সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে আকুপ্রেশার চিকিৎসা
অনলাইন ডেস্ক

থ্যালাসেমিয়া একটি জটিল রোগ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। প্রাথমিকভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা দেয়। পিতা-মাতার যে কোনো একজন অথবা উভয়ই যদি থ্যালাসেমিয়ায় ভোগেন তবে তাদের থেকে আগত শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়।

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত তিন প্রকার

১. বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর (Beta Thelassaemia Major)

২. থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া (Beta thelassaemia Intermedia)

৩. বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর/ট্রেইট বা বাহক (Beta Thelassaemia Minor/Trait or Carrier)

বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর : এদের পিতা-মাতা উভয়ই বিটা থ্যালাসেমিয়া বাহক এবং উভয়ের কাছ থেকেই বিটা থ্যালাসেমিয়া জিন প্রাপ্ত হয় বলে এদেরকে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর বলা হয়। ছোটবেলা থেকেই এরা ভীষণ রক্তস্বল্পতায় ভোগে। জন্মগ্রহণের আঠার মাসের মাথায় এই সমস্যা দেখা দেয়। শিশু আস্তে আস্তে ফ্যাকাশে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। খেতে পারে না, খাওয়ার পরে বমি করে, ঘুমাতেও পারে না। এদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৩-৫ গ্রাম/ডেসিলিটারে নেমে আসে। জন্ডিস দেখা দিতে পারে, লিভার ও প্লিহা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ফলে পেটও বড় হতে থাকে। প্রতি মাসে মাসে এদের রক্ত দিতে হয়। এদের চিকিৎসা ব্লাড ক্যান্সারের অনুরূপ।

বিটা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া : এদের অবস্থান থ্যালাসেমিয়া মেজর ও মাইনরের মাঝামাঝি। অর্থাৎ এদের সমস্যা থ্যালাসেমিয়া মেজরের মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করে না। এদের রক্তস্বল্পতা হয় কিন্তু তার জন্যে ঘন ঘন রক্ত দিতে হয় না। এদের চিকিৎসা বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনরের মতো।

বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর/ট্রেইট বা বাহক : পিতা-মাতার যে কোনো একজন বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এরা সুস্থ বহনকারী, এদের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। কাজ-কর্মে কোনো অসুবিধা হয় না এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো সমস্যা হয় না।

থ্যালাসেমিয়ার মূল কারণ

* যদি পিতা-মাতার যে কোনো একজন অথবা উভয়ই থ্যালাসেমিয়া মাইনরে আক্রান্ত থাকে।

* যদি পিতা-মাতার যে কোনো একজন যটিল যৌনরোগে আক্রান্ত থাকে।

* যদি পিতা-মাতার রক্তের গ্রুপ সামঞ্জস্য না থাকে।

* কোনো বংশের ছেলে-মেয়েরা যদি নিজ বংশের মধ্যেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে থাকে যেমন (এক সময় ইংল্যান্ডে রাজপরিবারে ছিলো)।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর সমস্যা

এই রোগীদের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে

* এদের হজমপ্রণালীর অঙ্গগুলো যেমন পাকস্থলি, লিভার, পিত্তথলি ইত্যাদি খুব ধীরগতিসম্পন্ন। ফলে হজমশক্তি খুব দুর্বল হয় এবং পেটে প্রচুর গ্যাস জন্মায়। এদের প্রায়ই উদারাময় (পাতলা পায়খানা অথবা কোষ্টকাঠিন্য) হতে দেখা যায়।

* এদের রক্ত উৎপাদনকারী অপরিহার্য অঙ্গ প্লিহা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকে। ফলে নতুন রক্ত (বিশেষ করে হিমোগ্লোবিন) উৎপাদন ব্যাহত হয়।

* এদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর মধ্যে : ক) থাইরয়েড/প্যারাথাইরয়েড ও যৌনগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। ফলে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস (বিপাক হয় না) দেহ থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। সেই কারণে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহ করতে পরে না। এরা কোনো পরিশ্রমের কাজ করতে পারে না। সামান্যতেই এদের জয়েন্টগুলো ব্যথা করে।

খ) এড্রিনাল ও অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। ফলে প্রায়ই এদের মাথা ব্যথা (মাইগ্রেনের সমস্যা) থাকে এবং এদের ডায়েবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

এই সব কারণে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং এদেরকে বয়সের তুলনায় ছোট দেখায়।

যদি কোনো শিশু বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি না হয় এবং এদের চোখের নিচের পাপড়ির ভেতরের দিকে সাদা (লাল না থাকে) থাকে তবে এদের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা উচিত।

পূবেই উল্লেখ করা হয়েছে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নাই। কিন্তু আকুপ্রেশার এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত করা যায় তবে কয়েক মাসের মধ্যে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

* প্রতিদিন চার্জিত পানি পান করতে দিন।

* প্রতি রাত্রে এক কাপ সবুজ রস পান করতে দিন।

* প্রতি রাত্রে এক কাপ তাজা ফলের রস পান করতে দিন।

* সবুজ সালাতের সাথে বাদাম ও গুড় মিশিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে খেতে দিন।

* অধিক মসলাযুক্ত ও ভাজা-পোড়া খাবার এবং এর সাথে লবণ, দুধ, ফ্লেভারযুক্ত (চকলেট, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি) জাতীয় খাদ্য খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। যদি লবণ খেতেই চায় খনিজ লবণ (বিট লবণ) সামান্য পরিমাণ দিতে পারেন।

* ২১টি করে নিম পাতা, তুলসি পাতা ও বেল পাতা নিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এর পর আধা কাপ পানিসহ ব্লান্ড করে ছেঁকে নিন। এই রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করতে দিন।

যদি এই পাতাগুলো পাওয়া সম্ভব না হয় তবে হোমিও ঔষধের দোকান থেকে এই পাতাগুলো মাদার টিংচার (Aeglefolia, Azu-Md and Ocimum-Sant) আধা আউন্স করে কিনে নিন। এই মাদার টিংচারগুলো একত্রে মিক্সার করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধা কাপ পানিতে ৫ ফোঁটা মিশিয়ে পান করতে দিন। এর শক্তিশালী রক্ত পরিষ্কারক টনিক। ব্লাড ক্যান্সারের জন্যে এটা খুবই উপকারী।

* চিকিৎসা শুরুর ১৫ দিন পর থেকে প্রতিদিন প্রচণ্ড ক্ষুধার সময় ২ কাপ দধির সাথে তাল মিসরি মিশিয়ে খেতে দিন।

* পাকস্থলি, হাঁটু, পিঠ ও প্লিহায় দিনে দুবার নীল আলোর থ্যারাপী দিন। এটা এই সকল অঙ্গগুলোকে পুনরায় সজিব করে।

* হোমিও বায়োকেমিক Jla Five Phos 12x3টি করে বড়ি দিনে তিনবার ৪৫ দিন সেবন করতে দিন। এটা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করে। ১৫ দিন ঔষধ বন্ধ রেখে প্রয়োজন হলে আবার দিন।

* হজমশক্তি বাড়ানোর জন্যে দিনে দুবার হ্যান্ড রোলার ও ফুট রোলার রোলিং করতে দিন।

* হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্যে কালো কিসমিস রাত্রে আধা কাপ পানিতে ভিজিয়ে নিচের তালিকা অনুসরে খেতে দিন এবং পানিও পান করান।

১ম দিন ১+১+১, ২য় দিন ২+২+২, ৩য় দিন ৩+৩+৩, ৪র্থ দিন ৪+৪+৪, ৫ম দিন ৪+৪+৪, ৬ষ্ঠ দিন ৪+৪+৪, ৭ম দিন ৩+৩+৩, ৮ম দিন ২+২+২, ৯ম দিন ১+১+১।

হিমগ্লোবিন লেভেল পরীক্ষা করে দেখুন প্রয়োজন হলে একই নিয়মে এটি সেবন করতে থাকুন যতোক্ষণ পর্যন্ত হিমগ্লোবিনের লেভেল সন্তোষজনক অবস্থায় না আসে। এই চিকিৎসা সকল প্রকার ক্যান্সার, টি.বি., প্যারালাইসিস, আর্থ্রাইটিস, ব্রেইনের সমস্যা, রক্তশূন্যতা ও যে সকল শিশুদের হিমগ্লোবিন ঘাটতি আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। মাতৃ-দুগ্ধ পানকারী শিশুদের ক্ষেত্রে মাকে এই চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।

আকুপ্রেশার চিকিৎসা : ৮, ১১, ১৩ (শুধু মেয়েদের), ১৪ (শুধু ছেলেদের), ২২, ২৩, ২৫, ২৭, ২৮ ও ৩৭নং বিন্দুতে দিনে দুবার থ্যারাপী দিতে হবে। (চলবে)

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়