মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

সোনামণি রেন্ট-এ-কার
অনলাইন ডেস্ক

রাতের আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা পাহাড়গুলো দিনের আলোতে পুরোপুরি বদলে যায়। সূর্যের আলো মেখে পাথরাবৃত পাহাড় ঝকমকিয়ে ওঠে। দুপাশে বিশালাকার পাহাড়ের সারি, মাঝখানের চওড়া রাস্তায় চলছে গাড়ি। ভারতের তামিলনাড়ু পেরিয়ে কর্নাটকের পথে। মসৃণ রাস্তায় যানবাহনের আধিক্য নেই। স্পিডোমিটার তাই ১০০ কিলোমিটার ছুঁইছুঁই। চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়ে হঠাৎ মিলে যাওয়া অবসরে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। ভেলোরে চিকিৎসাপ্রার্থীদের মধ্যে বাঙালিদের আধিক্য। সেখানে অন্য কোনো সমস্যা না হলেও ভাষার ভিন্নতায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। বিশেষ করে যাঁরা বাংলা ও ইংরেজি জানেন না তাঁদের সঙ্গে। তার ওপর আমাদের কেউই হিন্দিতে তেমন দক্ষ নন। তামিলনাড়ুতে বাংলা, অতিপ্রচলিত দু-একটি হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে কাজ চালিয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে আকার-ইঙ্গিতের আশ্রয় নিয়েছি। শঙ্কায় ছিলাম মাইক্রোবাসের চালককে নিয়ে। যা বলতে চাইছি তা ঠিকঠাক বুঝলে হয়!

আমার বাংলা-হিন্দি-ইংরেজির মিশ্রণ দিয়ে কথা বলার প্রবণতায় বাধ সাধলেন খোদ তামিল ড্রাইভার। আমাদের চমকে দিয়ে পুরুষ্ঠ গোঁফ নাচিয়ে একগাল হেসে বললেন, ‘ভাই বাংলা বলেন, বাংলা। এমন মিষ্টি ভাষা আর হয় না।’ বাংলা বলা শুনলে বেশির ভাগ তামিলই যেখানে বিরক্ত হন, সেখানে তিনি একেবারেই ব্যতিক্রম। বাংলা বলছেন স্পষ্ট করে, কোনো রকম আড়ষ্ঠতা ছাড়াই। তাঁর মুখ থেকেই শুনলাম বাংলা শেখার পেছনের গল্প, ‘মনের টানে বাংলা বলা শিখেছি। শুনেছি, এ ভাষার জন্য অনেকে জীবনও দিয়েছেন। আমার পরিবারের সবাই বাংলা বোঝেন। ছেলেমেয়ে অনেক কথা বাংলায় বলতে পারে।’ আরও বিস্মিত হলাম যখন দেখলাম, লোকটা সবাইকে বলছেন তাঁর নাম ‘সোনামণি’। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্সে নাম লেখা ‘শৃঙ্গানামানি’। এমনকি তাঁর রেন্ট-এ-কারের নামও রেখেছেন ‘সোনামণি’! এটা তাঁর ব্যবসার কৌশল হলেও বাংলা ভাষাপ্রীতির কারণে সম্মান তাঁর প্রাপ্য ছিল, সেটি কয়েক গুণ বেড়ে গেল, যখন প্রায় শুদ্ধ সুরে গেয়ে উঠলেন ‘একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর, ও মন আমার...কেন বান্ধ দালানঘর!’

যাঁকে নিয়ে শঙ্কা ছিল সেই চালক সোনামণিই আমাদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। কথার পিঠে কথা চলে। চা-আড্ডার একফাঁকে সোনামণি জানান তাঁর সুপ্ত বাসনার কথা। একটিবারের জন্য হলেও বাংলাদেশে আসতে চান। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। সোনামণির ইচ্ছা, ছেলে দুটির যেকোনো একজনের বিয়ে হোক এ দেশে! তাঁর কথায় আবেগ ছিল, তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা; ছোট্ট এ দেশটার সঙ্গে সম্পর্ক স্থায়ী করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। বিভূঁইয়ের সেই গোধূলিবেলায় সোনামণির কথায় আমাদের চোখও ভিজে উঠেছিল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়