানা ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সন্তান জায়িফ ও রেদওয়ান সিদ্দিক ববির সন্তান কাউস হলো বঙ্গবন্ধুর পুতি। কাউসের দাদা ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক হলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট জামাতা।
তথ্য সংগ্রহ
১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়, ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ঢাকা, ২০১২
২. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবার, বেবী মওদুদ, ঢাকা, ২০১০
৩. অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান, তৃতীয় মুদ্রণ, মার্চ ২০১৩, ঢাকা
৪. বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার গল্প, খালেদ বিন জয়েনউদ্দিন, একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭, ঢাকা
৫. অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জল বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি, মমিনুল হক খোকা, জানুয়ারি ২০১৬, ঢাকা