বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

কোন্ হেপাটাইটিস কতটা মারাত্মক

হাকীম মোঃ মিজানুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
কোন্ হেপাটাইটিস কতটা মারাত্মক

হেপাটাইটিস লিভারের একটি প্রদাহ, যা হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ভাইরাসের মাধ্যমে ঘটে। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় শরীরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ না করলে ধীরে ধীরে মারাত্মক হয়ে ওঠে।

হেপাটাইটিস লিভারের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কময়ে দিতে শুরু করে। প্রতিবছর লিভারের এই রোগে বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে ভুগছেন। হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণের ফলে লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর থেকে লিভার সিরোসিস এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হেপাটাইটিসকে নির্মূল করার জন্য সব দেশকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি বছর মোট ১০ কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হন। ছোট-বড় সবারই এই রোগের ঝুঁকি আছে। তবে বড়দের শরীরে এ রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে জন্ডিস হতে পারে।

হেপাটাইটিসের ৫টি ধরন আছে। এ, বি, সি, ডি ও ই। এর মধ্যে টাইপ বি ও সি মারাত্মক রূপ নেয়। যা লিভার এক সময় সিরোসিস ও ক্যান্সারের আকার ধারণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় তা এর চিকিৎসা করা না হলে সমস্যা আরও কগুরুতর হয়ে ওঠে। ফলে লিভার সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কোন হেপাটাইটিস বেশি মারাত্মক?

হেপাটাইটিস এ

হেপাটাইটিস এ ছড়ানোর মাধ্যম হলো পানি ও খাবার। এই রোগ প্রাথমিকভাবে একজনের মুখের লাল থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া দূষিত পানি, দুধ, স্টোর করা ও অপরিচ্ছন্ন খাবার খেলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আবার হেপাটাইটিস এ ভাইরাস আছে, এমন কোনো জিনিস ব্যবহারেও হেপাটাইটি এ সংক্রমণ হতে পারে। যেমন-সংক্রমিত শিশুর ডায়াপার বদলানোর পরে ভালোভাবে হাত না ধুলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এছাড়া যদি আপনি কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার বা পানীয় ভাগ করে খান তাহলেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি দরজার হাতল বা পৃষ্ঠে যদি এই জীবাণু থাকে তাহলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

এ রোগে আক্রান্ত হলে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে তাৎক্ষণিক কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। সংক্রমিত হওয়ার অন্তত ২-৬ সপ্তাহ পর শরীরে দেখা দিতে পারে কয়েকটি লক্ষণ-

* জ্বর

* বমি ও বমি ভাব

* ধূসর-রঙের মল

* ক্লান্তি

* পেটে যন্ত্রণা

* জয়েন্টে ব্যথা

* খিদে না লাগা

* জন্ডিস

সবার শরীরেই যে একই রকম লক্ষণগুলো দেখা দেবে তা কিন্তু নয়। প্রতিটি লক্ষণ না দেখা দিলেও আপনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পরেন। এ ধরনের উপসর্গ ৬ মাস ধরেও থাকতে পারে।

হেপাটাইটিস বি

সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ও ৪০ কোটির বেশি মানুষ এই রোগের জীবাণু অজান্তেই বহন করে চলেছেন।

ভাইরাস শরীরের রক্ত, ঘাম, লালা, বীর্যসহ বিভিন্ন দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস ও এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।

অন্যান্য হেপাটাইটিসের ধরন থেকে বি বেশ বিপজ্জনক। এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ, যা লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের রূপ নেয়। যদি কোনো গর্ভবতী নারী এতে আক্রান্ত হন; তবে তার গর্ভস্থ শিশুও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরে, দেড় থেকে ৬ মাসের মধ্যে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। তবে ৬ মাস পর থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে, যেমন-

১. জন্ডিস (ত্বক ও চোখের হলুদ হওয়া)

২. গাঢ় রঙের প্র¯্রাব, হালকা রঙের মল

৩. ক্লান্তি

৪. পেটে ব্যথা

৫. ক্ষুধামন্দা

৬. বমি বমি ভাব

৭. ডায়রিয়া

৮. জ্বর

হেপাটাইটিস বি সাধারণত নীরব ঘাতক। ১০-২০ বছরের মধ্যে শরীরে সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দিলেও এরই মধ্যে লিভারে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ভাইরাস।

লিভার সিরোসিস ঝুঁকি সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায় হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে। এরপর যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-

১. পেটের গহ্বরে তরল জমে যাওয়া ও ফোলাভাব

২. পেটের উপর স্টার-আকৃতির শিরা দেখা যায়

৪. জন্ডিস

৫. চুলকানি

৬. সহজ ক্ষত ও রক্তপাত।

হেপাটাইটিস বি নির্ণয়ের পর নিয়মিত চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। না হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভারের মারাত্মক হয়ে যেতে পারে।

হেপাটাইটিস সি

হেপাটাইটিস সি বেশ জটিল ভাইরাস। এটি হেপাটাইটিস এ ও বি-এর চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। রক্ত দেওয়া-নেওয়া, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের সময় যদি জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে হেপাটাইটিস সি-এর সংক্রমণ ঘটে।

সারাবিশ্বে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস সিতে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে লিভারের ক্ষত ও বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে।

আবার অনেক সময় সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার অকার্যকর, যকৃতের ক্যানসার, বা খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর শিরা ফুলে যেতে পারে। যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়