বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

ছড়ানো-ছিটানো সংসার
আকিব শিকদার

বাইরে বৃষ্টি। জানালায় মুখ রেখে

তাকিয়ে ছিলাম।

ট্রেন থামলো স্টেশনে। যাত্রীদের ঘিচঘিচ,

ব্যাগ-বস্তার টানাটানি, কুলি আর হকারের চিৎকার।

এরই ফাঁকে দেখি প্লাটফর্মে

তিনজন ভিক্ষুক; স্বামী-স্ত্রী-সন্তান।

লোকটার একটা পা

হাঁটু অব্দি কাটা, দাঁড়িয়েছে স্ক্রেচে ভর করে।

হাতে ভিক্ষার থালা। পাশে তার বউ, সন্তান কোলে

ধরে আছে থালাটিতে।

কোলের শিশুটা হাত উঁচিয়ে

বাবা-মায়ের উপর ছাতা মেলে রেখেছে।

ট্রুং ট্রাং শব্দে থালাতে কিছু পয়সা

ছুড়ে মারলাম। অমনি কী আনন্দ শিশুটার।

দম্পতির মুখেও তৃপ্তির হাসি। একটা ছাতার নিচে

একটা সংসার, কতো পরিপাটি।

সংসার আছে আমারও, ছড়ানো-ছিটানো সংসার।

সকাল আটটায় নাকে-মুখে দু মুঠো খেয়ে

কর্মস্থলে ছুটি। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বাধি গলার টাই।

মিম, মানে আমার বউ, তার

নয়টা-পাঁচটা অফিস।

ড্রেসিংটেবিলে ব্যস্ত হাতে চুল আঁচড়ানোর বেলায়

গলাবাজি করে- ঘরদোর সামলিয়ে

কোনোদিন ঠিক টাইমে অফিসে যেতে পারলো না।

রাতে বিছানায় উলটো পাশ ফিরে শুয়। গায়ে হাত বুলিয়ে

অভিমান ভাঙাই যখন, খেকিয়ে ওঠে।

আমাদের একমাত্র মেয়ে, সুহা যার ডাকনাম, একলা ঘরে

টিভি দেখে দেখে চোখে জ্বালা ধরে গেলে

জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আকাশ দেখে।

মেঘদের দিকে তাকিয়ে নিজের তুলার পুতুলটার সাথে

কথা কয়, কুলে নিয়ে বসে থাকে।

ট্রেনের হুঁইসেলে সম্বিত ফিরলো। টিকিটের সাথে

নম্বর মিলিয়ে দুজন যাত্রী বসেছে সামনের সিটটায়।

বৃদ্ধ মা আর পুত্র। ছেলেটার হাতে

এক্স-রে প্লেট, প্রেসক্রিপশন, ঔষধপত্রের পুটলি।

বৃদ্ধার ডান হাতে কনুই অব্দি ব্যান্ডেজ,

গলাতে ঝুলানো। সম্ভবত ডাক্তারখানা থেকে ফিরছে।

মনে পড়লো আমার মায়ের হার্টঅ্যাটাকের দিনগুলোতে

হাসপাতালেই যেতে পারিনি।

“আম্মার অসুখ, গ্রামে যাবো”- বউয়ের অভিমত

নিতে গেলে জানালো- “তোমার অন্য ভাইয়েরা

কেনো আছে! বাবা কী করেন! তোমার না অফিসে

কাজের চাপ?” আরও কতো জ্ঞান দান।

হায় রে স্বজনবিমুখতা! হায় রে শহরবাস!

ট্রেন ছুটছে তীব্র, বাতাসে উড়ছে চুল।

আমি জানি... ওঠোনে পা রাখতেই

মা আমাকে দূর থেকে দেখে শুয়া ছেড়ে

তরিঘরি বসবে।

প্যারালাইজ্ড পা দুটি নিয়েই বিছানা ফেলে

উড়ে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করবে।

কেমন আছি জিজ্ঞাসার পরপরই বলবে-

“বউমাকে দেখছি না কেনো? নাতনিটাকে নিয়ে এলে কী হতো?”

কাঁধের ভারি ব্যাগটা মেঝেতে রেখে

দীর্ঘশ্বাস ছাড়বো যখন, তজবি জপা থামিয়ে বাবা বলবেন-

“আর কতো শহরে থাকবি! তোদের ছাড়া বাড়ি-ঘর

কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে রে...”

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়