রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

নাক ও ফুসফুসের সমস্যায় আকুপ্রেশার

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন
নাক ও ফুসফুসের সমস্যায় আকুপ্রেশার

নাক একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। নাকের দুটি নাসিকা ছিদ্রের সাহায্যে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি। তাছাড়া দেহের তাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে নাকের ছিদ্রগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। যেমন দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা যখন বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তখন ডান নাসারন্ধ্র খোলা থাকে। আবার যখন অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজন হয়, তখন বাম নাসারন্ধ্র খোলা থাকে।

নাকের সমস্যা

সর্দি, নাকের দেয়ালে কফ জমে যাওয়া, নাকের ছিদ্র বন্ধ থাকা ও পলিপাস ইত্যাদি সমস্যার মূল কারণ গরমের জন্যে ঠাণ্ডা লাগা, দেহের অতিরিক্ত তাপ ও হজমশক্তির দুর্বলতা।

চিকিৎসা

* দেহের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে হবে।

* ফুসফুসের যে কোনো একটি ব্যয়াম নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।

ফুসফুস

আমাদের শরীরের ভাইটাল অঙ্গগুলোর মধ্যে ফুসফুস অন্যতম। অন্যান্য ভাইটাল অঙ্গ যেমন হার্ট, লিভার, কিডনী ইত্যাদির আমরা যে পরিমাণ যত্ন নেই ফুসফুসের সেই পরিমাণ যত্ন নেয়া হয় না। মস্তিস্ক যদি তিন মিনিটের বেশি সময় অক্সিজেন না পায় তাহলে মস্তিষ্কের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং ফুসফুস যতো বেশি বিকশিত হবে, ততো বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করবে।

ফুসফুস হলো বক্ষ গহ্বরে ডায়াফ্রামের উপরে হার্টের দু পাশে অবস্থিত হালকা লাল বর্ণের কোণাকার দুটি অঙ্গ। ডানে ও বামে দুটি ফুসফুস রয়েছে। ফুসফুসদ্বয় হতে বৃত্তাকার তরুণাস্থি নির্মিত রিং-এর মতো একটি নলের সাহায্যে শ্বাসনালীতে উন্মুক্ত হয়েছে, একে ট্রকিয়া বা শ্বাসনালী বলে। এই নলের ফুসফুসের সথে যুক্ত অংশকে ব্রংকাই এবং শ্বাসনালীর সাথে যুক্ত অংশকে ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্র বলে। মানুষের ফুসফুস ৭০ কোটিরও বেশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ থাকে, একে অ্যালভিওলাস (বহুবচন অ্যালভিওলাই) বলে। শ্বাস-নিশ্বাসের সময় এই অ্যালভিওলাই সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের বিনিময় ঘটায়। ঠাণ্ডা, সর্দি, বায়ুদূষণ এবং ধুমপানজনিত কারণে অ্যালভিওলাইতে মিউকাস (শ্লেমা) জমে যায় এবং শ্বসন জটিলতা সৃষ্টি হয়।

ফুসফুসের সমস্যার মূল কারণ

* শরীরের বাড়তি তাপ অথবা পাকস্থলির উত্তাপ কমে যাওয়া।

* বায়ুদূষণ আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বসবাস। বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ঘনীভবন ও কঠিন বর্জ্যরে পরিমাণ স্বাভাবিক বা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেলে এ অবস্থাকে বায়ুদূষণ বলে। সাধারণত জ্বালানি পোড়ানো ধোঁয়া, কীটনাশকের ব্যবহার, ধুলা, বৃষ্টি, কুয়াশা, ধোঁয়াশা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইত্যাদি থেকে বায়ু দূষিত হয়। বায়ুদূষণের ফলে ফুসফুসে বিষাক্ত বর্জ্য জমে যায় এবং এড্রিনাল গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সর্দি-কাশি নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, অ্যাজমা ফ্লুরোসি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি শ্বসন জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফুসফুসের ও এড্রিনাল গ্রন্থির বিন্দুতে নিয়মিত আকুপ্রেশার চিকিৎসা করলে এবং প্রতিদিন সকালবেলা নির্মল বাতাসে দশ মিনিট ফুসফুসের ব্যায়াম করলে শ্বসন জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

* ধুমপানজনিত শ্বসন জটিলতা : ধুমপান স্বাস্থের জন্যে বিশেষ করে ফুসফুসের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর। সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে প্রধানত নিকোটিন, টার ও কার্বন মনোক্সাইড (পড়)-এর মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকে। এদের মধ্যে

১. নিকোটিন ও টার ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

২. কার্বন মনোক্সাইড হিমোগ্লোবিনে শোষিত হয়, এতে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনক্ষমতা কমে যায়। এটি ধমণীতে কোলেস্ট্রেরল জমতে সাহায্য করে। ফলে হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৩. সিগারেটের ধোঁয়া অ্যালভিওলাইয়ের প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং অ্যাভিওলাসের আয়তন বেড়ে যায়। এমনকি কোনো কোনো স্থানে ফেটে গিয়ে ফুসফুসে ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করে।

৪. সিগারেটের ধোঁয়া পাশে অবস্থানরত অধুমপায়ীরও ক্ষতি করে।

ফুসফুসের ব্যায়াম

ফুসফুসের ব্যায়ামগুলোর যে কোনো একটি নিয়মিত অনুশীলন করলে দেহের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়। ফলে দেহ বিষমুক্ত হয় এবং প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

* চিৎ হয়ে শুয়ে শ্বাস নিন। এভাবে গুণে ১, ২, ৩, ৪...। যতোক্ষণ শ্বাস নিয়েছেন ততোক্ষণ আটকিয়ে রাখুন। তারপর একই সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন। তারপর আবার শ্বাস বন্ধ করে রাখুন একই সময়। দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার এই প্রক্রিয়া অভ্যাস করুন। আস্তে আস্তে প্রতি ধাপে সময় বাড়ান। অর্থাৎ ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গোণার চেষ্টা করুন। প্রতিবার শ্বাস বন্ধের সময় ফুসফুস বিশ্রাম পায় এবং পুনরায় শক্তি লাভ করে। যক্ষ্মা রোগীদের উপর এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করলে অবিশ্বাস্য ফল পাওয়া যায়।

* শান্ত পরিবেশে সোজা হয়ে বসুন। খুব ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকুন। প্রতি মিনিটে ১০ বার থেকে শুরু করে প্রতি মিনিটে ৫০ বার পর্যন্ত করার চেষ্টা করুন। প্রতিবারে দু মিনিট করে প্রতিদিন দুবার এই অভ্যাস করুন।

* মুখ খুলে খুব ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং মুখ বন্ধ করে সঙ্গে সঙ্গে নাক দিয়ে খুব জোরে শ্বাস ছেড়ে দিন। এক সাথে দশ থেকে পনেরবার এরূপ করুন। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের জটিলতা দূর হয়।

* প্রথমে এক নাক বন্ধ করে অন্য নাক দিয়ে শ্বাস নিন। যতোক্ষণ শ্বাস নিয়েছেন ততোক্ষণ শ্বাস আটকিয়ে রাখুন তারপর ততো সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন। এবার এই নাক বন্ধ করে অন্য নাক দিয়ে একইভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করুন।

শ্বাস গ্রহণের সময় বুকের ছাতি দুই থেকে তিন ইঞ্চি প্রসারিত করার চেষ্টা করুন। শ্বাস আটকানোর সময় পেটকে ভেতরের দিকে টেনে রাখতে চেষ্টা করুন। এতে ভুঁড়ি কমবে এবং বিশেষ ফল পাওয়া যাবে। শ্বাস-প্রশ্বাসে এ প্রক্রিয়াগুলো সকল বয়সের মানুষের জন্যে উপকারী। নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো করলে-

* শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হবে ফলে রক্ত বিষমুক্ত হবে সেই সাথে দেহও বিষ ও কার্বনমুক্ত হবে।

* ঠাণ্ডা, কাশি, হাঁপানি, যক্ষ্মা, পোলিও, মেনিনজাইটিস, মানসিক বিকারগ্রস্ততা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং পেশী-সংক্রান্ত গোলযোগের ক্ষেত্রে এ অনুশীলনগুলো অতীব প্রয়োজন।

* কিডনীর উপর অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় চাপ কমে যাবে।

* এর ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

যে কোনো সময় যে কোনো অবস্থায় যেমন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে এমন কি হাঁটতে হাঁটতে এই অনুশীলনগুলো করা যায়। তবে খালি পেটে কিংবা আহারের দু ঘণ্টা পরে করা ভালো এবং সকালবেলা নির্মল হাওয়ায় এ অনুশীলনগুলো করা সবচেয়ে বেশি উপকারী।

ফুসফুসের সমস্যাবলি

টনসিল, স্বরভঙ্গ ও গলাব্যথা : শরীরের বাড়তি তাপ অথবা পাকস্থলির উত্তাপ কমে যাওয়ার ফলে ফুসফুসে জমে থাকা মিউকাস গলার (ল্যারিংক্স) মধ্যে জমাট বেঁধে থাকে এবং প্রতিবার কাশি দিলেই শ্লেষ্মা বের হয়। যখন এই টক্সিনযুক্ত শ্লেষ্মা গাঢ় হয়ে যায়, তখন টনসিল, স্বরভঙ্গ ও গলা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসা

* শরীরের বাড়তি তাপ বের করে দিন।

* পেটে কৃমি থাকলে তার চিকিৎসা করুন।

* হোমিও ঔষধ (ঘীঁ ঠড়স ২০০) প্রতিদিন রাত্রে ৪৫ দিন ধরে সেবন করুন।

* দিনে ৫/৬ বার সামান্য কালোজিরা চিবিয়ে খাবেন।

* দিনে ৪-৫ বার ছোট এক টুকরা মিছরি মুখে রাখুন। এতে গলা প্রশমিত থাকে এবং কাশির বেগ রোধ হয়।

* প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবার ৭, ৮, ২২, ২৩, ২৭, ২৮, ৩০ ও ৩৪নং (আকুপ্রেশার চিত্রানুযায়ী) পয়েন্টে চাপ দিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়