প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দুর্নীতি, লুটপাট এবং পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে নতুন প্রজন্ম
একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার জনগণের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিকতা এবং মতাদর্শ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, ফলে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় আদর্শ। দলীয় স্বার্থে মানুষকে ব্যবহার করার মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতা কায়েম রাখতে মরিয়া। আর জনগণের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- জনগণ কি আসলেই এসব দাবি করেছে?
আজ আমরা দেখি, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের নামে নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। তারা বলে, ‘জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায়’, ‘সত্তরের মতো নির্বাচন চাই’, কিন্তু আসলে কি জনগণ এ দাবি করছে? না। প্রকৃতপক্ষে, দেশের ৮০% মানুষ চায় সংস্কার। তারা চায় দুর্নীতি, লুটপাট এবং এক পরিবারের একচ্ছত্র শাসন থেকে মুক্তি। তারা শান্তি চায়, সুশাসন চায়, দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজে বাস করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের দোহাই দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য পূরণে লিপ্ত, আর এই জনগণের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া উপেক্ষিত হচ্ছে।
রাজনীতির এই অন্ধ ক্ষমতার লড়াইতে নীতি-নৈতিকতা সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। দলীয় স্বার্থ রক্ষার্থে মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ ছিল, সৎপথে চলা, অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। কিন্তু আজকের রাজনৈতিক দলগুলো এসব নীতিকে পদদলিত করছে। আল্লাহর শেখানো সৎ পথে চলার কথা, ভুল স্বীকার করার কথা, দলীয় আনুগত্যের নামে সেটি ধ্বংস করা হচ্ছে।
ক্ষমতা হারানোর পরও কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাদের অতীতের ভুলের জন্যে অনুশোচনা দেখা যায় না। বরং প্রতিশোধ আর প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার মানসিকতা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে দেশকে লুটপাটের কবলে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যে শান্তি চায়, সুশাসন চায়, তা ভুলে গিয়ে ক্ষমতার লোভে তারা মরিয়া। আরেকবার প্রশ্ন আসে- এই দলগুলো আসলেই কি দেশকে ভালোবাসে, নাকি কেবল ক্ষমতার লোভে অন্ধ?
বিরোধী দল বিএনপি এখন ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনের উদ্দেশ্য কী? জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নাকি কেবল রাজনৈতিক কৌশল? এ দাবি করা হচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত একটি নির্বাচন আয়োজন করুক, কিন্তু কি কখনও সত্যিকারের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? আমাদের ৫৩ বছরের ইতিহাসে আমরা কি কখনো দেখেছি, ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো জনগণের স্বার্থে কাজ করেছে?
ক্ষমতায় আসার মানে কি সবসময় লুটপাট, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার হবে? আমরা কি আর এসব দেখতে চাই? জনগণ কি এসব আর মেনে নিতে পারে?
ক্ষমতা হারানোর পরও দেশের মঙ্গলের জন্যে কাজ করার যে নৈতিক দায়িত্ব, তা আর দেখা যায় না। বরং ক্ষমতা হারানোর পর দলগুলো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, যেন প্রতিশোধের আগুনে সবকিছু ভস্মীভূত করতে চায়। অথচ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাজ হওয়া উচিত, ক্ষমতা হারানোর পরও দেশের উন্নতির জন্যে কাজ করা। তারা ভুলে যায়, দেশের শান্তি ও সুশাসনই জাতির প্রকৃত উন্নয়ন এনে দিতে পারে। এই মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া আমাদের জাতি কখনোই প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। তারা বলছে সংস্কার তাদের দায়িত্ব নয়, বরং জনগণের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কাজ। কিন্তু কি কখনও এমনটা ঘটেছে? জনগণের স্বার্থকে রক্ষা করে ক্ষমতাসীনরা কখনও নিজেদের ক্ষমতা বিসর্জন দিয়েছে? ক্ষমতায় এসে দুর্নীতিবাজ নেতারা নিজেরা দেশের সম্পদ লুটপাটে মত্ত হয়েছে। আর জনগণ কি এসব আর মেনে নিতে প্রস্তুত?
আল্লাহ আমাদের সততা, শোকরগোজারিতা, এবং অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে শিখিয়েছেন। কিন্তু আজ আমরা সেই শিক্ষা ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থে অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। দলের প্রতি অন্ধ সমর্থন আর ক্ষমতার লোভ আমাদের বিবেককে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সত্যিকারের ধর্মীয় নৈতিকতা আর আল্লাহর নির্দেশিত আদর্শকে বাদ দিয়ে আমরা কেবল ক্ষমতার পেছনে ছুটছি। আমাদের যদি সত্যিকারের নীতি-নৈতিকতা থাকতো, তবে আজকের রাজনৈতিক দলগুলোর এই আচরণ আমরা দেখতে পেতাম না।
রাজনীতির নামে অন্ধ সমর্থন আর ক্ষমতার লোভে নিজেদের বিবেক বিক্রি করার সময় শেষ। আজকের বাংলাদেশে আমাদের দরকার সৎ নেতৃত্ব, যারা দেশের সেবা করবে, ক্ষমতার পেছনে নয়। দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেওয়ার দিন শেষ। যারা দেশকে লুটপাটের কবলে ফেলেছে, তাদের মুখে মুগুরের বাড়ি দিতে হবে। ক্ষমতায় আসার জন্যে যাদের এতো আকাঙ্ক্ষা, তাদের প্রশ্ন করতে হবে—তারা কি সত্যিই দেশকে ভালোবাসে, নাকি কেবল ক্ষমতা লুট করতে চায়?
আমাদের দরকার সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব, যারা ক্ষমতার লোভে নয়, মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করবে। দলীয় সমর্থনের নামে অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সবার আগে দরকার সৎ নেতৃত্ব, প্রকৃত শাসনব্যবস্থা এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। আমাদের ৮০% মানুষ পরিবর্তন চায়- শান্তি চায়, সুশাসন চায়, আর একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায়।
রহমান মৃধা : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]