রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

বাংলা নববর্ষ : ভাবুক মনের অতীত মূল্যায়ন ও আগামীর সংকল্প
অনলাইন ডেস্ক

ভোরের সূর্য়োদয়ে বর্ষপরিক্রমায় শুরু হলো নতুন বছর (১৪৩০ বঙ্গাব্দ)। সময়ের পালাবদলে জীবনের সময়-সম্পদ থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দোলাচলে কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর (১৪২৯ বঙ্গাব্দ)। স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয় যাদের উপর হয়েছে, বছর শেষ হতে হতে তাদের অনেকের সময় ফুরিয়ে যাবে! ১৪৩১-এর সূর্যোদয় হয়তো অনেকের দেখার সুযোগ হবে না। সত্য কী অমোঘ! ভুলে থাকা যায়, কিন্তু অতিক্রম করা যায় না। যাহোক, আজ নতুন এ বর্ষে সংক্ষেপে জেনে নেই বাংলা নববর্ষের ইতিহাস, একজন চিন্তাশীল-ভাবুক মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে।

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস :

পুরানোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুনকে স্বাগত জানানোর যে রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে তা-ই নববর্ষ। আমাদের দেশে সাধারণত বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি এ তিনটি বর্ষের প্রচলন রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরি সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের ওপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। এ কারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতু নির্ভর। এজন্য ভারতে মোগল স¤্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

স¤্রাট আকবর তাঁর দরবারে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে স¤্রাট আকবর এ হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি, তাঁর সিংহাসনে আরোহনের ঊনত্রিশ বছর পূর্ব থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরে বাংলা সনের যাত্রা শুরু হয়।

তাহলে বাংলা সন মূলত হিজরি সন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হিজরত থেকেই এ পঞ্জিকার শুরু। ১৪৩০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হিজরতের পর ১৪৩০ বৎসর। ৯৬২ চান্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৬৮ বৎসর সৌর বৎসর। সৌর বৎসর চান্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন বেশি এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চান্দ্র বৎসর এক বৎসর বেড়ে যায়। এজন্য ১৪৪৪ হিজরি সাল মোতাবেক বাংলা ১৪২৯-৩০ সাল বলা হয়।

এক সময় বাংলা বর্ষপঞ্জি এদেশের মানুষের জীবনের অংশ ছিল। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও কর্ম এ পঞ্জিকা অনুসারেই চলতো। এজন্য পহেলা বৈশাখে হালখাতা বা অনুরূপ কিছু আনন্দ বা অনুষ্ঠান ছিল। মোগল সময় থেকেই ১লা বৈশাখে বা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে এধরনের অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন ও আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে হালখাতা করতেন। কিন্তু বর্তমানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন কিছু কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে যা কখনই পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালিরা করেন নি এবং যা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে প্রচণ্ডভাবে সাংঘর্ষিক। পহেলা বৈশাখের নামে বা নববর্ষ উদযাপনের নামে যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদেরকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও এদেশের মানুষেরা যা জানতো না এখন নববর্ষের নামে তা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানানো হচ্ছে!

বর্তমানে আমাদের জীবনের কোথাও বঙ্গাব্দের কোন প্রভাব নেই। কাগজে কলমে যাই লেখা হোক, প্রকৃতপক্ষে আমরা নির্ভর করছি খ্রিস্টিয় পঞ্জিকার উপর। যে বাংলা বর্ষপঞ্জি আমরা বছরের ৩৬৪ দিন ভুলে থাকি, সে বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনে আমরা সবাই বাঙালি সাজার চেষ্টা করে এ নিয়ে ব্যাপক হইচই করি। আর এ সুযোগে দেশি-বিদেশী বেনিয়াগণ ও আধিপত্যবাদীগণ তাদের ব্যবসা বা আধিপত্য প্রসারের জন্য এ দিনটিকে কেন্দ্র করে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার প্রচার করে।

পাশ্চাত্য সভ্যতার অনেক ভালো দিক আছে। কর্মস্পৃহা, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি অনেক গুণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। পাশাপাশি তাদের কিছু কর্ম আছে যা তাদের সভ্যতার ভালো দিকগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ দোষগুলোর অন্যতম হলো মাদকতা ও অশ্লীলতা। আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা পাশ্চাত্যের কোনো ভালো গুণ আমাদের সমাজে প্রসার করতে পারিনি বা চাইনি। তবে তাদের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও মাদকতার ধ্বংসাত্মক দিকগুলো আমরা খুব আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতে ও প্রসার করতে চাচ্ছি। এজন্য খ্রিস্টিয় ক্যালেন্ডারের শেষ দিনে ও প্রথম দিনে থার্টিফাস্ট নাইট ও নিউ ইয়ারস ডে বা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের বেহায়াপনার শেষ থাকে না।

আমাদের দেশজ সংস্কৃতির অনেক ভালো দিক আছে। সামাজিক শিষ্টাচার, সৌহার্দ্য, জনকল্যাণ, মানবপ্রেম ইত্যাদি সকল মূল্যবোধ আমরা সমাজ থেকে তুলে দিচ্ছি। পক্ষান্তরে দেশীয় সংস্কৃতির নামে অশ্লীলতার প্রসার ঘটাতে চাচ্ছি।

বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদকতা ও অপরাধ একসূত্রে বাঁধা। যুবক-যবতীদেরকে অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন, অথচ তারা অশ্লীলতা, ব্যভিচার, এইডস, মাদকতা ও অপরাধের মধ্যে যাবে না, এরূপ চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য অপরাধের সাথে অশ্লীলতার পার্থক্য হলো কোনো একটি উপলক্ষ্যে একবার এর মধ্যে নিপতিত হলে সাধারণভাবে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরা আর এর মধ্য থেকে বের হতে পারে না। বরং ক্রমান্বয়ে আরো বেশি পাপ ও অপরাধের মধ্যে নিপতিত হতে থাকে। কাজেই নিজে এবং নিজের সন্তান ও পরিজনকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর (সূরা তাহরীমণ্ড৬)’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে (সহীহ বুখারী)।

পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোন উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদেরকে বেপর্দা ও বেহায়াপনার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাদেরকে বোঝাতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একজন মুসলিম মসজিদে নামাজ আদায় করেন, আর তার ছেলেমেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। এতে করে ছেলে-মেয়ের পাপের জন্য তার আমলনামায় গুনাহ্ জমা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো যে ব্যক্তি তার স্ত্রী এবং সান্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে ‘দাইউস’ বলা হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বার বার বলেছেন যে, দাইউস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

ব্যবসায়িক, সামাজিক বা অন্য কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম ১লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়পনার পথ খুলে দেয়ার জন্য মিছিল, মেলা ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেন; ইহা আমাদের মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত আফসোস ও পরিতাপের বিষয়! আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যারা চায় যে মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আর আল্লাহ জানেন তোমরা জান না (সূরা নূর: ১৯)’। সুতরাং আমাদেরকে সাবধান ও সতর্ক হতে হবে। কখন কিভাবে আমাদের ও আমাদের পরিবারের জীবনে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নেমে আসবে তা আমরা বুঝতেও পারবো না।

যাইহোক, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে আজ আমরা উপনীত বাংলা ১৪৩০ বঙ্গাব্দে। বিদায়ী বছরের হতাশা ও বঞ্চনাকে পেছনে ফেলে ভালো কিছু প্রাপ্তির প্রত্যয় নিয়ে আমরা বরণ করে নেব নতুন এ বছরকে।

নতুন বছরে ভাবুক মনের অতীত মূল্যায়ন ও আগামীর সংকল্প :

সময়ের পালাবদলে পুরানো একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আগমন করেছে নতুন আরেকটি বছর (১৪৩০ বঙ্গাব্দ)। নতুন বছর ঘিরে নানা জনের নানা ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে একজন চিন্তাশীল ভাবুক মানুষের ভাবনা হলো, চলে যাওয়া বছরটি শুধু একাই যায়নি, সাথে করে নিয়ে গেছে অনেক কিছুই। যা আর কখনো এ পৃথিবীর আলো-বাতাসে ফিরে আসবে না। ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয় যাদের ওপর হয়েছে, তাদের অনেকেই আজকের সূর্যোদয় উপভোগের সুযোগ পায়নি। আবার আজকের সূর্যোদয় উপভোগকারী অনেকেই হয়তো আগামীর সূর্যোদয় দেখার সুযোগ পাবে না। তাই রাত-দিনের গমনাগমন, সকাল-দুপুর-বিকেলের পরিবর্তন, সপ্তাহ-মাস-বছরের এই চক্রাকার আবর্তন; এসব কিছুই একজন মানুষকে বারবার বলে যাচ্ছে তার বেলা ফুরোবার কথা। আমাদের দেহ-মনের পরিবর্তন, আমাদের প্রিয়জনদের চলে যাওয়াও আমাদেরকে বার্তা দিচ্ছে নিজেদের বেলা ফুরোবার কথা।

তাই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে একজন চিন্তাশীল ভাবুক মু’মিনের মানসপটে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, একটি বছর তো আমি শেষ করেছি; কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা আমাকে এ পৃথিবীতে পাঠালেন যেমনটি তিনি কুরআনে বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার-ই ইবাদত করবে।’ (সূরা জারিয়াত-৫৬) সে পথে আমি কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য জান্নাতের দিকে কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছি? এর জন্য কতটুকু পাথেয় সংগ্রহ করেছি? নাকি এখনো উদাসীনতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি? এজন্য একজন ভাবুক মু’মিনের নতুন বছর আগমনের এ মুহূর্তটি উৎসবের নয়, ভাবনা ও হিসাব মেলানোর সময়। সময়-সম্পদের যে অংশ ব্যয় হয়ে গেল তা কি প্রয়োজনীয় ও লাভজনক ক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে না অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর খাতে? জীবনের মূলধন (সময়) খরচ করে জীবনকে আমরা কতটুকু সমৃদ্ধ করেছি?

বস্তুত একটি বছরের বিদায় ও আগমনে প্রত্যেক বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য হলো, নিজের অতীত জীবন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা তথা আত্মসমালোচনা ও অনুশোচনার মাধ্যমে জীবনের হিসাব-নিকাশ পর্যালোচনা করা। জীবনের হালখাতা করা। যে নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন, ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, সে আগামীকালের (পরকালের) জন্য কি সঞ্চয় করল। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ অবহিত। (সূরা হাশর-১৮)

তাই দিবস ও রাত্রির আগমন ও নির্গমনে জীবনের হিসাব মিলানোই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিচক্ষণ ওই ব্যক্তি যে নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং মৃত্যুর পরের জন্য কর্মব্যস্ত থাকে। আর অক্ষম ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুগামী করে আর আল্লাহর নিকট অমূলক বাসনা পোষণ করে।’ হযরত ওমর (রাঃ) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দানের সময় শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে বিবেকবান মানুষ! আমি তোমাদের বিবেককে বলতে চাই- ‘হিসাব চাওয়ার পূর্বেই নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার পূর্বেই নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ (সুনানে তিরমিযি)

তাই একটি বছরের বিদায় ও আরেকটি নতুন বছরের আগমনে মধ্যে মু’মিনের জন্য রয়েছে চিন্তার খোরাক। মু’মিন ভাববে- এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একদিন নিভে যাবে আমার জীবনপ্রদীপ। আমি যদি সময় নামক সবচেয়ে দামি, মূল্যবান ও সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদকে উদাসীনতায়, মনোবৃত্তিপূরণ বা মিথ্যা কামনায় কেটে ফেলি তাহলে আমি হবো ক্ষতিগ্রস্ততায় নিমজ্জিত। এজন্য নতুন বছরে একজন মু’মিনের কর্তব্য হলো : গত বছরের ভুলত্রুটি সংশোধন করে সেগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন বছরে নির্ভুল ও পাপমুক্ত জীবন-যাপনের জন্য প্রত্যয়ী হওয়া, মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া, তাঁর দিকে সমর্পিত হওয়া এবং তাকওয়ার নতুন লেবাসে নিজেকে সুসজ্জিত করা।

আসুন মাহে রমাদানের এ পবিত্র সময়ে নতুন বছরের জন্য জীবনকে নতুন করে সাজাই। হৃদয়ের বাগানে যত পাপ-পঙ্কিলতা, হিংসা, অহঙ্কার, স্বার্থপরতা, লোভ ইত্যাদির যে আগাছা জন্মেছে তা বিদায় দিয়ে হৃদয়ের বাগানকে পরিষ্কার করি। একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করি, আল্লাহর ভালোবাসা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর ভালোবাসা, সকল মু’মিনের ভালোবাসা, সকল মানুষের ভালোবাসা এবং সকল সৃষ্টির ভালোবাসা দিয়ে হৃদয়কে সুশোভিত করি। শহীদ হাসান আল-বান্না (রহঃ)-এর দৃষ্টিতে নতুন বছর ও আগামীর সংকল্প এরূপই- নতুন বছরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে বললাম, সামনের অদেখা-অস্পষ্ট দিনগুলোকে আলেকিত করার জন্য আমার বাতির প্রয়োজন। সে উত্তর দিল, তোমার হাতটি আল্লাহর কুদরতি হাতে সঁপে দাও; তিনিই তোমাকে পরম গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন।

লেখক : প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা), বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়