মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৯

চাঁদপুরের সেই সাজ্জাদ এখন আমিরাতের কোচ হয়ে ঢাকায়

অনলাইন ডেস্ক
চাঁদপুরের সেই সাজ্জাদ এখন আমিরাতের কোচ হয়ে ঢাকায়

১৬ বছর আগে কলকাতায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। আজ তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতীয় আর্চারি দলের কোচ হিসেবে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে পা রাখতেই যেন ফিরে গেলেন সেই সোনালি দিনে, যেদিন তিনি বাংলাদেশের আর্চারিতে ইতিহাস রচনা করেছিলেন।

২০০৯ সালের এপ্রিলে কলকাতায় হয়েছিল চতুর্থ এশিয়ান গ্রাঁ প্রি আর্চারি টুর্নামেন্ট। রিকার্ভ এককে ইরানের আর্চারকে হারিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান সাজ্জাদ। সেটিই ছিলো বাংলাদেশের আর্চারি ইতিহাসে এশীয় স্তরে প্রথম সোনা। এর দুই মাস পর ক্রিকেটে এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে বাংলাদেশ।

ক্যারিয়ারে সাজ্জাদের একটাই আন্তর্জাতিক সোনা। ২০১০ সালে এসএ গেমসে রুপা, আর দক্ষিণ এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপেও রুপা জেতেন তিনি। রিকার্ভ ছেড়ে ২০১১-১২ সালে নামেন কম্পাউন্ডে। তবে ২০১২ সালের পর সিদ্ধান্ত নেন, এবার সময় অন্য কিছু করার। আর্চারি মাঠে থাকবেন, তবে কোচ হিসেবে।

বাংলাদেশে কোচিং শুরু আনসারে। পরে কাজ করেছেন বিকেএসপি আর সেনাবাহিনীতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ছিলেন জাতীয় দলের কোচ। ২০১৬ সালে ভারতের এসএ গেমসেও গিয়েছিলেন দলের সঙ্গে। ২০২১ সালে মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু করেন নতুন যাত্রা।

জাতীয় স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ বললেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে আর্চারির সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু খেলোয়াড়ের স্বল্পতা বড়ো চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে খেলোয়াড়েরা খেলার প্রতি পাগল, কিন্তু এখানে অনেকেই শখের জন্যে খেলে। তবে একটা জিনিস ভালো, ফল আসতে দেরি হলে কেউ তাড়াহুড়ো করে না। কোচ-খেলোয়াড়, সবাইকে সময় দেওয়া হয়।’

সেই ধৈর্যের ফলও এখন চোখে পড়ছে। সাজ্জাদ যখন প্রথম আমিরাতে যান, তখন খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৬১৫-৬১৬। এখন তা বেড়ে ৬৯০-৬৯৫। গত ওয়েস্ট এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে (সৌদি আরবে) আমিরাত দল আটটি সোনা জেতে, যা সৌদি আরবের সমান। সাম্প্রতিক কাতার আসরেও তারা দ্বিতীয় স্থান দখল করে।

ঢাকায় শুরু হয়েছে ২৪তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। ইউএই দল এবার অংশ নিচ্ছে ৯ জন খেলোয়াড় নিয়ে—রিকার্ভে ২ মেয়ে ও ৪ ছেলে, কম্পাউন্ডে ১ মেয়ে ও ২ ছেলে। সাজ্জাদ কম্পাউন্ড বিভাগের কোচ। দলের লক্ষ্য নিয়ে বললেন, ‘আমার প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। ওরা যেন নিজেদের আগের পারফরম্যান্সটা সামান্য উন্নত করে। তার বেশি কোনো চাপ দিচ্ছি না।’

জাতীয় আর্চারি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে যখন তিনি বাংলাদেশের আর্চারদের অনুশীলন দেখেন, তাঁর মুখে হাসি ফুটে উঠে। সাজ্জাদ বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। ফেডারেশন, কোচ, খেলোয়াড়...সব মিলিয়ে এখন আর্চারির মান আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমি গর্বিত। কারণ, এই যাত্রার শুরুর দিকের একজন ছিলাম আমি।’

চাঁদপুরের এক তরুণ আর্চার থেকে আন্তর্জাতিক কোচ—এই পথচলাই সাজ্জাদ হোসেনের জন্যে বড়ো এক অর্জন। কলকাতার সেই সোনালি সকাল তাঁকে বাংলাদেশের আর্চারিতে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। সূত্র : প্রথম আলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়