শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের নিয়ে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হোক
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥

একজন খেলোয়াড় হতে হলে তাকে যেমন নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে, তেমনি সেই খেলোয়াড়ের খেলার ভালো-খারাপ দিকগুলো উপলব্ধির জন্যে তাকে নিয়মিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও বেশি বেশি ক্রিকেট লীগের ম্যাচগুলোতে অংশ নিতে হবে। তাহলেই একজন ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলারের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সহজ পথ তৈরি হবে। জেলা পর্যায় থেকে যদি ভালো মানের ক্রিকেটার তৈরি করতে হয়, তাহলে বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার আয়োজন করতে হবে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে নিয়মিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পাশাপাশি ক্রিকেট লীগ চালু করতে হবে। কথাগুলো বলেন চলতি মাসে অনুষ্ঠিত প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের দেশসেরা অলরাউন্ডার সালমান জাহান। তার বাবার নাম জাকির হোসেন স্বপন। বাবা তার নিজ এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। তার মায়ের নাম মিনার বেগম। তারা ১ ভাই ও ১ বোন। তার নিজ বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডস্থ মিজি বাড়ি। সালমান এ বছর তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের জিএম ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় তরপুরচন্ডী মালেক স্মৃতি একাডেমী থেকে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশেষে ভর্তি হন তার নিজ এলাকার গাজী স্কুল নামে পরিচিত জিএম ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে।

মাত্র ১৬ বছর বয়স। লিকলিকে শরীর। খুব বেশি লম্বাও নয়। এসব সালমান জাহান মিয়াজীর জন্যে কোনো বাধা নয়। স্কুলের গণ্ডি না পেরুনো এই কিশোরের আছে বুকভরা সাহস ও দৃঢ়তা। তার সেই দৃঢ়তার কারণেই জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার দল চাঁদপুর গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে। দলের অধিনায়ক হিসেবে জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় এবং বিভাগীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের ফাইনাল ম্যাচেও দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দায়িত্ব পাওয়া এই অধিনায়ক ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা শুধু ধরতে পারেনি। দল শিরোপা না জিতলেও টুর্নামেন্টের সেরা ও সর্বোচ্চ রানের চকচকে ট্রফি পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে। একজন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবি ও স্কুল পর্যায়ের কোচ সহ সকল খেলোয়াড়ের কাছেই তিনি এখন পরিচিত। সালমান যার বোলিং ফলো করেন এবং যার খেলাগুলো নিয়মিতভাবে দেখেন, তিনি হচ্ছেন আফগানিস্তানের বিশ্বসেরা বোলার রশিদ। আর ব্যাটিংয়ে তার আদর্শ হচ্ছে বাংলাদেশের এই মুহূর্তের হার্ডহিটার ব্যাটস্ম্যান লিটন দাস। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেটের ফাইনাল শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মতো হতে চান। সাকিবের সঙ্গে তার পার্থক্য শুধু তিনি ডানহাতি আর সাকিব বামহাতি। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সাকিবের মতোই টুর্নামেন্টে সেরা তো হয়েছেন তিনি।

প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস ছিলো সালমান জাহানের। উচ্ছ্বাসের কারণ ছিলো তার দলের খেলা দেখানো হবে দেশের একমাত্র খেলার চ্যানেল টি-স্পোর্টসে। যেই মাঠে তারা ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন, সেই মাঠেই অস্ট্রেলিয়া টেস্ট খেলে গেছে সেটা জানা ছিলো সালমানের। সেই মাঠেই খেলতে নেমেছিলেন একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে। ম্যাচ শেষে নিজের দল না জিতলেও টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ায় তার প্রতি সবার আকর্ষণ ছিলো দ্বিগুণ। ফাইনালে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেছেন। টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরী ছিলো তার। জেলা দলে সুযোগ না পেলেও সালমান বিশ্বাস রাখেন স্কুল ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ক্যাম্পে ডাক পাবেন। সেখান থেকে বড় পর্যায়ে এগুবেন। সালমান বলেন, এই যে বেশি রান ও উইকেট নিলাম, এটাতে হয়তো আমাকে ক্যাম্পে ডাকবে। সেখান থেকে চাইবো যেনো আমি সেরা ১৫ জনের দলে থাকতে পারি এবং সেখান থেকে আরো উপরে উঠতে । গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এভাবেই তার সহজ সরল কথাগুলো প্রকাশা করছেন।

সালমান জাহান জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে নিজের দলসহ সকলকে নিয়ে চাঁদপুর চলে আসেন। তাকে এখন প্রতিদিন দুপুরের পরই দেখা যায় যেখান থেকে তার ক্রিকেটের হাতে খড়ি সেই ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমী চাঁদপুরের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুশীলন করতে। সেখানে তার প্রধান কোচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোচ ও চাঁদপুর জেলা ক্রিকেটের কর্ণধার শামিম ফারুকী ও ক্রিকেট কোচ পলাশ কুমার সোমের কাছ থেকে ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় জেনে নিয়মিত অনুশীলন করছেন। গত ক'দিন ধরে এই একাডেমীরই ছাত্র ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মাহমুদুল হাসান জয়ের কাছ থেকে ব্যাটিং সহ ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় ধারণা নিয়ে মাঠে ঘাম জরাচ্ছেন। খেলাধুলার অনুশীলনের পাশাপাশি তার সাথে খেলার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা হয় ক্রীড়াকণ্ঠের এ প্রতিবেদকের সাথে। তার কথাগুলো পাঠকদের জন্যে নিচে তুলে ধরা হলো।

সালমান জাহান এ প্রতিবেদককে জানান, প্রাইমারি স্কুলে পড়াবস্থায় পাড়ার বন্ধুদের সাথে টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে পাস করার পর তার বাবা তাকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্যে ভর্তি করিয়ে দেন ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীতে। এরপর এই একাডেমীতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে তিনি চাঁদপুর জেলার অনূর্ধ্ব ১৪ ও ১৬ দলের হয়ে বেশ ক'টি ম্যাচেও অংশ নিয়েছেন। জেলার বয়সভিত্তিক দল অনূর্ধ্ব ১৪ দলের পাশাপশি অনূর্ধ্ব ১৬ দলের অধিনায়ক হিসেবে জেলায় এবং জেলার বাইরে বিভাগীয় পর্যায়েও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ ও ২০২২ সালে জেলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে নোয়াখালীতে কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লার সাথে তার নেতৃত্বে জয়লাভ করে দলটি। চলতি বছরও জেলা ক্রিকেট দলের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে নেতৃত্ব দেন। ২০২১ থেকে শুরু করে গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় দলের সাথে ক্রিকেট খেলছেন স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে।

সালমান জাহানের নেতৃত্বে চলতি বছর অনুষ্ঠিত প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে গণি স্কুল জেলা পর্যায়ে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়, আল আমিন একাডেমী, বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাগুলো নোয়াখালী ও চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াখালীতে বিভাগীয় পর্যায়ে কক্সবাজার ও কুমিল্লাকে হারিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। কোয়ার্টার ফাইনালে জয়লাভ করে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে খাগড়াছড়িকে হারিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ফাইনালে উঠে। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বিভাগীয় পর্যায়ের ফাইনালে চট্টগ্রাম বন্দর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে হেরে যায়, তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়ে খেলার সুযোগ পায় জাতীয় পর্যায়ের ম্যাচে। জাতীয় পর্যায়ে হবিগঞ্জ রিচি উচ্চ বিদ্যালয়, পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও ঢাকা আগানগর উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে ফাইনালে উঠে। ফাইনালে দিনাজপুর একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে হেরে যায় তার দলটি।

সালমান জাহান এবারের প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১টি সেঞ্চুরীসহ ব্যাট হাতে ব্যক্তিগত ৩৬১ রান ও বল হাতে ২১ টি উইকেট নেন। তিনি বলেন, স্কুল ক্রিকেটের খেলাগুলোতে ক্রিকেট কোচ পলাশ কুমার সোমের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এছাড়া শুরু থেকে তার হেড কোচ শামিম ফারুকী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন খেলাধুলার ব্যাপারে নিয়মিতভাবে তার খোঁজখবর সহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার দলের ক্রিকেটারগণও তাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। খেলাধুলার ব্যাপারে তার বাবা-মা সহ পুরো পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।

সালমান জাহানের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, আমি চাই দেশের জার্সিতে বড় ক্রিকেটার হতে, বিভিন্ন দেশে যেতে। আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, ভবিষ্যতে আমি ভালো কিছু করতে পারবো। এ জন্যে আমার সঠিক গাইড লাইন দরকার। যেমন অলরাউন্ডারের দিক দিয়ে আমি দেশসেরা সাকিব আল হাসানকে পছন্দ করি। তিনি বামহাতি দেশসেরা অলরাউন্ডার। আর ডানহাতি হিসেবে আমি চাই দেশসেরা অলরাউন্ডার হতে। তিনি দেশের একজন ভালো লেগস্পিনার হতে চান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেগ স্পিনার হয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। তবুও হাল ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, বোলিংয়ে আমি স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করি। এখনই যদি আমি অনেক কিছু চেষ্টা করি, তাহলে আমার বোলিংটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমি স্পটে ৬টা বল করলে একটা তো ব্যাটস্ম্যান ভুল করবেই। আমি ধীরে এগুতে চাই। এখন অনেক ভ্যারিয়েশন শিখলে পরে দেখা যাবে নিজেই চাপে পড়ে যাবো।

সালমান জানান, আমরা যেদিন ফাইনাল খেলি, সেদিন খেলা দেখতে ফতুল্লায় ছুটে যান জেলা ক্রিকেট দলের কোচ শামিম ফারুকী। আমি মনে করি, শামিম স্যার ও পলাশ স্যারের সহযোগিতায় ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর সাবেক ছাত্র বর্তমানে দেশের ক্রিকেটে জাতীয় পর্যায়ে খেলা মাহমুদুল হাসান জয়, শামিম পাটওয়ারী, মেহেদী হাসান রানার মতো এগিয়ে যেতে চাই। তিনি আরো বলেন, আমি চাই আমার থেকে যারা অনেক ছোট ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের জন্যে যেনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রতি বছরের ক্রিকেট মৌসুমে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু করা হয়। এ জেলাতে শুধুমাত্র বড়দের নিয়ে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করলেই তো হবে না, বড়ভাইরা (ক্রিকেটারগণ) তো বিভিন্ন স্থানে কিংবা বিভিন্ন মাঠে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু যারা এখন নিয়মিত প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করে যাচ্ছেন, তাদের জন্যে যেনো নিয়মিত ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। তাহলে এ জেলা থেকে অনেক ক্রিকেটার সৃষ্টি হবে। আর চাঁদপুরের ক্রিকেটারদের জন্যে মানসিক সহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার জন্যে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীতো পাশে রয়েছে। আমি ভালো ক্রিকেটার হতে চাই। আমি সকলের দোয়া চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়