বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

শিশুদের প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার শেখানো প্রয়োজন

-------সোহেল মামুন-------
শিশুদের প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার শেখানো প্রয়োজন

শিশুদের বিজ্ঞানমনস্কতা ও তাদের তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কিছু বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। জাতির পিতা চেয়েছিলেন একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি উপহার দিতে। তার জন্যে তিনি একটা শিক্ষা কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তাই বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞানমনস্ক জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার সুযোগ্য কন্যা বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারাকে ধারণ করে ইতোমধ্যেই ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন লক্ষ্য হলো রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া।

এটা সবাই স্বীকার করেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে মানুষ। এখন বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছেন। তবে একটি পরিবারে বড়োদের মতো শিশুরাও বাস করে। হাতের কাছে পাওয়া ডিভাইসের ব্যবহার নিয়ে তাদের কৌতূহলেরও শেষ নেই। এই কৌতূহল থাকা খুব স্বাভবিক। করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস করার কারণে শিশুরা আরো বেশি প্রযুক্তিমুখী হয়েছে। এখন মাধ্যমিক তো বটেই, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবে অনেক শিশুই জানে না, অনলাইনে কোন্ সাইট নিরাপদ, কোন্টি নয়। অনলাইনের ঝুঁকিপূর্ণ দিক সম্পর্কেও তাদের ভালো ধারণা নেই। ফলে স্বাভাাবিকভাবেই অভিভাবকরা শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত হন। একটি বিতর্কের জায়গা তৈরি হয়েছে যে, শিশুরা কি প্রযুক্তিমুখী হবে? তাদের কি সাইবার জগতে জায়গা হবে?

মূলত এসব প্রশ্ন সামনে এসেছে শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত বলে। তাই অনেক অভিভাবকই শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা দেন। কিন্তু আমার মতামত হলো, শিশুদের প্রযুক্তির ব্যবহারে নিরুৎসাহিত না করে নিরাপদভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। প্রযুক্তিবিদরা এ ব্যাপারে একমত হবেন বলে মনে করি।

এর পেছনে যুক্তি হলো, শিশুদের পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা দেওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এই জন্যে আইসিটি বিভাগ শিশুদের উপযোগী করে অনেক কনটেন্ট তৈরি করেছে। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে প্রয়াস সরকারের রয়েছে, তাতে এটি খুব সুস্পষ্ট যে শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটবে।

এজন্যে প্রযুক্তি বিমুখী না করে সাইবার দুনিয়া শিশুদের জন্যে নিরাপদ রাখার জন্য সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা খুবই জরুরি। একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিশু সুরক্ষার পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রথমত, অনলাইন ব্যবহারে শিশুদের সচেতন করতে হবে। অনেক শিশুই জানে না, অনলাইনে কোন্ সাইট নিরাপদ, কোন্টি নয়। এ জন্যে শিশুদের জানাতে হবে, অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে অপরিচিত ব্যক্তি বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ পাঠালে তা গ্রহণ না করাই ভালো। অপরিচিতদের কাছে তথ্য শেয়ার না করাই শ্রেয়। শিশুদের বুঝাতে হবে, নিজের একটু অসচেতনতার কারণে অনলাইনে বিপদ হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শিশুদেরকে অনলাইন নিরাপত্তার কৌশল ভালোভাবে শিখাতে হবে। কারণ, অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইটে বা অ্যাপস ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া বেশিরভাগ সাইবার অপরাধী ভুয়া পরিচয়ে অন্যের তথ্য চুরি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে। তথ্য চুরির জন্যে শিশুদের প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণাও করে তারা। শিশুদের মনে রাখতে হবে, অনলাইনে অপরিচিত কারো প্রলোভনে পড়ে নিজেদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া নিজের জন্মতারিখ, ঠিকানা, আর্থিক অবস্থা, এমনকি পরিবারের তথ্যও দেওয়া উচিত নয়।

তৃতীয়ত, শিশুদের প্রলোভনে পড়া যাবে না। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করাই ভালো। অনেক সময় লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভন পাঠানো হয় ইনবক্সে বা ই-মেইল। এসব বার্তা পড়া যাবে না।

চতুর্থত, সামাজিক যোগাযোগের সাইটে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। কেবল পরিচিতদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কখনোই অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে আসা বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা যাবে না। অপরিচিত কোনো ব্যক্তি অনলাইনে আমন্ত্রণ জানালে বা অশোভন কোনো কাজ করলে অবশ্যই অভিভাবকদের জানাতে হবে।

শেষতক এটি বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, পাসওয়ার্ড ব্যবহারে খুব সতর্ক হতে হবে। ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগের সাইটে অ্যাকাউন্টের জন্যে অবশ্যই আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। এটি সবাই সতর্ক করেন যে, সাধারণ শব্দ, বাক্য বা ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ফোন নম্বর বা পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না। বড়ো ও ছোট অক্ষরের সমন্বয়ে কমপক্ষে ১৪ সংখ্যার পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এতে পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা বাড়বে।

সোহেল মামুন : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়