প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২২, ০০:০০
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রগিরি পাহাড় চূড়ার উচ্চতা ৮ হাজার ৩৫৬ ফুট। সাদা বরফে ঢাকা এ পাহাড় চূড়ার সৌন্দর্য সত্যিই অনন্য। নেপালের এ অনন্য সৌন্দর্য দেখতে আমরা যখন চন্দ্রগিরি পাহাড়ে আসি, তখন প্রায় দুপুর। তাই পর্যটকদের প্রচুর ভিড়। অবশ্য ভিড়ের আরেকটি কারণ হলো, দিনটি ছিল নেপালের সরকারি ছুটির দিন। সেজন্য পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ঘুরতে এসেছেন। নেপালে এর আগে দুইবার এলেও চন্দ্রগিরিতে এবারই প্রথম। আর এবারের ভ্রমণসঙ্গী সিনিয়র সাংবাদিকসহ ৩৩ জন। গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেড এ ভ্রমণের আয়োজন করে। আর ভ্রমণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ট্যুর এজেন্সি ট্রাভেল কাইটস। টিম লিডার মো. আবদুল্লাহ আল কাফি। আর সার্বিক দায়িত্বে আছেন গ্রে’র নোশিন ফারজানা প্রজ্ঞা, তাসকিন আল আনাস ও কবির হোসেন।
সকালে হোটেলে নাশতা সেরে নিজেদের রিজার্ভ গাড়িতে রওনা হই চন্দ্রগিরির উদ্দেশে। ঘণ্টাখানেকের আগেই চলে আসি চন্দ্রগিরি। কাঠমান্ডুর থামেল শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রগিরির অবস্থান। গাড়ি যেখানে থামল, সেখানে একটা গোলচত্বর আছে। এর পাশেই ক্যাবল কারের টিকিট কাউন্টার। টিকিটের দাম যাওয়া আসাসহ নেপালিদের জন্য ৭০০ রুপি আর সার্কভুক্ত দেশের জন্য ১১২০ রুপি।
টিকিট কাউন্টারের পাশেই আইলাভ চন্দ্রগিরি লেখা হার্টসেফ আছে। এ হার্টসেফে মূলত পর্যটকরা চন্দ্রগিরির স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলছেন। আমরাও এ হার্টসেফের সামনে যে যার মতো ছবি তুলছি। এরপর সবাই দাঁড়িয়েছি লাইনে। সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়, যেখান থেকে ক্যাবল কার ছাড়ে সেখানে। সেই সিঁড়িতেই দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর শেষ হয় অপেক্ষার পালা। উঠে বসি ক্যাবল কারে। প্রতি ক্যাবল কারে ৮ জন যাত্রী। আমরা অবশ্য আগে থেকেই আটজন করে দল বানিয়ে নিয়েছি।
ক্যাবল কার ছুটে চলছে উপরের দিকে। কারের চারপাশ গ্লাসে ঢাকা। চারপাশের সব কিছু দেখা যায়। তবে সব সময় যে দেখতে পারছি তা না। কারণ, কখনও কখনও আশপাশের সবই মেঘে ঢেকে যায়। তখন কিছুই দেখা যায় না। নিচে তাকিয়ে দেখি কেউ কেউ পাহাড় বেয়ে উপরে উঠছেন। আসলে নিচ থেকে ট্রেকিং করে উপরে ওঠার কয়েকটি পথ আছে। যারা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যই এ পথ।
কারের এ পথ শেষ হয় ১০ মিনিটের মাথায়। যেখানে কার থামল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮ হাজার ২৬৮ ফুট। এরপর পায়ে হেঁটে চূড়ায় উঠার পালা। তবে চূড়ায় উঠার আগেই সবার যে উচ্ছ্বাস, তা দেখার মতো। আমাদের কেউ কেউ বরফের দলা বানিয়ে খেলছেন। কেউ বরফে শুয়ে পড়ছেন, কেউ বসে পড়ছেন। আর সবাই মোবাইলে ছবি তুলছেন ধুমছে। অবশ্য এখন ভালো ভালো মোবাইল আসার কারণে দারুণ সব ছবি পাওয়া যায় মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে। আমার হাতে অবশ্য পুরাতন মডেলের ক্যানন ডিএসএলআর ক্যামেরা।
এখানে ছবি তোলার পর সবাই হেঁটে হেঁটে উপরের দিকে উঠছি। বরফে ঢাকা পাহাড়। তাই একটু সাবধানেই পা ফেলতে হচ্ছে। কারণ একটু এদিক-সেদিক হলেই বিপদ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৩৫৬ ফুট উচ্চতার এ পাহাড় চূড়ার সৌন্দর্য সত্যিই দারুণ। সাদা বরফে ঢাকা পুরো পাহাড়। সেই সঙ্গে এখানে যেসব স্থাপনা আছে, সেগুলোর ছাদও বরফে ছায়া। এছাড়া এটি শুধু বরফে ঢাকা পাহাড় চূড়া নয়, এ চূড়ায় একটি মন্দিরও আছে। ভলেশ্বর নামের এ মন্দিরে ভক্তরা এসে প্রার্থনাও করছেন। মন্দিরের পাশেই একটি সাইনবোর্ডে মন্দিরের ইতিহাস লেখা আছে নেপালি ও ইংরেজি ভাষায়। মন্দির ছাড়া এখানে আরও আছে কনফারেন্স হলো, ভিউ টাওয়ার, রেস্টুরেন্ট, সুভেনির শপ। এছাড়া চূড়ার একপাশে আছে জিপলাইন। অর্থাৎ এক চূড়া থেকে তারে ঝুলে আরেক চূড়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা। এটা ২৫৫১ মিটার লম্বা। অনেকেই দেখছি এ তারে ঝুলছেন।
ঠা-ায় আমাদের অবস্থা নাজুক। এমন সময় কাফি ভাই সবার জন্য কফি অর্ডার করলেন। কফি খেয়ে ভালো লাগছে। তার চেয়ে বেশি ভালো লাগছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৩৫৬ ফুট উপরে এসে কফি খাচ্ছি সেটা ভেবে।
ক্যাবল কারে এর আগে দার্জিলিংয়ে আর বরফে ঢাকা পাহাড় দেখেছিলাম সিকিমে। তবে চন্দ্রগিরির অভিজ্ঞতা অনন্য। প্রায় ঘণ্টাখানেক থেকে আমরা নামি চন্দ্রগিরি থেকে। ছবি : লেখক।