প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
খেলা দেখে অনেকেই বলেছেন বাংলাদেশের জন্টি রোডস। আরও অনেকের প্রত্যাশা, আগামীতে শুধু টি-২০ নয়, ওয়ানডেসহ সবক’টি ফরমেটেই শামিম পাটোয়ারীকে দেখতে চায় তারা। জাতীয় ক্রিকেট দলে নতুন মুখ চাঁদপুরের শামিম পাটোয়ারী। ইতিমধ্যে শামিম জিম্বাবুয়ের সাথে অভিষেক হওয়ার পর দুটি ম্যাচও খেলেছেন । আর দুটি ম্যাচে ফিল্ডিংসহ ব্যাটিংয়ে বিশ^বাসীকে চমক দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ী ম্যাচে তার ব্যাটিং নিপুণতার কারণে দল যেমন জয়ী হয়েছে তেমনি ব্যাটিং হাতেও অপরাজিত ছিলেন শামিম পাটোয়ারী। তার ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের কারণে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে ক্রিকেট অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন খুব সহজেই।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার শামিম পাটোয়ারীকে নিয়ে তার জীবনের প্রথম কোচ সৈয়দ শামিম ফারুকী, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক ও সাবেক ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং জিম্বাবুয়ের টি-২০ দলের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা যা বলেছেন এবং অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে বলা কথাগুলো তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ- অস্ট্রেলিয়া টি-২০ সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলার বিষয় নিয়ে শামিমের প্রথম কোচ ও ইলিশ নগরী চাঁদপুর ক্রিকেটের কর্ণধার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মনোনীত জেলার ক্রিকেট কোচ সৈয়দ শামিম ফারুকীর সাথে চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়া প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, শামিমের কাছে অবশ্যই ভালো কিছু প্রত্যাশা করি। কারণ এখানেই হবে তার অগ্নিপরীক্ষা। সেখানে সে ভালো করলেই তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ইনশাল্লাহ সে ভালো করবেই।
তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় বলতে থাকেন, ২০১০ সালের শেষ দিকে একাডেমীর পুরানো এক ছাত্রের মাধ্যমে শামিম আমাদের একাডেমীতে আসে। ও তখন অনেক ছোট ছিলো । আমাদের চাঁদপুরের ক্লেমন একাডেমীর ‘আঁতুড় ঘরে’ অনুশীলনের জন্যে তাকে পাঠানো হয়। অর্থাৎ এই একাডেমীতে ছোট বয়সে যারাই আসে তাদেরকে আঁতুড় ঘর থেকে পাস করে আসতে হয়। কিন্তু এই আঁতুড় ঘরেও বেশিদিন কাটাতে হয়নি শামিম পাটোয়ারীকে। টেনিস দিয়ে শুরু হওয়া একাডেমীর মাধ্যমেই তার যাত্রা হয়েছিলো এবং ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর দেয়া ব্যাট দিয়েই ভারতের বয়সভিত্তিক দলের সাথে ডাবল সেঞ্চুরী করেছিলেন শামিম পাটোয়ারী।
ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর সবুজের মাধ্যমে সে প্রথমে আমার কাছে আসে। বর্তমানে সে তার ঢাকার ভাড়া করা বাসায় থাকে। ছোটকাল থেকেই ওকে দেখেছি ও খুব সাহসী। ওর খেলা দেখার জন্যে ওই সময়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছিলো ক্লেমন স্পোর্টস্ ডেভেলমেন্টের সাথে জড়িত চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলার সাবেক ক্রিকেটার শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেলকে । সোহেল ওর খেলা দেখে প্রশংসা করে বলেছেন যে, আমি কোথা থেকে তাকে খুঁজে এনেছি। তখন আমি বলেছিলাম, তাকে ধানুয়া থেকে আনা হয়েছে। শামিম যেদিন এখানে ভর্তি হতে আসে, সেদিন আমি ছিলাম না। ভর্তি হওয়ার পরই আমি ওকে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব ১৪ দলের সাথে নিয়ে আসি । তখন শামিমকে মেডিকেল করানো হয়নি অনূর্ধ্ব ১৪ দলে খেলার জন্য। আমি ওকে প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়েছি ছোট থাকার কারণে। ওদের সাথের সবাই খেলতে যাচ্ছে, ওর মন খারাপ হবে, এজেন্য আমি ওকে দলের সাথে পাঠিয়েছিলাম। চাঁদপুরে হান্নান সরকারের অধীনে ক্লেমনের ক্যাম্প চলার সময় ওর হাঁটুতে দেখলাম, চারদিকে নীল মুখটা লাল হয়ে আছে। ও হাঁটতে পারছে না। আমি সাথে সাথে একাডেমীর সাবেক খেলোয়াড় সোহাগকে দিয়ে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। পরের দিন হাসপাতালের একজন ডাক্তার বলেন যে, আমি যদি শামিম পাটোয়ারীকে ২/১ দিন পরে পাঠাতাম, তাহলে শামিম পায়ের জন্য আর ঠিকমতো খেলতে পারতো না। যাক আমি মনে করি, ওইদিনের চিকিৎসাটি তার জন্যে অনেক কাজে লেগেছে। তখন হান্নান সরকার (সাবেক বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান) শামিমদের ক্যাম্পিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ক্রিকেট কোচ জয়নাল ওকে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সাথে কুমিল্লায় খেলতে নিয়ে যায়। ওই সময় কুমিল্লার সেক্রেটারী বাবু ভাই আমাকে বলেন, এত ছোট ছেলেকে কেন পাঠিয়েছি? এই টিমে অনেকেই ছোট ছিলো। তার সাথে ছিলো বিচ্ছু সাকিব (আল রাহাব সাকিব), মোরসালিনসহ অনেকেই। যখন শামিমের ব্যাটিং দেখলেন, তখন অবাক হয়ে যান বাবু ভাই। পরের বছর আমরা ওকে নিয়ে খেলতে যাই ফেনীতে। শামিম ফিফটি করে প্রথমে সিঙ্গেল ও ডাবল রানের মাধ্যমে। ফিফটি করার পর খুব দ্রুত আরো ৪০ রান করে। ফেনীর মাঠ ছোট, তখন যারা খেলা চালায় তাদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন রবিন এসে বলেন, শামিম যে ৫/৬টি বল উড়িয়ে মেরেছে, এখন তো আর বল নেই। ওই সময়ে সে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। আমি অবশ্য ওই টিমটি নিয়ে গিয়েছিলাম। সবচেয়ে মজার বিষয় হয়েছিলো যে, কমবাইন্ড স্কুল টিম হবে। সেখানে চট্টগ্রাম ও সিলেট এই দুটি জোন একত্রিত হয়ে খেলাটি হয়েছিলো। চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর ইমরুল ও নোভেল ভাই দেখেছে ওকে। ওই সময় তারা শামিমকে পেড পরিয়ে সিলেটের ৬ ফুট উচ্চতার একজন পেস বোলারকে দিয়ে বল করিয়েছিলেন তার বিপক্ষে। শামিম বাউন্সের প্রথম বলটিকে বাউন্ডারীর বাইরে পাঠিয়ে দেয়, যেটি চলে যায় মহিলা কমপ্লেক্সের বাইরে। এটাই ছিলো তার জীবনের প্রথম উল্লেযোগ্য ছক্কা। বিভাগীয় পর্যায়ে সে ভালো করার কারণে বিভাগীয় কোচদের নজরে পড়ে। এর পর ১৪ ও ১৬ খেললো। চতুর্থ বছর অনূর্ধ্ব-১৬ খেলতে গিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সে প্রথমে দিনাজপুরে ভর্তি হয়। এরপর বিকেএসপি থেকেই সে বয়সভিত্তিত দলে খেলার সুযোগ পায়। একদিন সেই বিকেএসপির কোচ মন্টু দত্ত আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আজকে ম্যাচ হেরে যেতে বসেছিলাম, আপনার শামিম পাটোয়ারী দৃঢ়তার সাথে ব্যাটিং করে আমাদেরকে বাঁচিয়েছে।
তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, শামিম তখন খুব ছোট, খুব দুষ্ট ছিল। তার সাহসের কথা না বললেই নয়। এমন সাহসী ছেলে খুব কম দেখেছি। ছোটবেলায় তাকে এমনই দেখেছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৪ দলের ক্যাম্পে শামিমের সঙ্গে নাকি কেউই একা কক্ষে থাকতে চাইত না। দুষ্টামির কারণে দলের সবাই দূরেই থাকতে চাইত। বাধ্য হয়ে শামিমকে থাকতে হতো কোচের কক্ষে। মাঠের বাইরের চাঞ্চল্যপূর্ণ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ের সময় রূপান্তরিত হতো সাহসে। চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামের এবড়োথেবড়ো আউটফিল্ডে যখন কেউই ঝাঁপ দিয়ে বল ধরার সাহস পেতো না, সেখানে শামিম ঝাঁপিয়ে পড়তো নির্দ্বিধায়। আমরা কোচ যারা আছি, সবাই ভয় পেয়ে যেতাম তার ফিল্ডিং দেখে। মনে হতো, এই বুঝি বাজে কোনো চোটে পড়ল ছেলেটা।
শামিমের ক্রিকেট-পাগলামি শুরু হয় শৈশবে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে এলাকায় ক্রিকেট খেলে। ৮-৯ বছর বয়সে স্থানীয় টিভি টুর্নামেন্টে নাম লিখিয়ে ফেলেন নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য দিয়ে। ঠিকাদারি পেশায় ব্যস্ত বাবা হামিদ পাটোয়ারী ছেলের ক্রিকেট-প্রেমের কথা জানতেন। পড়ালেখা ঠিক রাখার শর্তে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন তিনি। পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট শামিমকে আর পায় কে। চাচা তাকে ভর্তি করিয়ে দেন চাঁদপুরে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে। প্রতিদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাসে চড়ে ধানুয়া থেকে আসতো চাঁদপুর সদরে ক্রিকেট দীক্ষার উদ্দেশ্যে।
একের পর এক চোখ কপালে তোলার মতো কীর্তি গড়ে চলছিলেন শামিম। চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি ছেড়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হন ২০১৫ সালে। সেই বছরই কলকাতা অনূর্ধ্ব-১৭ দলের বিপক্ষে বিসিবি অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে ২২৬ রান করেন মাত্র ২৮৬ বল খেলে। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এই খবর শুনে তো অবাক। তখনই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিকলিকে গড়নের কিশোর শামিমের ব্যাট উঁচিয়ে ধরা ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখেছিলেন, ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই ভালো করবে ছেলেটা। অভিনন্দন! আর ওই রান করা ব্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন তার প্রথম কোচ শামিম ফারুকীই।
মুশফিকের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় পাঁচ বছর পর। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেই দলের সদস্য ছিলেন শামিম। বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু না করলেও দলের সবাই জানতেন শামিম নিজের দিনে কী করতে পারেন। কিন্তু শামিম নিজেকে সত্যিকার অর্থে চিনেছেন বিসিবি হাই পারফরম্যান্স বিভাগে এসে। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে শামিম প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ১০ ইনিংসে ৩০.১৬ গড়ে ১৮১ রান করেন। এ রানও এসেছে ১৪৯.৫৮ স্ট্রাইক রেটে। অফ স্পিন করে নিয়েছেন ৭ উইকেট। দারুণ ফর্মের পর দলে ডাক পাওয়া শামিম বলেছিলেন, নির্বাচকরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ দলে ভালো পারফরমেন্স করে তার প্রতিদান দেবো।
ছোটবেলায় শামিম যেমন দুষ্ট ও সাহসী ছিলেন, এখনো ঠিক তা-ই আছেন। মাঠের বাইরে হইচই, আড্ডায় মেতে থাকতে পছন্দ করেন। আর মাঠে চোখ কপালে তোলার মতো কীর্তি গড়েন কখনো অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে, কখনো অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে। হাসিঠাট্টার মাঝেই নাকি নিজের সেরা ক্রিকেটটা খেলেন শামিম।
জেমকন খুলনার তরুণ ক্রিকেটার শামিম হোসেন পাটোয়ারীকে ব্যাট উপহার দিয়েছেন দলটির অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা জিতে নেয় জেমকন খুলনা। ফাইনাল শেষে ড্রেসিংরুমে শামিমের হাতে উপহার হিসেবে নিজের একটি ব্যাট তুলে দেন মাহমুদউল্লাহ। এশিয়া কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ পাকিস্তানকে হারিয়ে চাঁদপুরের শামিম ম্যাচ সেরা হয়। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন শামিম।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শামিম সবার ছোট। ফরিদগঞ্জের ধানুয়া গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা। তারপর বিকেএসপিতে। এখন উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে, মানবিক বিভাগে পড়াশোনা চলছে।
শামিমের বাবা হামিদ এখন বৃদ্ধ হয়েছেন। আর তার ছেলে তারুণ্যের জয়গানে মাত করেছেন দুনিয়া। আনন্দে বিহ্বল তিনি বলেন, আমি খুবই খুশি। কারণ ছেলেকে স্কুলে পাঠাতাম, কিন্তু সে স্কুলে না গিয়ে শুধু খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। এদিক-সেদিক চলে যেত। এখন বুঝতে পারলাম, মাঠে গিয়ে সে ভালোই করেছে। আমাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শামিমরা যখন হারারেতে লড়ছে, তার মা তখন ধানুয়ার বাড়িতে টিভিতে চোখ রেখে করছিলেন প্রার্থনা, ‘আমি ছেলের খেলা দেখে শুধু দোয়া করেছি, সে এবং তার দল যেন জয়লাভ করতে পারে।’
শামিমের উঠে আসায় অবদান চাচা আনোয়ারের। শিল্পপতি এই নিকটজন তার চলার পথ করে দেন মসৃণ। ছোট কাকা প্রবাসী আবুল হোসেন জানান, খেলায় শামিমের তীব্র ঝোঁক দেখে তারাও আসেন এগিয়ে, ‘খেলার জন্য তাকে আমরা অনেক শাসন করেছি। কিন্তু লেখাপড়া রেখে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকত সে। তখন মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়ত। তাকে আমরা চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেই।’
ক্লেমন একাডেমিতে অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যন্ত খেলেছিলেন শামিম। বিকেএসপিতে ভর্তি হন ২০১৫ সালে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নেন তিনি। ২০১৮ যুব বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের ক্যাম্পে ডাক পেলেও সেইবার মূল দলে ঠাঁই হয়নি তার। পরবতীতে তার হাতে উঠেছে বিশ্বসেরার ট্রফিও।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু শামিমকে নিয়ে প্রশংসাসূচক কথা বলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেক হয়েছে যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য শামিম পাটোয়ারীর। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজের নামের প্রতি তার সুবিচার করেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়ে দুই ম্যাচেই ভালো ব্যাটিং করেছেন তিনি। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে তার ৩১ রানের ইনিংসটি সবার নজর কেড়েছে।
২ ম্যাচে ২১৪ স্ট্রাইক রেটে ৬০ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে ছক্কা হাঁকিয়েছেন দুটি এবং চার মেরেছেন ৯টি। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর এই সিরিজে এই সুযোগ পেয়েছেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। একাদশে সুযোগ পেয়ে তিনিও ভালো খেলেছেন।
তাইতো অস্ট্রেলিয়া সিরিজে এই দুই ক্রিকেটারে উপর ভরসা রাখতে চান জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। সেইসাথে জিম্বাবুয়ে সিরিজে এই দুই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সে খুশি হয়েছেন তিনি। চলমান সিরিজেও তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন নান্নু।
তিনি বলেন, শামিম পাটোয়ারী দুই ম্যাচ ভালো খেলেছে। হোম সয়েলে খেলার একটা প্রেসার থাকে। সেটা অনেক বেশি। “সেই চাপের মুখে শামিম কতটা ভালো খেলে সেটাও দেখার বিষয় আছে। আমি ব্যক্তির দিকে না তাকিয়ে দলের দিকে তাকাতে চাই। ওভারঅল আমি চাই দল হিসেবে খেলুক। সবাই কম বেশি অবদান রাখুক। টিমের সেরাটা যেন আমরা নির্দিষ্ট দিন দিতে পারি।”
জিম্বাবুয়ের টি-২০ দলের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা বলেন, জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। এর আগে পাঁচটি সিরিজের তিনটি ড্র হয়েছিল। দুটি জিতেছিল বাংলাদেশ।
২০১৩ সালের পর এবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজও।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়। ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ।
তবে সিরিজ হেরে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের প্রশংসা করতে বিন্দু মাত্র ভুলেননি জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। তিনি বলেন, নেমেছিলাম জয়ের আশায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এত বড় স্কোর দাঁড় করানোর পরেও বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা তা অনায়াসে ছাড়িয়ে গেছে। সৌম্য দুদিক থেকেই ভালো খেলেছে। তাছাড়া শেষ চমক দেখিয়েছেন তরুণ প্লেয়ার শামিম। এই ছেলেটা হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ফিনিশার।