রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

সাক্ষাৎকার : ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী

রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্যে সচেতন হতে হবে

রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্যে সচেতন হতে হবে
অনলাইন ডেস্ক

রোগীদের দোয়া আর ভালোবাসায় মোড়ানো ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর জীবন। ছোটবেলায় বাবা বলতেন, ‘চিকিৎসক হও, তাহলে মানুষকে সেবা দিতে পারবে। কেননা চিকিৎসকই মানুষের খুব কাছাকাছি যেতে পারেন। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারেন’।-বাবার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। বর্তমানে তিনি আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার (অর্থোপেডিক সার্জারী) হিসেবে কর্মরত।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারডুগী গ্রামের কৃতীসন্তান ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ৫ নভেম্বর শুক্রবার দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নেন আলআমিন হোসাইন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে বেশ ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারডুগী গ্রামে আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : উত্তর শাহতলী জোবাইদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করি। তারপর চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। এসএসসি পাস করি মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : ছোটবেলায় যখন অসুস্থ হয়ে পড়তাম বাবা তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন। বাবা বলতেন, বড় হয়ে তুমিও চিকিৎসক হও, তাহলে তোমাকে আর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে না। তুমিই তখন মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে। কেননা চিকিৎসকই মানুষের খুব কাছাকাছি যেতে পারেন। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারেন। তখন থেকে চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটির সূচনা হয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : যদিও ছাত্রাবস্থায় আমরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতাম। তবে, যেদিন চিকিৎসক হিসেবে পাস করে ইন্টার্নি হিসেবে হাসপাতালে গেলাম সেদিনকার অনুভূতি অন্যরকম ছিলো। মনে হয়েছে, আমরা অন্য একটা জগতে চলে এসেছি। কেননা মানুষের সবচেয়ে বেশি সেবা করার সুযোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রেই সম্ভব। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : ১৭ এপ্রিল ২০১৩ সালে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক আগের তুলনায় অনেক ভালো। বর্তমান আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালটি প্রথমে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট তারপর যথাক্রমে ১শ’ ও ১শ’ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ছিলো। বর্তমানে হাসপাতালের সব বিভাগই আগের চেয়ে উন্নত। আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে পাশর্^বর্তী জেলা শরীয়তপুর এবং লক্ষ্মীপুরের মানুষও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : আমি যেহেতু অর্থোপেডিক্স প্র্যাকটিস করি তাই আমার কাছে ব্যথা, হাড়ভাঙ্গার রোগীই বেশি আসে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : রোগীদের কাছে আমার প্রত্যাশা হলো, সচেতনতা। দেখা যায়, অনেক রোগী ব্যথা কিংবা হাড়ভাঙ্গলে কবিরাজের কাছে চলে যায়। পরবর্তীতে যখন কবিরাজের কাছে কোনো উপকার না পায় তখন আমাদের কাছে আসেন। দুঃখজনক হলো তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। ফলে রোগীর অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। তাই আমি বলবো, রোগীদের অনেক সচেতন হতে হবে। শারীরিক যে কোনো প্রয়োজনে প্রাথমিকভাবেই হাসপাতালে চলে আসবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবে। কোনো মতেই তারা যেনো অপচিকিৎসা গ্রহণ না করে। কারণ অপচিকিৎসা গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : চিকিৎসাজীবনের সুখের অনেক স্মৃতি আছে। মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার পর গায়ে হাত বুলিয়ে দোয়া করেন, হাসিমুখে কথা বলেন সেটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়।

দুঃখের স্মৃতি হলো আমার প্রথম কর্মস্থল ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়ই পানিতে পড়া রোগী আসতো। বিশেষ করে শিশুরা। কিন্তু সবাই মৃত। এটা আমার চিকিৎসাজীবনে দুঃখজনক ঘটনা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। আসলে কম বলবো না, তৃতীয় বিশে^র উন্নয়নশীল দেশ আমরা, তাই আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকবেই। সারা বিশে^ করোনাকালে চিকিৎসাক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতা আছে তা ফুটে উঠেছে। তাই বলবো, সাধ্যের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ যতোটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে এবং আমাদের কাজ করতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : প্রথমত, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে নিয়ম আমি তার সাথে একমত না। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ রয়েছে। একটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অপরটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এ দুটি বিভাগ আবার আলাদা। কাজ কিন্তু একসাথেই করতে হয়। ফলে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। আমি প্রথমেই এটা দূর করবো। দ্বিতীয়ত, একেবারে উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেকটি নির্দেশনা একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদায় করতাম। তৃতীয়ত, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের সব কাজ চিকিৎসকদের অধীনে পরিচালনা করবো। বর্তমানে চিকিৎসকদের বাইরে অন্যরাও স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানে আসলে চিকিৎসকদের থাকার দরকার ছিলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে হলে আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কিছু করা যাবে না। আমাদের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। বর্তমানে ফাস্টফুড, স্পাইসি ফুড, জাঙ্কফুড ও লাল মাংস মানুষ বেশি খায়, এগুলো পরিহার করতে হবে। এগুলো মানব শরীরের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে আমাদের নিয়মিত ফলমূল, শাক-সবজি ও মাছ বিশেষ করে ছোট মাছ খেতে হবে। বর্তমানে দেখা গেছে, আমরা এগুলো খুব বেশি খেতে চাই না, এগুলো নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : অবসরে পড়াশোনা করি। ছবি দেখি। ভ্রমণ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী : ধন্যবাদ।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর

ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়