সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

মার্চের শুরুর ও বিশেষ দিনগুলো
অনলাইন ডেস্ক

মার্চ মাসটি বাঙালি জাতির জন্য চিরস্মরণীয় একটি মাস। জাতীয় জীবনে অর্জনের মাস এই মার্চ। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে বাঙালি জাতিকে স্বর্ণদুয়ারে পৌঁছে দেয়ার মাস এই মার্চ। স্বাধীনতা একটি জাতিকে তার নিজের মতো করে দেশ ও জাতি গঠনের ভূমিকা রাখার সুযোগ এনে দেয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম। এই স্বাধীনতাই আমাদের সামনে স্বর্ণদুয়ার খুলে দিয়েছে। বিশ্বের কোনো জাতিই আত্মমর্যাদা ক্ষুণœ করে পরের অধীনে দিন পার করতে চায় না। স্বাধীনতার এই স্মৃতিকে স্মরণ করে কবি লিখেছেন-‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়-দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়।’

প্রতি মাসের মতো এ মার্চ মাসেও রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিন। যেমন-৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ১০ মার্চ কিডনি দিবস, ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীরক্ষা দিবস, ১৫ মার্চ ক্রেতা দিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস, ২৩ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস, ২৬ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবস আর ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস।

ইতিহাসের পাতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নতুন মাত্রা হিসেবে সংযোজিত হয় ৭ মার্চ। এই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখ লাখ জনতার উদ্দেশে বলেন-এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। এই ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

নারী মুক্তি আন্দোলন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিলো ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্ক শহরে সুঁচ তৈরির কারখানায়। অমানবিক পরিবেশ ও দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিক প্রতিবাদের সূচনা করে। মূলত এটাই নারীর সচেতন হয়ে ওঠার প্রথম দৃঢ় ভিত্তি। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ কারখানার মহিলা শ্রমিকরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে। কিন্তু পুলিশ চড়াও হয় নারীদের ওপর গ্রেপ্তার করে নারীদের। সচেতন বিদ্রোহী নারী শ্রমিকরা জেল-জুলুম আর ভীতি প্রদর্শনের মধ্যেও নিজেদের বিদ্রোহের অগ্নিমশাল নির্বাপিত হতে দেয়নি। ১৯১০ সালে কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক মহিলা সম্মেলনে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সে থেকে প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদার সাথে দিবসটি পালন করা হয়। তবে দুঃখের বিষয় আজ ১০২ বছর হলেও নারীর আইন নারীর আদালতে নারীর ক্ষমতা ও নারী নির্যাতন রোধে আমাদের দেশে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

সচেতনতাই পারে কিডনি রোগ থেকে মুক্ত রাখতে। প্রতি বছর ১০ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কিডনিকে সুস্থ রাখা আর হার্টকে রক্ষা করার জন্যেই যে সচেতনতা বা সচেতনতার প্রচার করার জন্যেই দিবসটি পালন করা। বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় ৫ জন করে মানুষ কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি সমস্যায় ভুগছে। অন্যান্য কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের নিরাময় ও চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়েছে কিডনি রোগের চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। তার মাঝে যেকোনো রোগী তার শরীরের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কিডনি অকেজো হওয়ার পর এই রোগ ধরা পড়ে বিধায় এই রোগের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

২০০৬-০৯ সালের জরিপে দেখা যায় ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। আর ৩০ ভাগ রয়েছে ৫০ বছর এর উপরে। শুধু শিশু বয়সী ৪৫ লাখের বেশি রোগী বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে। কিডনি রোগের চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় এদেশের ৯৫ শতাংশ রোগীর পক্ষেই এই চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

নদণ্ডনদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে রয়েছে গবেষকদের মতপার্থক্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশে নদ নদী ও উপনদী সব মিলিয়ে বর্তমানে মোট সংখ্যা ২৩০টি। স্থানীয়ভাবে মোট ৪২০টি নদ নদীর হিসাব পাওয়া গেলেও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো অনেক বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন নদী গবেষকরা। অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নদণ্ডনদীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ২০০টি। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ড্রেজিংয়ের অভাবে দেশের অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু পলি জমে গত কয়েক বছরে দেশের ১৭টি নদী সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নদীর নাব্য রক্ষায় ড্রেজিং ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে সে অনুপাতে বছরে ডেজিংয়ের চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। এতে করে নৌপথও স্বল্প হয়ে যাচ্ছে। নদীও তার নাব্য হারাচ্ছে। নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্ধমৃত নদণ্ডনদীগুলোকে খননের ব্যবস্থা অতি সত্বর না করলে নদীগুলোকে বাঁচানো যাবে না।

১৭ মার্চ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এইদিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল মাত্র ৫৫ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। বিশ্ব ইতিহাসে মহানায়কদের মাঝে তিনি একজন। ছোটবেলা থেকে রাজনীতি, বিদ্রোহ ও বিদ্রোহী ব্যক্তিদের জীবনী ছিলো তার প্রেরণার উৎস। স্কুলজীবনে ছাত্ররাজনীতিতে এলে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তার ছাত্ররাজনীতির অবসান হয়। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক কর্মীদের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।

সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী ২২ মার্চ পালিত হবে বিশ্ব পানি দিবস। পৃথিবীর সব সমস্যার মাঝে পানির সমস্যা প্রধান। বিশ্বের প্রায় ১শ’ কোটিরও বেশি মানুষ এখনো সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে মিঠা পানির উৎস। দৈনিক ২২০ কোটি লিটার পানির চাহিদার মাঝে ওয়াসার শোধনাগার ও ৫০০ গভীর নলকূপের সাহায্যে সরবরাহ হচ্ছে ১৮০ কোটি লিটার। ২০০১ সালে সায়েদাবাদে সাড়ে ২২ কোটি লিটার পানি উৎপাদনক্ষম শোধনাগারের কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ এতো বছর পরও চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করে পানি সরবরাহ না করলে এই ঘাটতি মেটানো যাবে না।

বিশ্বের ২২টি যক্ষ্মা আক্রান্ত দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থা ষষ্ঠ। যক্ষ্মা মোকাবেলায় সাফল্যের মুখ এখনো দেখেনি বাংলাদেশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কফ পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা বা টিবি রোগ শনাক্ত করা যায়। তবে নিয়মিত ডাক্তার ও রোগীর সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষ্মা নিরাময় করা সম্ভব। মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম নামক যক্ষ্মা নিরাময় করা সম্ভব। মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবার কুলোসিস নামের জীবাণু যক্ষ্মা বা টিবি রোগের জন্য দায়ী। বই জীবাণু শ্বাসের সময় শ্বাসনালির মাধ্যমে মান দেহে সংক্রমিত হয়। তবে কফে রক্ত দেখলেই যক্ষ্মা বলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হিমোফিলিয়া বা অনুচক্রিকাজনিত রোগের কারণেও কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে।

২৬ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবস। টানা ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা।

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী একযোগে ২৮ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস পালন করবে। প্রতিবছর ঢাকা ছাড়াও দেশের সাতটি বিভাগের মোট ৬০টি জেলায় একযোগে দিবসাট পালন করে। নাটক মানুষকে বিনোদন দেয় তবে তার সাথে সমাজের অসামান্য ও বাস্তব সমাজের চিত্র তুলে ধরতেই দিবসটি উদ্যাপন করা। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ জাপানের মতো দেশকে ল-ভ- করে দিয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের অবস্থার কথা কল্পনা করা যায় না। ১৯৮৭, ১৯৮৮, ৯৮, ০৪ ও ২০০৭ সালের বন্যা ১৯৯১ সালের ও ০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় আর সিডর আইলার মতো ধ্বংসলীলা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভয়ানক সেই দিনগুলোর কথা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা ও এর প্রস্তুতি নেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি দিবস পালন করা হয়। তবে পূর্বাভাস পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য না পাওয়ায় অনেক সময় ধ্বংসলীলায় পড়তে হয় দেশকে। সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে জন ও ধন-সম্পদ বাঁচানো সহজ হবে। দিবসগুলোর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে পালিত হবে এটাই কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়