প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
উদর গহ্বরের পেছনে বক্ষ পিঞ্জরের নিচে ও মেরুদণ্ডের দু পাশে দুটি কিডনী থাকে। দেহের বিভিন্ন কোষে সংঘটিত রসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব উৎপন্ন হয় রক্তের সাথে মিশে যায়। কিডনী এই বিষাক্ত পদার্থ যুক্ত রক্তকে ছেঁকে পরিশোধিত করে। প্রতিদিন কিডনী ১৭৫ লিটার রক্ত ছেঁকে পরিষ্কার করে এবং ১.৫ লিটারের মতো অপ্রয়োজনীয় বস্তু প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়।
কিডনীর সমস্যার লক্ষণ : স্বল্প প্রস্রাব, প্রস্রাব লালচে বর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়, প্রস্রাব ত্যাগের সময় মূত্রনালী জ্বলে, চোখের পাপড়ির নিচে বৃত্তাকারে ফোলা ও কালো থাকে, হাত-পা ফুলে যায় ইত্যাদি।
কিডনী সমস্যার মূল কারণ :
* আমরা প্রতিদিন রসনাবিলাসের জন্য খাদ্যে যে তেল, মসলা ব্যবহার করি এবং ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্যগ্রহণ করি এগুলো থেকে শোষিত খাদ্যরস কোষে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে প্রচুর পরিমাণ টক্সিন উৎপন্ন করে।
* শহর, শিল্প এলাকা অথবা অন্য কোনো ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় বাতাসে বিষক্ত কার্বন জাতীয় বর্জের পরিমাণ বেশি থাকে। তা আমাদের ফুসফুসের কার্যক্রম ব্যাহত করে। তখন রক্তে কার্বন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং কিডনীকে অধিক কাজ করতে হয়। এক সময় কিডনী বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন ক্ষমতা কমে যায়।
* কিডনী সমস্যার আরও একটি মূল কারণ হলো যৌনরোগ। যেমন গনেরিয়া, সিফলিস, এইডস জরায়ু ক্যান্সার প্রোস্টেড ক্যান্সার ইত্যাদি। এসব জটিল রোগের কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণ টক্সিন সৃষ্টি হয়। কিডনীর উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। যখন শরীরে টক্সিনের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট লেভেলের উপরে যায় তখন তা শরীরের প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেনের নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থ উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে এবং রক্তে কৃটিনিংয়ের মাত্রা যখন শতকরা আট ভাগের উপরে যায় তখন কিডনী অকেজো হয়ে পরে। রোগীকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে কৃটিনিংয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, যা জীবিত মৃত্যুর সমান। এই সময় শরীরের পানি ধারণক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। দিন দিন রোগীর ওজন বাড়তে থাকে।
আবার যখন থাইরয়েড/প্যারা-থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম ব্যহত হয় তখন ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে বিপাক হয় না। ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এই ক্যালসিয়াম শরীর থেকে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়, ফলে হাঁটু, কোমর ও অন্যান্য অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হয়। ক্যালসিয়াম কিডনীর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করার সময় কিডনীতে জমতে থাকে এক সময় পাথরে পরিণত হয়।
কিডনী সমস্যার পরীক্ষা : ঘুম থেকে উঠার পর প্রথম প্রস্রাব একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে দিন। এক ঘণ্টা তা রং ও গন্ধ পরীক্ষা করুন, যদি তা লালচে অথবা ঘোলাটে এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয় তবে বুঝতে হবে কিডনীতে সমস্যা আছে।
প্রতিকার :
* ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, অধিক মসলাযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে।
* যারা শিল্প এলাকা, শহর বা অন্য কোনো ঘনবসতি এলাকায় বাস করেন তাদেরকে নিয়মিত ফুসফুসের ব্যায়াম (শান্ত পরিবেশে সোজা হয়ে বসুন। খুব ঘন ঘন শ্বাস-নিঃশ্বাস নিতে থাকুন। প্রতি মিনিটে ১০ বার থেকে শুরু করে প্রতি মিনিটে ৫০ বার পর্যন্ত করার চেষ্টা করুন।) প্রতি বারে দু মিনিট করে প্রতি দিন দুই বার এই অভ্যাস করুন। তা নিয়মিত অনুশীলন করলে দেহে পর্যাপ্ত অক্রিজেন সরবরাহ করে ও রক্ত শোধন করে।
চিকিৎসা :
* প্রতিদিন একবার কালো চা পান করুন (এক কাপ পানিতে এক চামচ চা পাতা দিন। এরপর ফুটিয়ে অর্ধেক কাপ করে নিন। তা ছেঁকে নিয়ে অর্ধেক কাপ ঠাণ্ডা পানি ফ্রিজের পানি মিশান। কিডনীর যে কোনো সমস্যার জন্য এই চা খুবই উপকারী। সুস্থ অবস্থায়ও এই চা মাঝে মাঝে পান করা উপকারী, তা কিডনীকে সতেজ রাখে।)
* প্রতিদিন ২/৩ কাপ সবুজ রস পান করুন (সমপরিমাণ পালংশাক, লাউশাক, বাঁধাকপি, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা ইত্যাদির সাথে লাউ, মুলা ধুন্দুল ইত্যাদি সবজি এক কথায় যে কোনো নির্বিষ শাক-সবজি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ১০ মিনিট হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এক গ্লাস পানি মিশিয়ে ব্লান্ডারে ব্লান্ড করে ছেঁকে নিন। যেসব শাকসবজি যত পুরু এবং যতো বেশি সূর্যের আলো পায় তাতে ততো বেশি প্রাণশক্তি থাকে। এই রস হলো সবুজ নিয়মিত পান করলে ইনশাল্লাহ আপনি হবেন চির সবুজ। দেহের প্রয়োজনীয় সব রকমের লবণ ও খনিজ পদার্থের মধ্যে আছে এবং এগুলো সহজেই হজম হয়। যা ক্ষারধর্মী হওয়ায় এসিডধর্মী টক্সিনকে নিষ্ক্রিয় করে।
* রূপা দ্বারা চার্জিত পানি প্রতিবার এক কাপ করে দিনে তিন চার বার পান করতে দিন (৩০ থেকে ৬০ গ্রাম রূপা আট গ্লাস পানিতে রেখে ফুটিয়ে চার গ্লাস করে নিন। তারপর ছেঁকে নিয়ে সম্ভাব হলে ফ্লাক্সে রেখে দিন। সারা দিন এই পানি কুসুম কুসুম গরম অবস্থায় পান করতে দিন। যা আমাদের জীবনীশক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় করে ফলে শরীরে টক্সিন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।