মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

জান্নাতের বর্ণনা ও নেয়ামত

মুফতী মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

অনলাইন ডেস্ক
মুফতী মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর একজন ফিরিশতা ঘোষণা দেবেন, "হে জাহান্নামবাসীগণ! আর মৃত্যু নেই। আর হে জান্নাতবাসীগণ! আর মৃত্যু নেই। যে দল যে অবস্থায় আছে, সব সময় ঐ অবস্থাতেই থাকবে।" (সহীহ বুখারী, কিতাবুর রিক্বাক্ব, মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ)।

অন্য তাফসীরে এসেছে -[১] 'জান্নাতের তলদেশে নদী প্রবাহিত' বলে এটাই বোঝানো হয়েছে যে, এর গাছের নীচ দিয়ে ও এর কামরাসমূহের নীচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জান্নাতের নদী-নালাসমূহ মিশকের পাহাড় থেকে নির্গত। [সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭৪০৮]

আনাস ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, 'জান্নাতের নহরসমূহ খাদ হয়ে প্রবাহিত হবে না। সহীহুত তারগীব অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাউজে কাউসারের দুই তীর লালা-মোতির গড়া বিরাট গম্বুজ বিশিষ্ট হবে। [বুখারী: ৬৫৮১] আর তার মাটি হবে মিশকের সুগন্ধে ভরপুর। তার পথে বিছানো কাঁকরগুলো হলো লাল-জহরত, পান্না-চুন্নি সদৃশ। [ইবনে কাসীর]। [২] জান্নাতবাসীদেরকে একই আকৃতি বিশিষ্ট বিভিন্ন ফলমূল পরিবেশনের উদ্দেশ্য হবে পরিতৃপ্তি ও আনন্দ সঞ্চার। কোন কোন তাফসীরকারের মতে ফলমূল পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার অর্থ জান্নাতের ফলাদি আকৃতিগতভাবে ইহজগতে প্রাপ্ত ফলের অনুরূপই হবে। সেগুলো যখন জান্নাতবাসীদের মধ্যে পরিবেশন করা হবে, তখন তারা বলে উঠবে, অনুরূপ ফল তো আমরা দুনিয়াতেও পেতাম। কিন্তু স্বাদ ও গন্ধ হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। অপর কোন কোন তাফসীরকারকের মতে, ফলমূল পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার অর্থ, জান্নাতে পরিবেশিত ফল-মূলাদি দেখে জান্নাতিগণ বলবে যে, এটা তো গতকালও আমাদের দেয়া হয়েছে, তখন জান্নাতের খাদেমগণ তাদের বলবে যে, দেখতে একই রকম হলেও এর স্বাদ ভিন্ন। ইবনে আব্বাস বলেন, দুনিয়ার ফলের সঙ্গে আখেরাতের ফল-মূলের কোন তুলনাই চলবে না, শুধু নামের মিল থাকবে। [ইবনে কাসীর]। [৩] মূল আরবী বাক্যে ‘আযওয়াজ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বহুবচন। এর এক বচন হচ্ছে ‘যওজ’, অর্থ হচ্ছে জোড়া। এ শব্দটি স্বামী বা স্ত্রী অর্থে ব্যবহার করা হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হচ্ছে ‘যওজ’ ! আবার স্ত্রীর জন্য স্বামী হচ্ছে ‘যওজ’। তবে আখেরাতে আযওয়াজ অর্থাৎ জোড়া হবে পবিত্রতার গুণাবলী সহকারে। জান্নাতে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন স্ত্রী লাভের অর্থ, তারা হবে পার্থিব যাবতীয় বাহ্যিক ও গঠনগত ক্রটি-বিচ্যুতি ও চরিত্রগত কলুষতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং প্রস্রাব-পায়খানা, রজঃস্রাব, প্রসবোত্তর স্রাব প্রভৃতি যাবতীয় ঘৃণ্য বিষয়ের উর্ধ্বে। অনুরূপভাবে নীতিভ্রষ্টতা, চরিত্রহীনতা, অবাধ্যতা প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ ক্রটি ও কদৰ্যতার লেশমাত্রও তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না।

তাদের গুণাগুণ সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াতে এসেছে যে, “তাদের সংগে থাকবে আয়তনয়না, ডাগর চোখ বিশিষ্টাগুণ" [সূরা আস-সাফফাত: ৪৮]। আরও বলা হয়েছে, “তারা যেন পদ্মরাগ ও প্রবাল" [সূরা আর-রহমান: ৫৮]। আরও এসেছে, “আর তাদের জন্য থাকবে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হুর, যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা" [সূরা আল-ওয়াকি'আ:২২-২৩)। অনুরূপভাবে এসেছে, “আর সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা তরুণী" [সূরা আন-নাবা ৩৩]। যদি দুনিয়ার কোন সৎকর্মশীল পুরুষের স্ত্রী সৎকর্মশীলা না হয় তাহলে আখেরাতে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ঐ সৎকর্মশীল পুরুষটিকে অন্য কোন সৎকর্মশীলা স্ত্রী দান করা হবে। আর যদি দুনিয়ায় কোন স্ত্রী হয় সৎকর্মশীলা এবং তার স্বামী হয় অসৎ, তাহলে আখেরাতে ঐ অসৎ স্বামী থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে কোন সৎ পুরুষকে তার স্বামী হিসেবে দেয়া হবে।

তবে যদি দুনিয়ায় কোন স্বামী-স্ত্রী দুজনই সৎকর্মশীল হয়, তাহলে আখেরাতে তাদের এই সম্পর্কটি চিরন্তন ও চিরস্থায়ী সম্পর্কে পরিণত হবে।। [৪] বলা হয়েছে যে, জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসের উপকরণসমূহকে যেন দুনিয়ার পতনশীল ও ক্ষীয়মান উপকরণসমূহের ন্যায় মনে না করা হয় যাতে যে কোন মূহুর্তে ধ্বংস ও বিলুপ্তির আশংকা থাকে। বরং জান্নাতবাসীগণ অনন্তকাল সুখস্বাচ্ছন্দ্যের এই অফুরন্ত উপকরণসমূহ ভোগ করে নির্মল আনন্দ-স্ফূর্তি ও চরম তৃপ্তি লাভ করতে থাকবেন। [ইবনে কাসীর]

দুনিয়া লোভ ও জান্নাতের নেয়ামত

দুনিয়ার আকর্ষণীয় বিষয় : আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্তূপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ -তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল। (সূরা আলে ইমরান ১৪)। তাফসীরে এসেছে -[১] আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে যে, কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জনে সচেষ্ট হয় ও আখেরাতের কল্যাণ আহরণের লক্ষ্যে তার সুচারু ব্যবহার করে। আল্লাহ্ তা'আলা যেসব বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছেন, শরীয়ত অনুযায়ী সেগুলো পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সঞ্চয় করলে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী হাসিল হবে। পক্ষান্তরে অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে অথবা বৈধ পন্থায় হলেও এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে আখেরাত বিস্মৃত হয়ে গেলে ধবংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। [সা’দী] অর্থাৎ এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনে ব্যবহার করার জন্য; মন বসাবার জন্য নয়। আর আল্লাহ্র কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা। সেখানে চিরকাল থাকতে হবে এবং যার নেয়ামত ধবংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। আখেরাতে আল্লাহ্ তা'আলা মুমিনের জন্য যে নেয়ামত রেখেছেন, তার তুলনা দুনিয়ার জীবনের সামগ্ৰীসমূহের কোন কিছু দিয়েই দেয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং যা কিছু এতে আছে তা অভিশপ্ত। তবে যা আল্লাহ্র যিক্র বা স্মরণে করা হয় ও তার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দ্বীনী জ্ঞানে আলেম ও দ্বীনি জ্ঞান অর্জনকারী। [তিরমিয়ী: ২৩২২; ইবন মাজাহ: ৪১১২]। জান্নাতের নেয়ামতের বর্ণনা : আল্লাহ তা'আলা বলেন-বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব হতেও অতি উত্তম কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন বাগান রয়েছে, যার নি¤েœনদী প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে আর রয়েছে পবিত্র সঙ্গী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাগণের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (আলে ইমরান -১৫)। তাফসীরে ফাতহুল মাজিদে এসেছে - ১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন। "হুব্বুশ শাহাওত "বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)। সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই। ‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালোবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)। কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)। সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)। সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তোলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)। তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে। “অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান। অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। ‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঘোড়া তিন প্রকার :

১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।

২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।

৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)। এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)। তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)। তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয় : ১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। ২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে। জান্নাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারীমের কতিপয় আয়াতে কারীমা নি¤েœতুলে ধরা হলো -বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব হতেও অতি উত্তম কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন বাগান রয়েছে, যার নি¤েœনদী প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে আর রয়েছে পবিত্র সঙ্গী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাগণের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (ইমরান -১৫)

পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে আর সে ঈমানদারও বটে, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের প্রতি তিল পরিমাণও অন্যায় করা হবে না। (নিসা -১২৪)। আল্লাহ বলবেন, আজকের দিনে সত্যপন্থীদের সত্যপন্থা উপকার দিবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা স্থায়ী হয়ে চিরকাল থাকবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই হল মহা সাফল্য। (মায়িদা ১১৯)। তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেব, তাদের পাদদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে, আর তারা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে এ পথ দেখিয়েছেন, আমরা কিছুতেই পথ পেতাম না যদি না আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখাতেন। আমাদের প্রতিপালকের রসূলগণ প্রকৃত সত্য নিয়েই এসেছিলেন। তাদেরকে আহবান করে জানানো হবে- ‘তোমরা (দুনিয়াতে) যে ‘আমাল করতে তার ফলে তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ।’ (আরাফ ৪৩)। উভয় দলের মাঝে আছে পর্দা আর আ‘রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী অংশ) কিছু লোক থাকবে যারা প্রত্যেক লোককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে (যে সে জান্নাতের বাসিন্দা না জাহান্নামের)। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’। তারা (আ‘রাফবাসীরা) তখনও জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা আশা করছে। (আরাফ ৪৬)। মু’মিন পুরুষ আর মু’মিন নারীর জন্য আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন জান্নাতের যার নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, আর জান্নাতে চিরস্থায়ী উত্তম বাসগৃহের; আর সবচেয়ে বড় (যা তারা লাভ করবে তা) হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই হল বিরাট সাফল্য।(তাওবা -৭২)। তার ভিতরে তাদের দু’আ হবে, ‘‘পবিত্র তুমি হে আল্লাহ’’। আর সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘‘শান্তি’’, আর তাদের দু‘আর সর্বশেষ কথা হবে ‘‘সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’’। (ইউনুস -১০)। ‘‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না উত্তম পরকালের এই ঘর!’’(রাদ ২৪)। যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।(ইব্রাহীমণ্ড২৩)। তাদের অন্তর থেকে আমি বিদ্বেষ দূরীভূত করব, তারা ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসনে মুখোমুখী সমাসীন হবে। (হিজর -৪৭)। কোন ক্লান্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে না, আর সেখান থেকে তারা কখনও বহিষ্কৃতও হবে না। (হিজর -৪৮)। ফেরেশতা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই ব’লে যে, ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে ‘আমল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (নাহল -৩২)। সেখানে তারা শান্তির সম্ভাষণ ছাড়া কোন অপবাক্য শুনবে না। আর সকাল-সন্ধ্যা সেখানে তাদের জন্য থাকবে জীবন ধারণের উপকরণ।(মরইয়াম - ৬২)। যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন। সেখানে ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না, ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না। (ফাতির -৩৫)। যাতে তারা তার ফল খেতে পারে- যা তারা তাদের হাত দিয়ে বানায়নি। তাহলে কেন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না? (ইয়াসিন ৩৫)। সে দিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল হয়ে থাকবে। (ইয়াসিন - ৫৫)। তাদের জন্য সেখানে থাকবে ফলমূল আর তাদের জন্য থাকবে তারা যা কিছু পেতে চাইবে।(ইয়াসিন -৫৭) দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদেরকে ‘সালাম’ বলে সম্ভাষণ করা হবে।(ইয়াসিন -৫৮)। ফলমূল; আর তারা হবে সম্মানিত। (সাফফাত -৪২)। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা সেখানে এসে পৌঁছবে, জান্নাতের দরজাগুলো (পূর্ব থেকেই) উন্মুক্ত (দেখতে পাবে)। জান্নাতের দ্বার রক্ষীরা বলবে- তোমাদের উপর শান্তি (বর্ষিত হোক), চমৎকার কাজ করেছ তোমরা, কাজেই চিরকালের জন্য এতে প্রবেশ কর। (যুমার -৭৩)। তুমি ফেরেশতাদেরকে ‘আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের মাহাত্ম্য ঘোষণা ও প্রশংসা করতে দেখতে পাবে। মানুষের মাঝে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে বিচার-ফয়সালা করা হবে। আর ঘোষণা দেয়া হবে যে, যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য।(যুমার -৭৫)। যালিমদেরকে তুমি তাদের কৃতকর্মের কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পাবে। তাদের কর্মের শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর পতিত হবে। আর যারা ঈমান এনেছে আর সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতের বাগিচায় অবস্থান করবে। তারা যা ইচ্ছে করবে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট তা-ই আছে। ওটাই অতি বড় অনুগ্রহ। (আশ শুরা ২২)। তোমাদের জন্য সেখানে আছে প্রচুর ফল যাত্থেকে তোমরা খাবে। (যুখরুফ -৭৩)। নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, (দুখান ৫১)। সেখানে তারা পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে নানান ফলমূল আনতে বলবে। (দুখান ৫৫)। সেখানে তারা মৃত্যু আস্বাদন করবে না (সেই) প্রথম মৃত্যুর পর, আর তিনি তাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। (দুখান ৫৬)। বেহেস্তের আঙ্গুর ফল : আসমা বিনত আবূ বাকর (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের সালাত) আদায় করলেন। তিনি সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর রুকূ‘তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর আবা রুকূ‘তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘তে থাকলেন। অতঃপর উঠলেন, পরে সাজদাহ্য় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্য় রইলেন। আবার সাজদাহ্য় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্য় থাকলেন। অতঃপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকূ‘তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রকূ‘তে থাকলেন। অতঃপর রুকূ‘ হতে উঠে আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আবার রুকূ‘তে থাকলেন। অতঃপর রুকূ‘ হতে উঠে আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আবার রুকূ‘তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর রুকূ‘ হতে উঠে সাজদাহ্য় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্য় থাকলেন। অতঃপর উঠে সাজদাহ্য় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্য় থাকলেন। অতঃপর সালাত শেষ করে ফিরে বললেনঃ জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তাহলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রী লোককে দেখতে পেলাম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, একটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ স্ত্রী লোকটির এমন অবস্থা কেন? মালাকগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে। নাফি‘ (রহ.) বলেন, আমার মনে হয়, ইবনু আবূ মুলায়কাহ (রাযি.) বর্ণনা করেছিলেন, যাতে সে যমীনের পোকা মাকড় খেতে পারে। (বুখারী শরীফ) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৭০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৯)। সর্বশেষ বেহেস্তে প্রবেশকারী : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি ক্বিয়ামাতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহ্কে তেমনিভাবে দেখতে পাবে।

কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধুমাত্র উম্মাহ্, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেনঃ ‘‘আমি তোমাদের রব।’’ তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের আগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘‘আমি তোমাদের রব।’’ তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতু স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবেঃ (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) হে আল্লাহ্! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন।

আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মতো। তোমরা কি সা‘দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সা‘দান* কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের ‘আমাল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে ‘আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের হতে যাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে মালাইকাহ্কে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করতো, তাদের যেন জাহান্নাম হতে বের করে আনা হয়। মালাইকাহ তাদের বের করে আনবেন এবং সাজদাহর চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সাজদাহর চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে। কাজেই সাজদাহর চিহ্ন ছাড়া আগুন বানী আদামের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইয্যতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ্ তা‘আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক হতে ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ্ তাৎক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে না, আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ্ হেসে দেবেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেনঃ এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-কে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেনঃ এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সা‘ঈদ (রাযি.) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ। (বুখারী শরীফ, মুসলিম ১/৮১, হাঃ ১৮২, আহমাদ ৭৭২১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬৯)

পরিশেষে ফরিয়াদ, মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে তাঁর রহমত দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুক। আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ। চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়