প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মানুষের হৃদয় জয়ই হতে হবে রাজনীতি
মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ছাত্র, জনতা আরেকটি দেশ স্বাধীনের চেতনায় জাগ্রত হয়ে দ্বিতীয় বারে দেশ স্বাধীন করেছে। অত্যাচার, নির্যাতনের সীমা অতিক্রম করে ৭১-এর পাক হানাদার বাহিনীকে ছাড়িয়ে আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে যে ইতিহাস রচিত করেছে, তার প্রতিফলনে এ যুগান্তকারী আন্দোলন ও বিজয়।
রাজনীতি হচ্ছে দেশ সেবার একটি অংশ। রাজনীতি যারা করেন বা করতে চান তাদের এই ভাবনার কোনো প্রতিফলন বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনও । সাধারণ জনসাধারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বহু খুঁজেও পায়নি স্বাধীনতার যথার্থতা ।পায়নি কোনো রাজনৈতিক নেতার সততা, পায়নি ক্ষমতায় থাকা নেতাদের কাছ থেকে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার উদাহরণ ।
আমরা নিজ কেন্দ্রীয় সমস্যার জন্যে দৌড়ঝাঁপ করছি রাজনীতিতে শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক পরিবর্তন ঘটাতে, যা আজ জনসাধারণ বুঝে গিয়েছে হাড়ে হাড়ে। তাই বিগত ১৬ বছরে কোনো আন্দোলনে জনগণের সামিল দেখা যায়নি কোথাও।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরেছেন ঘরে, রাজনৈতিকরা করেছেন রাজনীতি। কিন্তু এখন ২য় মুক্তিযুদ্ধের পরে ছাত্র, জনতা প্রথম দিন ঘরে চলে যাওয়ায় যে অবস্থা দেখা গেছে, তাতে ছাত্র, ছাত্রীরা আবার নেমেছে রাজপথে দেশ মেরামতের কাজে , নেমেছে জনতা পাড়ায় ও মহল্লায় এবং নগরে মানুষকে নিরাপত্তা দিতে।
জাতি কিন্তু এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত আছে, সুতরাং এই জাতি এখনই পারবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।
আমি এই ছাত্র সমাজের ভেতরে যে দেশপ্রেম দেখতে পাচ্ছি, তা যদি কয়েক বছর বিরাজ করে, দেশ এগিয়ে যাবে ও মুক্তি আসবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকদের রাজনীতি করা বাংলাদেশে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ।
একটি চেতনা জাগ্রত করা এবং সেই চেতনা কাজে লাগিয়ে দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে একজন মহান দেশপ্রেমিক প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সেই ধরনের কয়েকজন দেশপ্রেমিক পেয়েছে, যাঁদের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবেই যাবে।
বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে যেই জিনিস গুলো কাজ করে, তা হচ্ছে আমার লাভ কী? আমি কী পাবো ?এতে আমার ক্ষতি কী?
দেশপ্রেমিকরা যখন কাজ করে বা করবে, তখন হাজারও বাধা অতিক্রম করতে হবে।
কারণ, দুর্নীতি আজ অবস্থান করছে ঘরে ঘরে পথে পথে এলাকায় এলাকায় এবং শহর নগর ও রাষ্ট্রে । নিজেদের ভেতরে বিভাজন তৈরি হবে কী পেলাম কী হারালাম পাছে লোকে কিছু বলে। আমরা পারি না একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকতে? আমরা দুদিন পরেই শুরু করে দেই নিজের চিন্তায় অন্যের ক্ষতিতে সামিল হতে। অথচ দেখুন আমরা ছেলেবেলায় শুনতাম এক রকমের মানুষ থাকবে, যারা মিথ্যা বলবে না, চুরি করবে না, অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ দখল করবে না, কোনো মেয়ের দিকে কুনজরে দেখবে না, ধর্ষণ তো অনেক দূরের কথা ।
আসলেই এ রকম মানুষ কি পৃথিবীতে আছে ?
হ্যাঁ আছে পশ্চিমাদের দেশে। সেই দেশ গুলোতে মানবিক আর মানবিক, এমন কি তারা কাউকে কাউকে নিজের বাড়ি, ঘরও লিখে দিয়েছে ।
কেন এত উদার সেই দেশগুলোর মানুষ? তারা কি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, তাই?--
না, সেই দেশগুলোর মানুষ স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। সেই দেশগুলোর মানুষ পোশাকে খোলামেলা, কিন্তু খারাপ কাজে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছে বন্ধ করে ।
আজ বাংলাদেশ অনেক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু এগিয়ে যেতে পারছে না নিজেদের পরিবর্তনে ।
আমাদের তরুণরা যে জাগরণ তৈরি করেছে, আমি তাদের ওপর আশাবাদী, যদি তরুণরা থেমে না যায়, তারাই পারবে একটি সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়ে সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসতে । সেই পরিবর্তন তৈরি করবে একটি সভ্য জাতি। কারণ, আজকের তরুণদের পেছনে রয়েছে আরো তিন প্রজন্ম, যারা দেখবে শিখবে এবং তারা শিক্ষা দেবে পরের প্রজন্মদের।
সুতরাং যদি রাজনীতি করা লোকেরা রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে চায়, তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হতে হবে দেশ প্রেমিকের ভূমিকায়।
মানুষ আজ অনেক সুদূর চিন্তা-ভাবনার চর্চায় অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং তাদের মন জয় করতে আপনাকে, আমাকে আন্তরিকতার সাথে মানুষ সেবার রাজনীতিতে নামতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।