রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবমাননা : ইসলামি বিধান
মুফতি মাওলানা মোঃ জাফর আলী

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আমাদের নবী রহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলে কারীম (সাঃ)। সকল নবী-রাসূল আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে দ্বীন প্রচারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাগুত বা শয়তানের পথ হতে আল্লাহর পথে মানুষকে আনয়নের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের ত্যাগ-তীতিক্ষার বিনিময় প্রদান করা কোন উম্মতের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। তাই উম্মতের জন্য আবশ্যক হলো, তাঁদের প্রতি যথাযথ ইজ্জত-সম্মান বজায় রেখে কথা বলা এবং তাঁদের সম্মানহানি বা অবমাননাকর বিষয় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা।

নবী-রাসূলসহ সকলকে ইজ্জতের অধিকারী করেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। কাউকে সম্মানিত অথবা অপমানিত করা তাঁর ইচ্ছাধীন। যেমন, কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, “যাকে ইচ্ছা আপনি ইজ্জত দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা হীন (অপমানিত) করেন।” (সূরা আলে ইমরান:২৬) সুতরাং কটূক্তি বা লেখার মাধ্যমে কারো ইজ্জতহানির চেষ্টা করা মানে মহান রবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

রাসূলে কারীম (সাঃ) কে আল্লাহ তায়ালা অনন্য সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। যেমন, কুরআনুল কারীমে ঘোষিত হয়েছে, “আর আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ:৪) আমাদের আকা ও মাওলা রাসূলে কারীম (সাঃ) কে সম্মান করার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের পাশাপাশি তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে শক্তি যোগাও আর তাঁকে সম্মান কর।” (সূরা আল-ফাতহ:৯)

কোন কটূ কথা বা কাজের দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবমাননা করা স্পষ্ট কুফরি। তাঁর অবমাননা বা সম্মানহানিকে আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহ ও রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তো তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।” (সূরা আহযাব: ৫৭)

কোন নবী-রাসূলকে কটূক্তি করা অথবা গালি দেওয়া অত্যন্ত জঘন্য পাপের কাজ। ইসলামি আইনে তার শাস্তি হলো, তাকে হত্যা করতে হবে। হাদীস শরীফে তাকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন, হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন নবীকে গালিগালাজ করে, তাকে তোমরা হত্যা কর। আর যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয়, তোমরা তাকে প্রহার কর।” (জামিউল আহাদীস, হাদীস ন. ২২৩৬৬; আশ-শিফা, খ. ২, পৃ. ১৭২)

অপর একটি বিবরণে এসেছে, এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) কে গালি দিত। ফলে তিনি ঘোষণা দিলেন, “আমার শত্রুর বিরুদ্ধে (তাকে হত্যা করতে) কে সক্ষম?” অতঃপর খালেদ (রা.) বললেন, “আমি সক্ষম।” নবীজি তাঁকে প্রেরণ করলেন। তাই তিনি তাকে (শত্রুকে) হত্যা করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবদুর রাযযাক, হাদীস ন. ৯৪৭৭)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবমাননার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ইসলামি আইনে বিচার করতে হবে। উলামায়ে কিরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে গালিগালাজ ও তাঁর শান-মান হ্রাসকারী কাফের এবং তার উপর আল্লাহর শাস্তির হুঁশিয়ারি কার্যকরী। উম্মতের নিকট তার হুকুম হত্যা। আর যে ব্যক্তি তার কুফরি ও শাস্তির ব্যাপারে সন্দেহ করবে, সে কাফের হবে।(আশ-শিফা, খ. ২, পৃ. ১৬৮)

কিছু কিছু দেশে রাসূলে কারীম (সাঃ) কে নিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নবীজিকে নিয়ে কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন, প্রদর্শনসহ তাঁর বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। মু‘মিন হৃদয়কে আঘাতের মাধ্যমে বারবার ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে বয়কট করেছি, সীমাহীন অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে তারা পতিত হয়েছে; লাঞ্ছনা-বঞ্ছনাসহ তাদের মুখে চুন কালি পড়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী অনুযায়ী দুনিয়াবি শাস্তি তাদের জন্য কার্যকর হয়ে গেছে, পরকালীন শাস্তি অবশ্যই তারা ভোগ করবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মিডিয়ার অপব্যবহার করে অনেক নাস্তিক ব্লগারের পাশাপাশি মুসলমান নামধারি কিছু ব্লগার প্রিয় নবী (সাঃ)-এর শান-মানের খেলাফ কথা-বার্তা বলে বেড়াচ্ছে। আশঙ্কাজনক হারে তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা সময়ের অন্যতম দাবি।

প্রিয় নবী (সাঃ)-এর শান-মান ক্ষুণ্ণ করে বারবার মুসলমানদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। সম্প্রতি জনৈক ব্লগার প্রিয় নবী (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তি করেছে, তার এ হীন কর্ম-কাণ্ডের কারণে আজও মু‘মিন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে; এর যথাযথ প্রতিকার করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবমাননায় যদি মু‘মিন হৃদয় না কাঁদে, তবে বুঝতে হবে সে হৃদয়ে মুনাফিকি রয়েছে। কারণ তাঁকে ভালোবাসার মধ্যেই ঈমান নিহিত রয়েছে; মু‘মিন পরিচয় দেওয়ার জন্য তাঁকে ভালোবাসার বিকল্প নেই। সুতরাং তাঁর সম্মানহানি হয় এমন বিষয়ে অবশ্যই সোচ্চার হয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে যথাসাধ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি তুলতে হবে। এর বিপরীতে নিরবে-নিভৃতে তাঁর বিরুদ্ধে অপমান সহ্য করার দ্বারা মূলত নিজের মুনাফিকি জাহির করা হবে। কবির ভাষায়,

রাসূলের অপমানে যদি কাঁদে না তোর মন,

মুসলিম নয় মুনাফিক তুই রাসূলের দুশমন।

প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। এ দেশের সুশৃঙ্খল পরিবেশকে অশান্ত করার হীন প্রয়াসে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনের শাসন কার্যকর করা দরকার। সরকারের প্রতি সকল মুসলমানের প্রাণের দাবি, জাতীয় সংসদে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগের আইন পাস করুন। দ্রুততম সময়ে আইন বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

লেখক: আরবি প্রভাষক, রামপুর আদর্শ আলিম মাদরাসা, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়