প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
মেয়েটিকে প্রায় দেখি নতুনবাজার থেকে বাসে উঠে মালিবাগ নেমে যায়। স্টুডেন্ট হাফ, তাই অর্ধেক ভাড়া নিয়ে মাঝে মাঝে হেলপারদের সাথে কথাকাটাকাটি হতো। যেহেতু এই সময়টাতে বাসে সীট পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো। তারপরও আমি ঠেলেঠুলে পেয়ে যেতাম। মেয়েটি কখনো পেতো কখনো পেতো না। দাঁড়িয়ে থাকতো, কখনো সীট ছেড়ে দিতাম। কখনো ছাড়লেও বসতো না। কিভাবে যেনো সময়টা মিলে যায়, মিলে যায় বাসে উঠার ব্যাপারটা। এই শহরে মানুষের যেমন অভাব নেই বাসেরও তেমন অভাব নেই। কত লোক উঠে কত লোক নামে তার কোনো হিসেব নেই। কিন্তু মেয়েটি কিভাবে যেনো মনে আটকে গেছে।
একদিন মেয়েটির পাশের সীটি জায়গা পেলাম। বার বার কথা বলতে গিয়েও গিলে ফেলছিলাম। একটা অজানা ভয়ে আছি আমি। যদি অন্য কিছু মনে করে। মেয়েটি এক মনে মোবাইল ফোন চেপে যাচ্ছে। স্মার্ট ফোন। ফেসবুক চালায় হয়তো। আমি টেরা চোখে তাকাই। মেয়েটি সম্ভবত আমার বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে। কিছু বলবেন, এমন তাকাচ্ছেন কেনো? একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ইয়ে মানে, মানে.. না কই কিছু না। মেয়েটি আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন কোন চিড়িয়াখানার নতুন আমদানি করা প্রাণী দেখছে।
সেদিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, মেয়েটি আজ ফিরোজা কালার একটি সেলোয়ার কামিজ পড়েছে। কোনো একটা কারণে বাস আজ একেবারে কম। রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার হতে পারে। যদিও মাঝে মাঝে দু-একটা আসছে, কিন্তু সেগুলোতে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম মেয়েটির সাথে। এদিকে রাত তো বাড়ছেই। একটা প্রস্তাব মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলো। যদিও সাহসের অভাবে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। অবশেষে আর দাঁড়িয়ে না থেকে মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তো মালিবাগ যাবেন, আমিও সেই দিকে যাবো। আপনি চাইলে একটা রিকশা...। মেয়েটি এমনভাবে তাকালো যেনো আমি বলে অন্যায় করে ফেলেছি। আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, সমস্যা নেই স্টুডেন্ট হাফ এটা আমি জানি। মেয়েটি বলল, আপনি কি আমাকে চেনেন? জ্বি না, তবে প্রায় বাসে দেখি, পথও চেনা বলতে পারেন। মেয়েটির ভাব দেখে মনে হলো যে যেতে রাজী না। এভাবে কেটে গেলো আরো অনেকক্ষণ। শুনুন, মেয়েটি বললো। জ্বি। একটু মুচকি হেসে বললো, ঠিক আছে রিকশা নিন। আমি কিছু দূর এগিয়ে গেলাম। রিকশাও চোখে পড়ছে না। অনেক কষ্টে একটা পাওয়া গেলো তা-ও আবার দ্বিগুণ ভাড়া। মেয়েটি আবার পাশে উঠে বসলো।
এমন সময় আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। তানিশা ছাতা মেলে ধরলো। একি ছাতার নীচে দুজন। চোখের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো শহর। ভিজছে মনের দেয়াল। তানিশার খুব কাছাকাছি আমি। আমার একপাশ ভিজে গেছে, তানিশারও। যেনো একটি ফ্রেমে বাঁধা দুটো ছবি। রিকশাওয়ালার অবস্থ্যা কাহিল, রাস্তায় পানি জমেছে তাই কষ্ট হচ্ছে তার। মালিবাগ আসতেই, আমি ভাড়া দেয়ার আগেই তানিশা ভাড়া দিয়ে দিলো। আরে স্টুডেন্ট হাফ তো, বললাম আমি। আজ ইচ্ছে করে ফুল দেবো এই বলে হেসে চলে গেলো তানিশা।
এরপর অনেকবার তানিশা আর আমি নতুনবাজার টু মালিবাগ জার্নি করেছি। খুব ভালো লাগতো মেয়েটিকে। কেনো এত ভালো লাগতো জানি না। তানিশা একটি ছেলেকে পছন্দ করতো। কথাটা শুনে এতটুকু হৃদয়ে কষ্ট লাগেনি। প্রকৃত ভালোবাসার জন্যে হৃদয়ে কষ্ট নয় ভালোবাসাই থাকে। দিনক্ষণ দেখে তানিশা ওর পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে ফেললো। আজ আর নতুনবাজার তানিশার জন্যে আমি অপেক্ষা করি না। বৃষ্টিতে মনের দেয়াল ভিজতে দিই না। মন শহরে দুদিনের অতিথি তানিশাকে মন থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা