রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

প্রেম আঁকি

সোহেল নওরোজ
প্রেম আঁকি

অনেক দিন বাদে কলমদানিটা টেবিলের বাঁ কোণে দেখে চমকে ওঠে অহনা। মাকে বহুবার বলার পরও এমন ভুল কী করে হয়! আজ নিশ্চয় কোনো অঘটন ঘটবে! কলমদানিটা ডান দিকে না রাখলে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে। শেষবার এমনটি দেখার পর তার আদরের বিড়াল নীলু উধাও হয়ে গিয়েছিল। চারতলা ফ্ল্যাটে দিনভর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েও বিড়ালটাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ টেবিলে বসে পড়ার সময় নীলুর পায়ের আশপাশে ঘুরঘুর না করলে একটা লাইনও মুখস্থ হয় না! কি দুশ্চিন্তায়ই না কেটেছিল তিনটি দিন! নীলুকে ফিরে পেয়ে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল। কী হয়েছিল কে জানে! এরপর নীলু অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। পড়ার সময় তার কাছেও আগের মতো আসত না। এখন দুজনের বিচ্ছেদ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সারা দিনে খাবার দেওয়ার সময় ছাড়া ওর সঙ্গে অহনার দেখা হয় না!

২.

অয়নের আজ গ্রাম থেকে ফেরার কথা। সেমিস্টার-পরবর্তী লম্বা ছুটি শেষ। কাল সকালেই দুজনের দেখা হবে। অয়নের সঙ্গে কতবারই তো দেখা হয়েছে, মোটা ফ্রেমের চশমাপরা ছেলেটার সঙ্গে কথাও হয়েছে ঢের; অথচ কালকের দিনটা বিশেষ কিছু। অহনা চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করে শেষ সাক্ষাতে কী কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। ‘ভালো থেকো, আবার দেখা হবে’—এর বেশি কিছু নিশ্চয় নয়। ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পর একরাতে অয়নের মুঠোফোন থেকে একটা বার্তা আসে অহনার কাছে। কবিতার চারটি লাইন। মেয়েদের পটানোর প্রচলিত অনেক পন্থা আছে। কবিতা লিখে পাঠানো যার একটি। অহনা জবাব দেয় না। রোজকার মতো মুঠোফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায়। ক্লাস না থাকায় বেশ বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে। ফোন চালু করতেই একের পর এক খুদে বার্তায় ভরে ওঠে ইনবক্স। সব অয়নের পাঠানো। এক বন্ধুকে পাঠাতে গিয়ে ওর মোবাইলে চলে আসায় দুঃখ প্রকাশ, অতঃপর ক্ষমাপ্রার্থনা করে। বার্তাগুলো দেখে অহনার ভালো লাগে। সাধারণ কথাগুলো ভাষার মাধুর্যে কেমন অসাধারণ হয়ে উঠেছে! অয়নকে ফোন করে কবিতার পরের লাইনগুলো শুনতে চায়। অয়ন উৎসাহ পায়। এভাবেই ভুল কবিতাগুলো ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে থাকে। ক্ষণ গোনা শুরু হয় আগামীকালের জন্য।

৩.

অহনা যা ভেবেছিল তা-ই! অয়ন ক্যাম্পাসে আসেনি। বন্ধুরা কেউ ওর খবর জানে না। মুঠোফোনও বন্ধ। নানা রকম নেতিবাচক চিন্তা মাথায় নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে অহনা। রাতে ভালো ঘুম হয় না। মুঠোফোন তুলে অয়নের নম্বরে ডায়াল করে। রিং হয়। প্রথম দুবার কেউ রিসিভ করে না। তৃতীয়বারে শামীম ফোন ধরে। শামীম অয়নের কাছের বন্ধু। গতকাল সে-ও ক্যাম্পাসে আসেনি। মুঠোফোনে কথা বাড়ায় না। সাক্ষাতে সব শুনবে- বলে রেখে দেয় অহনা।

শ্রাবণের শেষ। সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। ছাউনির নিচে শামীমকে দেখা যাচ্ছে। পাশেই মাথা নুইয়ে বসে আছে অয়ন। অহনা ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শামীমের মুখ থেকে শোনে পুরো ঘটনা। অনেক দিনের আশঙ্কাটাই সত্যি হয়েছে। অয়নকে নিয়ে কাল সারা দিন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছে। বিভিন্ন পরীক্ষার পর ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ও বর্ণান্ধ। সব রংকেই ধূসর দেখবে। অহনার লাল শাড়ি, নীল টিপ দেখে বলবে না, ‘বাহ্, বেশ মানিয়েছে তো!’ অয়নের হাতের ওপর আলতো করে হাত রাখে অহনা। আবেগকে প্রশ্রয় দিয়েই বলে, ‘ভালোবাসায় রং চোখে দেখা যায় না। অথচ এর চেয়ে রঙিন আর কী আছে? দেখো, বৃষ্টির কী আশ্চর্য সম্মোহন! সেটিও কিন্তু বর্ণ-গন্ধহীন! রংহীন বৃষ্টির কালিতেই চলো প্রেম আঁকি।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়