প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রোজা অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তির শরয়ী বিধি-বিধান
সিয়াম বা রোজা আত্মার পবিত্র ওষুধ। সংযমের সাধনা হলো, সিয়ামের সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ সংযমের মাধ্যমে মানুষ পশুত্বের ঊর্ধ্বে উঠে পরম সত্তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। প্রাত্যহিক জীবনের ধূলি জালের ঊর্ধ্বে আত্মার অনাবিল প্রশান্তি লাভের একমাত্র উপায় সাধনায় সিদ্ধিলাভ। আর সে সাধনার প্রথম সোপান হলো সিয়াম বা রোজা। নিজের ভেতর কলুষ দূরীভূত হলে, সমাজ সংসার থেকে অশান্তি দূর হবে। সমাজ থেকে পরস্পর হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ ও কলহ মুক্ত হয়ে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সম্ভবপর হবে। কিন্তু অনেকসময় আমাদের পক্ষে মূল্যবান এ রোজা রাখাটা কষ্টসাধ্য মনে হয়। এ কষ্টটা হয়তো অসুস্থতা কারণে, কখনো সফরের কারণে, কখনোবা বার্ধক্যের কারণে হয়ে থাকে। মহান রাব্বুল আলামিন এসবক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। বান্দা-বান্দির শক্তির বাইরে কোনোকিছুই আল্লাহ চাপিয়ে দেননি। সুতরাং অসুস্থ অবস্থায় একজন রোজাদারের কী কী করণীয়,তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:
চোখে ড্রপস ব্যবহার
চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা, মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। কারণ চোখে ওষুধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙার বিষয়টি ফুকাহাদের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত।
মুখে ওষুধ ব্যবহার করা
মুখের অভ্যন্তরে কোনো ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে, সেই ওষুধ যত স্বল্প পরিমাণই হোক না কেন। অতএব কেউ যদি রমজানে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু গিলে ফেলে, তাহলে তার ওপর ওই রোজার কাজা-কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
নাকে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার
নাকে ড্রপ, ওষুধ, পানি ইত্যাদি দিয়ে ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ নাক রোজা ভেঙে যাওয়ার অন্যতম রাস্তা। কেননা নাকে ড্রপ ইত্যাদি নিলে তা গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
অক্সিজেন ব্যবহার
নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভেঙে যাবে। কেননা শরীরের ভেতর ও বাইরে থেকে কোনো কিছু প্রবেশ করার যে চার নালি রয়েছে, নাক তার অন্যতম। তাই নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভেঙে যাবে।
মস্তিষ্ক অপারেশন
রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করালে রোজা ভাঙবে না, যদিও মস্তিষ্কে কোনো তরল কিংবা শক্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কেননা মস্তিষ্ক থেকে গলা পর্যন্ত সরাসরি কোনো নালিপথ নেই। তাই মস্তিষ্কে কোনো কিছু দিলে তা গলায় পৌঁছে না।
এন্ডোস্কোপি করা
এন্ডোস্কোপি বলা হয়, চিকন একটি পাইপ মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছানো। পাইপটির মাথায় বাল্বজাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটির অপর প্রান্তে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। একে এন্ডোস্কোপি বলা হয়। সাধারণত এন্ডোস্কোপিতে নল বা বাল্বের সঙ্গে কোনো মেডিসিন লাগানো থাকে না। তাই এন্ডোস্কোপি করালে রোজা ভাঙবে না। তবে যদি নল বা বাল্বে মেডিসিন লাগানো হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। তেমনিভাবে টেস্টের প্রয়োজনে কখনো পাইপের সাহায্যে ভেতরে যদি পানি ছিটানো হয়, তখনো রোজা ভেঙে যাবে।
ইনহেলার ব্যবহার
সালবিউটামল ও ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ওষুধটি মুখের ভেতরভাগে স্প্রে করা হয়। এতে যে জায়গায় শ্বাসরুদ্ধ হয় সেই জায়গাটি প্রশস্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস চলাচলে আর কষ্ট থাকে না। উল্লেখ্য, ওষুধটি যদিও স্প্রে করার সময় গ্যাসের মতো দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা দেহবিশিষ্ট তরল ওষুধ। অতএব মুখের অভ্যন্তরে স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, মুখে স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এভাবে কাজ চললে বিষয়টি অতি সহজ হয়ে যাবে। এতে শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি রোজা ভঙ্গ হবে না। অনেককে বলতে শোনা যায় যে ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তাঁদের এ উক্তিটি একেবারে হাস্যকর। কেননা কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে অতি প্রয়োজনে কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে অতি প্রয়োজনে খাওয়ার কারণে তার রোজা কি ভঙ্গ হবে না? অবশ্যই ভেঙে যাবে। সুতরাং ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও তার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে তার কাজা দিতে হবে।
ইনজেকশন নেওয়া
ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না। চাই তা গোস্তে নেওয়া হোক বা রগে। কারণ ইনজেকশনের সাহায্যে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত ওষুধ গোশত বা রগের মাধ্যমেই প্রবেশ করানো হয়ে থাকে, যা অস্বাভাবিক প্রবেশপথ, তাই এটি রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ নয়।
রক্ত দেওয়া ও নেওয়া
শরীরে রক্ত নিলে বা নিজ শরীর থেকে কাউকে রক্ত দান করলে কোনো অবস্থায়ই রোজা নষ্ট হবে না। কারণ রক্ত দেওয়ার কারণে কোনো বস্তু দেহের অভ্যন্তরে ঢোকেনি, তাই তাতে রোজা নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর রক্ত নিলে যেহেতু উক্ত রক্ত শরীরের উল্লেখযোগ্য চার নালি থেকে কোনো নালি দিয়ে প্রবেশ করানো হয় না, বরং শরীরের অন্যান্য ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। সুতরাং রোজা অবস্থায় কারো শরীরে রক্ত দান করলে বা নিজে রক্ত গ্রহণ করলে রোজা নষ্ট হবে না।
স্যালাইন নেওয়া
স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। কেননা স্যালাইন নেওয়া হয় রগে। আর রগ রোজা ভাঙার গ্রহণযোগ্য কোনো ছিদ্র বা রাস্তা নয়। তবে রোজার দুর্বলতা দূর করার উদ্দেশ্যে স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ।
প্রস্রাবের রাস্তায় ওষুধ ব্যবহার
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তা ও নারীদের লজ্জাস্থানে ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তেমনিভাবে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বা নারীদের লজ্জাস্থানে কোনো ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করালেও রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা সেখান থেকে এমন কোনো স্থানে তা পৌঁছে না, যেখানে পৌঁছলে রোজা ভেঙে যায়। বরং মূত্রনালি বা জরায়ু তথা গর্ভাশয়ে পৌঁছে মাত্র। আর মূত্রনালি বা গর্ভাশয় রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য খালি জায়গা নয়। তাই রোজা নষ্ট হবে না।
ঢুস ব্যবহার
ঢুস নিলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে। আর মলদ্বার রোজা ভাঙার রাস্তা ও পথ।
এনজিওগ্রাম করা
এনজিওগ্রাম করালে রোজা নষ্ট হবে না। এনজিওগ্রাম বলা হয় হার্টের রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে ঊরুর গোড়ার দিকে কেটে একটি বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে (যা হার্ট পর্যন্ত পৌঁছে) ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করাকে। ওই ক্যাথেটারে কোনো মেডিসিন লাগানো থাকলেও যেহেতু তা রোজা ভঙ্গের কোনো গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য স্থানে পৌঁছায় না, তাই তার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না।
নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার
নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। এটি অ্যারোসলজাতীয় একটি ওষুধ, যা হার্টের রোগীদের এভাবে ব্যবহার করানো হয় যে দু-তিন ফোঁটা ওষুধ জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। এতে সেই ওষুধ যদিও শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়, তার পরও ওষুধের কিছু অংশ গলায় পৌঁছে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাতে রোজা ভেঙে যাবে। আর এর মধ্যেই রয়েছে সতর্কতা। তবে যদি ওষুধটি ব্যবহারের পর না গিলে থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। কেননা শুধু শিরার মাধ্যমে কিছু ঢুকলে রোজা ভাঙে না।
ইনসুলিন ব্যবহার
রোজা অবস্থায় ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিন নিলে রোজা নষ্ট হবে না। কারণ ইনসুলিন রোজা ভাঙার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য কোনো খালি স্থানেও পৌঁছে না।
প্রক্টোস্কোপি করা
প্রক্টোস্কোপি করালে রোজা ভেঙে যাবে। পাইলস, ফিশার, ফিস্টুলা, অর্শ, বুটি, হারিশ ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোস্কোপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। যদিও নলটি পুরোপুরি ভেতরে ঢোকে না, কিন্তু যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিনজাতীয় পিচ্ছিল কোনো বস্তু ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারদের মত অনুসারে, যদিও সেই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে চিমটে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না, আর থাকলেও তা পরবর্তী সময় বেরিয়ে আসে, শরীর তা চোষে না, তা ছাড়া সেই বস্তুটি ভেজা হওয়ার কারণে এবং কিছু সময় ভেতরে থাকার দরুন রোজা ভেঙে যাবে। আর এর মধ্যেই রয়েছে সতর্কতা।
ডিঅ্যান্ডসি করা
ডিঅ্যান্ডসি করালে রোজা ভেঙে যাবে। গর্ভধারণের আট সপ্তাহ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ডিলেটরের মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চা বের করে নিয়ে আসাকে সংক্ষেপে ডিঅ্যান্ডসি বলে। যেহেতু গর্ভধারণের দুই মাসের মধ্যে সাধারণত সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে সৃষ্টি হয় না। কেননা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার জন্য কমপক্ষে গর্ভধারণের পর থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে হবে। এমতাবস্থায় কোনো ব্যক্তি যদি অসুস্থতার কারণে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যথার কারণে গর্ভপাত করা হয়, অতঃপর যদি রক্তস্রাব হয়, তাহলে তা নিফাস (সন্তান প্রসবের পর অব্যাহত নির্গত রক্ত) হিসেবে গণ্য হবে না। বরং ওই স্রাব যদি তিন দিন বা ততোধিক স্থায়ী হয়, তখন তা হায়েজ (ঋতুস্রাব) হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তিন দিন থেকে কম হয়, তখন তা ইস্তেহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং যদি হায়েজ হয়ে থাকে, তখন রোজা সহিহ হবে না। আর যদি ইস্তিহাজা হয়, তখন তার রোজা নষ্ট হবে না, বরং শুদ্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং এভাবে গর্ভপাতের পর সঙ্গে সঙ্গে রোজা নষ্ট হবে না, বরং তাকে রোজা রাখতে হবে।
ল্যাপারোস্কোপি বায়োপসি
পেট ছিদ্র করে শিকজাতীয় একটি মেশিন ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের কোনো অংশ, গোশত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য বের করে আনাকে ল্যাপারোস্কোপি বলে। এমন করলে এতে রোজা নষ্ট হবে না। কারণ রোজা ভাঙার জন্য রোজা ভঙ্গকারী বস্তু শরীরের ভেতরে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করা ও প্রবেশের পর সঙ্গে সঙ্গে বের না হয়ে ভেতরে ততক্ষণ সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকা আবশ্যক, যতক্ষণ ভেতরে থাকলে এই বস্তু বা তার অংশবিশেষ হজম হয়ে যায়, এখানে এর কোনোটি পাওয়া যায়নি। তবে শিকের মধ্যে কোনো ধরনের মেডিসিন লাগানো থাকলে এবং তা মলদ্বার পর্যন্ত নাড়িভুঁড়ির যেকোনো জায়গায় পৌঁছলে রোজা ভেঙে যাবে। রোগের কারণে ডাক্তার যদি বলে, রোজা রাখলে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বা সুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে, তাহলে রোজা না রাখলে সমস্যা নাই। কিন্তু সামান্য অসুখ, যেমন—মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি, অনুরূপ কোনো সাধারণ রোগ-বালাইয়ের কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়।
দুশ্রেণির ব্যক্তির জন্য রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া প্রদানের সুযোগ আছে। ১.দুর্বল বৃদ্ধ। বার্ধক্য যাকে এতটাই দুর্বল করেছে যে, কোনোভাবেই রোজা রাখা তার শরীরের পক্ষে সম্ভব না এবং ভবিষ্যতে রোজা রাখতে সক্ষম হওয়ারও কোনো আশা তার ব্যাপারে নেই। ২. অসুস্থ। রোগের দরুণ যার শরীরে রোজা রাখার সামর্থ্য একেবারেই নেই এবং ভবিষ্যতে রোজা রাখার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
এ দু’শ্রেণির মানুষ প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াবে একেই রোজার ফিদিয়া বলে। প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে সদকাতুল ফিতরের মূল্য পরিমিাণ অর্থ দরিদ্রদের দান করলেও ফিদিয়া আদায় হবে। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম কিশমিশ, পনির, খেজুর, যব অথবা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম। সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ হলো রান্না করা খাদ্যসামগ্রী পেট ভরে খাওয়ানো। তবে সহজের জন্য অর্থ দিতে চাইলে তাহলে উপরোক্ত ৫টি দ্রব্যের মধ্যে যে দ্রব্যের মূল্য ফিদিয়া প্রদানকারীর নিজের খাবার খরচের মানের সাথে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ সে দ্রব্যের বাজার মূল্য দিয়ে ফিদিয়া প্রদান করবে। এক রোজার ফিদিয়া এক দরিদ্রকে দেওয়াই উত্তম। তবে এক রোজার ফিদিয়া একাধিক দরিদ্রকে অথবা কয়েক রোজার ফিদিয়া এক দরিদ্রকে দেওয়াও জায়েজ আছে।
এ ফিদিয়াকে অনেকেই বদলি রোজা রাখানো বলে থাকে। এটা ভুল। রোজা একটি দৈহিক ইবাদত। এটা আরেক জনকে দিয়ে বদলি করানো যায় না। একজনের পরিবর্তে আরেক জন রোজা রাখলে অথবা পারিশ্রমিক দিয়ে অন্য মানুষের দ্বারা রোজা রাখালে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও যথেষ্ট হবে না। ফিদিয়ার বিধানটা হলো রোজা রাখার পরিবর্তে সম্পদ দান করা। এখন ফিদিয়াগ্রহীতা রোজা রাখতে পারে আবার না-ও রাখতে পারে। সে যদি রোজা রাখেও এতে গ্রহীতার নিজের রোজাই আদায় হবে ফিদিয়াদাতার রোজা আদায় হবে না। ফিদিয়াদাতা শুধুমাত্র ফিদিয়া প্রদানের দ্বারাই রোজার বিধান থেকে অব্যহতি পাবে।
মনে রাখতে হবে, ফিদিয়া প্রদানের পর যদি কোনোদিন উক্ত বৃদ্ধ বা রোগী রোজা রাখতে সক্ষম হয়ে যায়, রোজা রাখার দৈহিক সামর্থ্য ফিরে পায় তাহলে তার অতীতের ফিদিয়া প্রদান বাতিল হয়ে যাবে। তাকে কাজা রোজা রাখতেই হবে। অতীতের প্রদত্ত ফিদিয়ার জন্য সে শুধু দানের সওয়াব পাবে। উপরোক্ত দু’শ্রেণি ব্যতীত আর কারোর জন্য ফিদিয়ার বিধান প্রযোজ্য হবে না। মুসাফির, গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী রমজানে রোজা রাখতে না পারলে পরে কাজা করবে। আর যদি এ সমস্যা দূর হওয়ার আগেই মারা যায় তাহলে কোন দায় তাদের দায়িত্বে থাকবে না।
আর কেউ যদি রমজান মাসে ইচ্ছা করে রোজা ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে তার জন্য কাফফারা ওয়াজিব হবে। রমজান মাসের রোজার কাফফারা হলো, একটি রোজার জন্য কোনোপ্রকার বিরতি ছাড়া ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা। এখন যদি কারোর কাফফারার রোজা আদায়ের শক্তি না থাকে, তাহলে একটি ফরজ রোজার জন্য ৬০ জন গরীব-মিসকিনকে দুবেলা পেটভরে খাওয়াবে। অথবা একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুবেলা খাওয়াবে কিংবা প্রত্যেক মিসকিনকে প্রত্যহ এক সদকায় ফিতরের পরিমাণ আটা বা গম দিবে কিংবা আটা বা গমের দাম দিবে। একই রমজান মাসে একাধিক রোজা ভেঙ্গে থাকলে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্যামপুর কদমতলী রাজউক মাদ্রাসা ঢাকা।