মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

আধুনিকতা
অনলাইন ডেস্ক

(গত সংখ্যার পর ॥ শেষ পর্ব)

রঞ্জন মাথা নিচু করে রইলো। তার মুখে কোনো কথা বের হলো না। মনে মনে ভাবলো, মহাবিপদের ভারী বোঝা মাথা নিয়েছে মনে হচ্ছে। রঞ্জনের মা ঘরে ঢুকে সংসারের অন্যান্য কাজ করতে লাগলো। তারপর মনমরা হয়ে চেয়ারে বসে রইলো। ভাবতে লাগলো, ছেলের এমন আচরণ নিয়ে। ছেলের কথাবার্তা শুনে মা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না।

রঞ্জনের বাবা সকাল সকাল বাজার করে ঘরে ঢুকে চিন্তিত দেখে বললো, কী ব্যপার, তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে! মনে হচ্ছে, বউ দেখে তুমি মোটেও খুশি হওনি।

রঞ্জনের মা : হুম! আমি খুশি হইছি ডিসকো বউ দেইখা। আমার খুব নাচতে ইচ্ছে করছে।

রঞ্জনের বাবা : ও, তোমার বুঝি নাচতে ইচ্ছে করছে। ভালো ভালো খুব ভালো। তাহলে হেলিয়ে দুলিয়া কোমড় দুলাইয়া নাচতে থাকো।

রঞ্জনের মা : তোমারে মনে হইতাছে খুবই খুশি হইলা!

রঞ্জনের বাবা : আমিও মনের দুঃখে এসব বলতাছি গো! তুমি বুঝতে পারছ না?

রঞ্জনের মা : তোমার ছেলে আমাকে কি বলছে জানো তুমি?

রঞ্জনের বাবা : কী বলছে?

রঞ্জনের মা : কইছে, তার বউয়ের জন্যে চা নাস্তা বানাইতাম!

রঞ্জনের বাবা হতভম্ব হয়ে গেলো। এটা কি কথা! ছেলেটা এতো সাহস পেলো কোথা থেকে?

তারপর রঞ্জনের বাবা বললো, তোমারে কয় তার বউয়ের জন্যে চা নাস্তা বানাতে, তার সেবা যত্ন করতে। দাঁড়াও, একটু অপেক্ষা করো। ঘুম থেকে উঠুক, তারপর আমি দেখতাছি কী করা যায়।

রঞ্জনের মা : এ কেমন বউ! আমরা সকলে মিলে তার সেবা যত্ন করবো! পরিবারে কেমন শিক্ষা পাইলো!

রঞ্জনের বাবা : আচ্ছা, আজ শিখিয়ে দেবো কিভাবে সেবা যত্ন করতে হয়। যে ছেলের জন্যে আমরা এত কিছু করলাম সেই ছেলে কি না, বলে তার বউয়ের সেবা যত্ন করতে।

৪.

শিউলী : শোনো, আমার কিন্তু গ্রামের অখাদ্য একদম ভালো লাগবে না।

রঞ্জন : কেন কী হয়েছে? আমার মায়ের রান্না তো মোটেও খারাপ না। খুবই ভালো তো। আমার মনে হয়, তুমি অভ্যস্ত নয় তো তাই এভাবে বলছ। তাই তোমার কাছে সবকিছু কেন জানি খারাপ লাগছে।

শিউলী: ভালো রান্না করে! গ্রামের এসব খাওয়া যায়? আমার এসব খাবার রুচিতে বাধে। তুমি জানো না, আমি ভদ্র লোকের মেয়ে, শহরের শিক্ষিত মেয়ে। তুমি আমার সম্পর্কে জানো না, আমি হোটেলে খেয়ে অভ্যস্ত।

রঞ্জন : রাগ করো না শোনা।

শিউলী : আচ্ছা, তুমি কেনো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ বলো তো। আমার একদম ভালো লাগছে না।

রঞ্জন : আরে, দেখছো না, গ্রামের মানুষ তোমাকে দেখলে অবাক হইয়া তাকিয়ে থাকে। আমি যে একজন বড় লোকের মেয়েকে, শিক্ষিত শহরের আধুনিক মেয়েকে বিয়ে করছি সেটা দেখানোর জন্যেই তোমাকে নিয়ে এসেছি। সবাই তোমাকে দেখে কত অবাক হয়!

শিউলী : আমার এসব একদম ভালো না।

রঞ্জন : অপেক্ষা করো। আস্তে আস্তে সবই ভালো লাগতে শুরু করবে।

শিউলী : আমার জন্যে বাইরের খাবার নিয়ে এসো। আমি ঘরে খেতে পারবো না।

রঞ্জন : অপেক্ষা করো। আমি কাজের মেয়ে নিয়ে আসবো।

শিউলী : এই পরিবেশই আমার ভালো লাগে না। এখানে যতই আমার জন্যে কাজের লোক নিয়ে আসো, আমার কিছুই ভালো লাগবে না।

রঞ্জন একেবারে চুপ হয়ে গেলো। হতভম্ব আর কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ভাবতে লাগলো, কী সমস্যা! এই সমস্যা দূর করা মোটেও সম্ভব নয়। নিজেকে বড়ই বোকা আর অপরাধী মনে হচ্ছে। কিভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় ভাবতে লাগলো। এমন সময় শিউলী এসে রঞ্জনকে বললো, চলো, আমরা তোমাদের উঠোনে কয়েকটা সেলফি তুলি।

ওরা সেলফি তুলছে এমন সময় রঞ্জনের বাবা পেছন থেকে এসে চিৎকার করে বললো, বন্ধ কর এসব রঙঢঙ! তুমি কোন লাট সাহেবের মেয়ে। প্যান্ট পইরা ঘুরে বেড়াবা। আর উঠোনে রঙঢং করে সেলফি তুলবা! সকাল হলে তোমার শাশুড়ি তোমাকে নাস্তা বানিয়ে দেবে, এটা তোমার কী ধরনের শিক্ষা? গ্রামে আইছ শাড়ি পরো। রান্নাঘরে ঢুকে রান্নাবান্না শুরু কর। সংসারে দায়িত্ব বুঝে নাও। আর তুমি এভাবে চলতে পারবা না এই গ্রামে। সংসার করতে চাইলা মন দিয়ে তোমাকে সংসার করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়