রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বিরহের যন্ত্রণা বুকে

মানিক দাস

অনলাইন ডেস্ক
বিরহের যন্ত্রণা বুকে

শীতের এক সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন আটটা বাজে। সেই সময়ের জীবন্ত দু মানব-মানবীর প্রেমের বাস্তব ঘটনার এক গল্প।

আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। তখন মোবাইলের বালাই ছিল না। কাগজের বুকে কলমের আঁচড় বসিয়ে ছন্দে ছন্দে প্রেমপত্র লিখে প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ভালবাসা আদান-প্রদান করতো।

২০০৩ সাল গ্রামের এক তরুণী শহরে আত্মীয়ের বাসায় থাকতো। নাম ছিল তার মহুয়া মজুমদার। মহুয়া বাসা থেকে বের হলে শিল্পকলার সামনে দিয়ে যাতায়াত করতো। আর বাঁকা চোখে চেয়ে চেয়ে কী যেন খুঁজতো। আবার কাকে দেখে যেন মুচকি হেসে চোখের ভাষায় ডাকার চেষ্টা করতো।

একদিন শুভ চায়ের ক্যান্টিনে সামনে বসা। তখন বিকেল প্রায় সাড়ে চারটা। ক্যান্টিনে বসে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল আর চা খাচ্ছিল। মহুয়া এলো শুভর দিকে তাকিয়ে হাসছিল। মহুয়ার সাথে থাকা বান্ধবী সীমাকে শুভকে দেখিয়ে কী যেন বলছিল। শুভ বুঝতে পারল না মহুয়া কী বলতে চাইছে। এমনিভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। শুধুই চোখের ভাষায় ভালোলাগার কথা চলবে দুজনের। শুব হঠাৎ একদিন মনে সাহস নিয়ে মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়ায় ভালোবাসার কথা বলতে। তখন শুভর বুক ধরফর করছিল। কীভাবে ওর সাথে কথা বলবে ওর নামতো শুভ জানেনা। এক পা পিছিয়ে যায়। মহুয়া বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসতে লাগলো, শুভ এবার বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে এলো। মহুয়াকে পেছন থেকে ডাকলো। এই যে শুনুন আপনার নামটা জানতে পারি কী? মহুয়া শুভর কথা শুনতে পেয়ে হাঁটার দ্রুততা কমিয়ে দেয়। মহুয়া বলে আমি আপনাকে চিনি, একটু পর আবার আসবো। কোথায় আসবেন জানতে চাই শুভ। জবাবে মহুয়া বলে এখানেই আসবো। তখন কথা হবে। এই বলে মহুয়া চলে যায় তার বাসায়। শুধু তখন ওর নাম জানে না। ঘণ্টাখানেক পর মহুয়া এলো। দূর থেকে দেখতে পেয়ে শুভ কাছে এগিয়ে যায়। মহুয়া বলে চলুন নির্জন স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলি। কেন? যদি কেউ দেখে ফেলে। হাঁটতে দুজনকে দাঁড়ায় এক ফুল বাগানে। এখানে কিছু সময় কথা বলে, দুজন দুজনার সাথে পরিচয় হয়। শুরু হলো মহুয়া আর শুভ নতুন জীবন, আর ভালবাসার পথচলা।

মহুয়া অজো পাড়াগ্রামে জন্ম নেয়া এক তরুণী। শৈশব যদিও তার গ্রামের কাদা মাটির গন্ধে কেটে থাকে আজ তরুণী বয়সে তার কাটছে শহরের দূষিত আবহাওয়া। মহুয়া তেমন কোন উচ্চশিক্ষিত নয়। মাধ্যমিক লেভেল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। কলেজের গণ্ডিতে যাওয়া হয়নি। গ্রামের প্রকৃতি ছেড়ে কয়েক বছর ধরে শহরে তার নিকটাত্মীয়ের বাসায় চলে আসে। শহরেই এখন তার বসবাস।

মহুয়া আর শুভর মধ্যে পরিচয় আর ভালোবাসা সূত্র থেকে কেটে যায় কিছুদিন। তারপর একদিন মহুয়া শুভর কাছে মিথ্যা কথা বলে, তোর মা ভীষণ অসুস্থ তাই গ্রামের বাড়ি যেতে হচ্ছে। বিকেলে মহুয়া গ্রামের বাড়ি চলে যায় পক্ষকালব্যাপী আর শুভর সাথে দেখা নেই। কিছুদিন পর মহুয়া বাড়ি থেকে আবার শহরে চলে আসে। নতুনভাবে আবার শুভর সাথে আবার যোগাযোগ শুরু করে। শুভ মনে মনে ভাবে মহুয়া পাঠক কোন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বাড়ি থেকে শহরে আসেনি তো? একদিন সকালে শুভকে খুঁজতে তার এক বন্ধুর দোকানে আসে। শুভকে এসে পেয়ে যায় । চোখের ভাষায় ডাকলো। শুভ দোকান থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। মহুয়া বলে বিকালে তুমি ফ্রি আছো তো। তখন শুভ বলি হ্যাঁ! কেন? বিকেলে তোমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও গিয়ে কথা বলব। জরুরি কথা। তখন শুভ বলে ঠিক আছে। মহুয়াকে বিদায় দিয়ে শুভ মনে মনে ভাবে ওর কাছ থেকে নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। বিকাল ঘনিয়ে এলো শুভ চলে যায় নদীর বালুময় তীর ভূমিতে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে আর গল্প করে সময় কাটায় মহুয়া আর শুভ। ওরা দুজন স্বপ্ন দেখতে থাকে সুখের নীড় গড়ার। মহুয়া বলে শুভ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি একটা কিছু করো। তুমি একটা দিন ঠিক করো, আমরা পালিয়ে গিয়ে সংসার জীবন শুরু করি। মহুয়া বলে আমার বড় মামার সাথে কথা বলে নেই। শুভ একথা শুনে ভাবে মহুয়া কোনো নতুন প্ল্যান করছে নাতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো ওরা যার যার মতো গৃহে ফিরে গেল। শুভ বাসায় গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মহুয়ার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। মহুয়ার মনে কী আছে শুভ বুঝে উঠতে পারেনি। রাতভর দু চোখে শুভ ঘুম আনতে পারল না। শুধুই প্রেয়সী মহুয়ার কথা ভেবে রাত কেটে যায়। দূর মসজিদ থেকে ফজরের ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসতে লাগল। শুভ বিছানা ছেরে উঠে বসল। জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকালো। তখনো চারদিকে অন্ধকার। ঝিঁঝি পোকাগুলো ডেকে চলছে। আর জোনাকি পোকাগুলো আলোজ্বেলা ঝোঁপঝারে ছুটে যাচ্ছে। শুভ আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। যখন ভোরের সূর্য আলো ছড়াচ্ছে শুভ তখন বিছানা থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ল। শুভ চলে যায় মহুয়ার সাথে প্রথম যেখানে কথা হয়েছিল সেই স্থানে। আজ যদি আবার সেখানে দেখা হয়। আজ মহুয়ার দেখা পেল না শুভ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। শুভর কাছে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হতে লাগলো। তবু মহুয়ার দেখা পেল না শুভ।

বিকেলের শুভ তার বন্ধুদের নিয়ে পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রাজন বলে কিরে দোস্ত তোর মনটা খারাপ দেখাচ্ছে কেন। ওর সাথে কিছু হয়েছে নাকি? রাজন জানতো শুভ আর মহুয়ার সম্পর্কের কথা। সুমন বললো, রাজন ওটা আবার কে রে? শুভতো কখনো আমাকে এ বিষয়ে বলেনি। আরে আগে কিছু একটা হোক তারপর তোরা জানবি। পার্কে বসে এভাবে দুষ্টমি করে বিকেলের সময়টা কেটে যায়। পার্ক ছেড়ে ওরা চলে আসে শহরের কোলাহলে। সন্ধ্যার সময় সে দাঁড়ায় চার রাস্তার মোড়ে এখানে আছে কালী মন্দির। বারটি ছিল শনিবার। তরুণীরা শনি পূজো দিয়ে মায়ের এ মন্দিরে আসে। মহুয়া উপোষ করে শিনি পূজো দিতে মায়ের মন্দিরে এলো। শুভ দূর থেকে দেখে। সুন্দর পরিপাটি সাজে সেজেছে মহুয়া। আজ সকালে দেখা না হওয়ায় শুভ ওর সাথে দেখা করে না। তবে শুভ ভাবে মহুয়া কী নিজের জন্য পূজা করছে নাকি অন্য কোনো কারণে। শুভ দূর থেকে দেখতে পায় মহুয়া তারই পরিচিত এক যুবকের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে। শুভর মনে আরো সন্দেহ জন্ম নেয়। এবার মহুয়ার চোখে চোখ পড়ে শুভর। মহুয়া এমন ভাব করে শুভকে দেখেনি। না দেখার ভণিতা করে মন্দিরের ভিতর চলে যায় মহুয়া। শুভ আর বুঝতে বাকি রইল না, এখন শনি পূজার কার্যক্রম চলবে তাইতো মহুয়া মন্দিরের ভেতরে চলে গেল। মাঝে দুজানার চলে মান-অভিমানের খেলা। এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস। শুভ আর মহুয়ার মাঝে কোন যোগাযোগ হয় না।

কোন একদিন শুভ শহরের ছেড়ে অনেক দূরে এক মন্দিরে যায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সেই মন্দিরে শুভ অবস্থান করে। দুপুরের পর শুভ ফিরে আসার মহুয়া দলে বলে মন্দিরে প্রবেশ করে। শুভকে দেখে সে থমকে যায়। বান্ধবীদের দেখি কি যেন বলছিল। সুমি নামের এক বান্ধবী এসে বলল দাদা আপনাকে মহুয়া রাধা মন্দিরে যেতে বলেছে। শুধু একটু বণিতা করে বলে কোন মহুয়া? কেন আপনি মনে হয় চিনেন না? একটু আগে যে মেয়েটি আপনার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসছিল সেই। সুমির কথামত শুভ চলে যায় মন্দিরে। সেথায় গিয়ে দেখে মহুয়া একা একা দাঁড়িয়ে আছে দূরে। ওর বান্ধবীরা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে প্রহরীর মতো পাহারা দিচ্ছিল। মহুয়া আর শুভ বেশ কিছু সময় ধরে গল্প করে। মহুয়া শুভকে বলল তোমাকে একটা কথা বলবো রাগ করবে নাতো? না নির্ভয়ে বলো। আমার বাবা-মা আমাকে অন্যের হাতে উঠে পড়ে লেগেছে? তুমি কিছু একটা করো। শুভ বলল, চলো মন্দিরের বিয়ে করে ফেলি। মহুয়া বাদ সাদে। না আমি এভাবে বিয়ে করতে পারবো না। রাধা মন্দির থেকে মহুয়া শুভ ও তার বান্ধবীরা বেরিয়ে আসে।চলে যায় এক মিষ্টান্নের দোকানে। আপ্যায়ন শেষে যে যার মত চলে। এই ছিল শুভ আর মহুয়ার শেষ দেখা।

মাস যায় বছর যায় ভাবেই মহুয়ার খোঁজ পায় না । শুভ জানেনা মহুয়া আজ কোথায়।

হঠাৎ বছর কয়েক পরের কথা। একদিন শুভ দেখতে পেল মহুয়ার মত হাঁটাচলা ফেরা করা এক নারী কোন তরুণের সাথে হেঁটে যাচ্ছে। শুভ অন্যপথ ধরে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভর দেখাটা মিথ্যা ছিল না সেদিন। শুভ যার জন্য এতো দিন পথ চেয়ে বসে ছিল সেই ভালোবাসার মানুষ কপালে লাল সিঁদুর হাতে লাল আর সাদা শাকের চুরি। এমন দৃশ্য দেখে শুভর মাথায় যেন বাজ পড়লো। শুভকে দেখে মহুয়া শাড়ির আঁচলে মুখ লুকাতে লাগলো। কাউকে কিছু না বলে শুভ সেখান থেকে বিষণ্ণ বদনে ফিরে আসে। মহুয়ার কাছ থেকে এমন আঘাত পেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিল না শুভ। সব সময় যেন ওর চোখের সামনে মহুয়ার ছবি ভেসে উঠতে লাগলো। প্রেয়সী মহুয়ার কথা ভেবে শুভ আজ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। শুভ জানে না কোথায় তার নীড়। যেখানে রাত সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রেমের শুরুতে শুভর বুকের বাম পাঁজরে লেখা ছিল মহুয়া, সেই মহুয়া লেখাকে ধরেই সব হারিয়ে বেঁচে আছে। তার মুখ থেকে একদিন শব্দ শোনা যায় তুই বড়ই বেইমান মহুয়া।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়