প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং এলাকার বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে রয়েছেন জড়িত। স্কুল জীবন থেকে খেলাধুলা শুরু করলেও এখনো মাঠের সাথে রয়েছেন। নিজ ক্লাবের মাধ্যম জেলা সদরের প্রাইমারি স্কুলের খুদে ফুটবলারদের নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে নিয়মিত টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাধুলা ছাড়াও গণমাধ্যমকর্মী এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। মঞ্চ নাটকের সাথে জড়িত রয়েছেন স্কুল জীবন থেকে। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, নাট্যগোষ্ঠীসহ কমিউনিটি পুলিশিং মহল্লা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তিনি হলেন চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন, অভিনয় জগৎসহ গণমাধ্যমে কাজ করা কামরুল ইসলাম। তার বাবার নাম মরহুম শাহজাহান পাটওয়ারী ও মায়ের নাম মরহুমা নুরজাহান বেগম। তাদের স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা এলাকায়। বর্তমানে বসবাস করছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ চৌধুরী পাড়াতে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ২০০০ সালের ২৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর শহরের পালপাড়া এলাকার মরহুম রফিকুল ইসলামের মেয়ে সীমা ইসলামের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তাদের সংসারে রয়েছে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। বড় মেয়ে ফাহমিদা নাজনীন সায়বা ইসলাম পড়াশোনা করছেন চাঁদপুরের ড্যাফোডিল স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে। ছোট মেয়ে প্রিমা ইসলাম তুসি পড়াশোনা করছে লেডি প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে। একমাত্র ছেলে শাহপরান মোঃ ফারজান হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। এছাড়াও কামরুল ইসলাম টুকটাক ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন।
কামরুল ইসলাম হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৯৫ সালে সেই হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন। খেলতেন উইকেটরক্ষক ও ব্যাটস্ম্যান হিসেবে। চলতি বছর চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিসিবি কাউন্সিলর কাপ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে স্থানীয় দল স্লোগ সিক্সার্সর সাথে খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন। চৌধুরীপাড়া কমিউনিটি পুলিশিং মহল্লা কমিটির সেক্রেটারীর দায়িত্বে রয়েছেন। ক্রীড়াকণ্ঠের এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার খেলাধুলা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম। তার কথাগুলো ক্রীড়াকন্ঠের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :
ক্রীড়াকণ্ঠ : আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
কামরুল ইসলাম : ওয়ালাইকুমুচ্ছালাম। জ্বি আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় ভালো আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা শুরু করেন কবে থেকে?
কামরুল ইসলাম : আমি গণি স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়ি। হাসান আলী মাঠে টেপ টেনিসের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। তখন আমার সাথে গাজী আলমগীর, খোকন গাজী, মুজাম্মেল, মনির, মোশারফ, সাফায়েত আহমেদ রুমি, বিদ্যুৎ, রতন, পলাশ সহ অনেকেই খেলাধুলা করতো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : টেপটেনিস ক্রিকেটে কোথায় কোথায় খেলেছেন?
কামরুল ইসলাম : আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি এবং কলেজে ভর্তি হই, তখন টেপটেনিস ক্রিকেটের টুর্নামেন্ট ও লীগ হতো বেশি। আমি চাঁদপুর সদরের বিভিন্ন স্কুলের মাঠ, খেলার মাঠ, জেলার সকল উপজেলা সহ কুমিল্লা, লাকসাম, রায়পুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর সহ অনেক জেলাতেই বিভিন্ন দলের হয়ে খেলাতে অংশ নিয়েছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামে কবে থেকে কোন্ দলের হয়ে খেলেন?
কামরুল ইসলাম : আমি দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের হয়ে খেলতে নামি। আমি দলের উইকেটরক্ষক ও ব্যাটস্ম্যান হিসেবে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে অংশ নেই। দলের মূল একাদশের হয়ে বেশিরভাগ সময়ই ওপেনিং ব্যাটস্ম্যান হিসেবে মাঠে নামতাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি যখন প্রথমে স্টেডিয়ামে খেলেন, ওই সময়ের স্থানীয় তারকা ক্রিকেটার কারা কারা খেলতেন?
কামরুল ইসলাম : আমি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে লাল বলে সাদা ড্রেসে খেলা শুরু করি। সে সময়ের ক্রিকেটার ছিলেন হারু ঘোষ, গোলাম মোস্তফা বাবু, বোরহান খান, লক্ষ্মী নন্দী, সাইফুল ইসলাম সহ অনেকেই। তারা নিয়মিত নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে মাঠে খেলতেন। পাইনিয়ার ক্লাবের মোক্তার, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নিটুল, তালতলার মহসিন, উদয়ন ক্লাবের মজু রাসেল, নবারুণ ক্লাবের কালু ভাই, ইয়ুথ ক্লাবের সফিউল আযম রাজন, প্রফেসর পাড়ার সলেমান, আবাহনীর ক্রীড়া চক্রের পিন্টু ভাই, সুমন ভাই ছাড়াও আরো ছিলো হেলাল গাজী, ভুট্টো, শান্ত চৌধুরীসহ আরো অনেকেই।
ক্রীড়া কণ্ঠ : আপনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ কতদিন খেলেন?
কামরুল ইসলাম : আমি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে নিয়মিত খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি কি ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগেও খেলেছেন?
কামরুল ইসলাম : আমি অঙ্গীকার ক্রীড়া চক্রের হয়ে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলি।
ক্রীড়া কণ্ঠ : আপনি তো খেলাঘর আসরের সাথেও জড়িত ছিলেন?
কামরুল ইসলাম : আমি ছোটকাল থেকেই খেলাঘর আসরের সাথে জড়িয়ে পড়ি। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় খেলাঘর আসর চাঁদপুর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে স্কাউটের গ্রুপ লিডার হিসেবে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যেকটি কুচকাওয়াজ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আমি এই সংগঠনের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবেও ছিলাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি তো বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সাথেও ছিলেন?
কামরুল ইসলাম : হ্যাঁ, আমি আমার এই প্রিয় সংগঠনের সাথে প্রতিষ্ঠাতালগ্ন থেকেই ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে আমার এই প্রিয় সংগঠনটির সহ-সভাপতি সহ আহ্বায়কেরও দায়িত্ব পালন করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি তো অনন্যা নাট্য গোষ্ঠী ও লিও ক্লাব চাঁদপুর রূপালির সাথে রয়েছেন?
কামরুল ইসলাম : আমি অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীতে ১৯৯৬ সালে আব্দুল্লাহ আল মামুন রচিত এবং অজয় ভৌমিক ও শহীদ পাটওয়ারীর নির্দেশিত নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করি। বর্তমানে আমি এ সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০০৮ সালে লিও ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালির সাথে জড়িত হই। ওই ক্লাবটিতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি তো একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা করেন?
কামরুল ইসলাম : আমি আমার প্রতিষ্ঠিত অঙ্গীকার ক্রীড়া চক্রের মাধ্যমে ২০০৫ সাল থেকে প্রাইমারি স্কুলের খেলাগুলো পরিচালনা করে আসছি। এরপরই তৎকালীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি এস এ সুলতান টিটু ২০০৮ সালে সারা বাংলাদেশে আন্তঃ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শুরু করেন। আমার পরিচালনায় আন্তঃপ্রাইমারি ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান রেখেছি। চলতি বছরের ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামের খেলাধুলা নিয়ে ?
কামরুল ইসলাম : আমি একজন খেলোয়াড় হিসেবে বলতে পারি, বর্তমানে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে যে টুর্নামেন্ট হচ্ছে, সেটি এই জেলাতে অনেক ভালো মানের এবং অনেক দল নিয়ে সুন্দর একটি টুর্নামেন্ট। আমাদের জেলার এই স্টেডিয়ামে যদি নিয়মিতভাবে ক্রিকেট, ফুটবল সহ অন্যান্য ইভেন্টের খেলাগুলো চালানো হয়, তাহলে বিভিন্ন ইভেন্টে অনেক খেলোয়াড়ের সৃষ্টি হবে। চাঁদপুরে বর্তমান সময়ে অনেক উদীয়মান ক্রিকেটার রয়েছে। তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্যে মাঠে সবসময়ই বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন চলমান রাখতে হবে।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ৩য়, ২য় ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ ধারাবাহিকভাবে চালাতে হবে। এতে স্বীকৃতি পাবে খেলোয়াড়রা এবং ভালো ভালো খেলোয়াড় খুঁজে পাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। চাঁদপুরে একসময় আন্তঃপ্রাইমারি স্কুল ফুটবল খেলা চলতো। যেটি শুরু করেছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক কামরুজ্জামান চৌধুরী। এখন আর এ ধরনের আয়োজন চোখে পড়ে না। ফুটবল ও ক্রিকেটের ক্ষেত্রে চাঁদপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রীড়াব্যক্তিগণ যদি আন্তঃপ্রাইমারি, আন্তঃকলেজ টুর্নামেন্টগুলো শুরু করেন তাহলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা থেকে খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। এদেরকে যদি ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তাহলে এদের মাঝখান থেকেই ফুটবলার রাফি, ক্রিকেটার শামিম, জয় ও মেহেদী হাসান রানার মতো অনেক খেলোয়াড়ই ভবিষ্যতে স্থানীয়, বিভাগীয় পর্যায় সহ জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুরের উদীয়মান খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
কামরুল ইসলাম : চাঁদপুরে বর্তমানে ফুটবলে ও ক্রিকেটে ২টি করে একাডেমী রয়েছে। এই একাডেমীগুলোতে প্রশিক্ষণে রয়েছে অনেক খেলেয়াড়। একাডেমীর খেলোয়াড় সহ অন্যান্য খেলোয়াড়ের উদ্দেশ্যে বলবো যে, খেলার মাঠে এসে অনুশীলনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে বেশি। খেলাধুলায় যে বেশি পরিশ্রম করবে এবং কোচসহ সকলের সাথে আচরণ ভালো করবে তারাই ভবিষ্যতে ভালো করবে। খেলোয়াড়দেরকে খেলার প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং মোবাইল গেমস থেকে দূর থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের জেলার খেলোয়াড়রা সফলতা খুঁজে পাবে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কামরুল ইসলাম : জ্বি, আপনার মাধ্যমে সকলের প্রতি রইল আমার সালাম ও শুভেচ্ছা।