শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুরে বন্যায় ফসল ও মাছের ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥
চাঁদপুরে বন্যায় ফসল ও মাছের ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

চাঁদপুরের শাহরাস্তি, কচুয়া ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ফসল ও গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৬২ ইউনিয়নে ১৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে এবং শাহরাস্তিতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার রোপা আউশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাইমচরে ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষি কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।

গত কয়েক দিনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি বছর জেলায় রোপা আমনের আবাদ ব্যাহত হবে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে শাহরাস্তি উপজেলার ৩৪১ হেক্টর ফসলি জমি।

শাহরাস্তির রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উনকিলা গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, ‘আমার ১ একর জমিতে আউশের আবাদ ছিল। ধান কাটার সময় হয়ে এসেছে, কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেছে। বসতঘর ও রাস্তায় পানি। আমাদের এখন কী হবে বলতে পারছি না।’

শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, ‘গত প্রায় ১০ দিনে উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছি। রোপা আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।’

এদিকে হাইমচর উপজেলার সেচ প্রকল্প এলাকায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১০৭২ জন। উত্তর আলগী ইউনিয়নের পানচাষি শাহজাহান ও শহীদুল্লাহ ঠাহরদার বলেন, ‘আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের বরজ শেষ হয়ে গেছে। পানের গোড়া পচে গেছে। পানি চলে গেলেও আর পান গাছ বাঁচবে না। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।’

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, ‘উপজেলায় ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ ছিল। অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পান চাষের সঙ্গে জড়িত ১ হাজার ৭২ জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’

বানের পানিতে শাহরাস্তি উপজেলা এবং জলাবদ্ধতায় সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ পোলট্রি খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে খামারিদের সঠিক তথ্য এখনো বলা যাচ্ছে না।

শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল শামীম বলেন, ‘গবাদি পশুর বড় ধরনের কোনো খামার এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে এই এলাকায় প্রায় ১০টি খামার আছে। আমাদের মাঠকর্মীরা কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যে খামারিদের তালিকা ও ক্ষতি নির্ণয় করা হবে।’

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, ‘জেলার শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ ও সদর উপজেলায় বানের পানি ও অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় খামারিদের তথ্য এখনো আসেনি। উপজেলা থেকে তথ্য আসলে পরিসংখ্যান জানানো যাবে।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘বানের পানি ও জলাবদ্ধতায় এ বছর বহু খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মাঠ জরিপ চলমান। প্রাথমিকভাবে আমরা জেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৮০১ জন খামারির তথ্য পেয়েছি। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।’

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে চাঁদপুরে রোপা আমন আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত এবং রোপা আমন লাগানো বিলম্বিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। আমরা অন্যান্য দুর্যোগের সময় কৃষকদের যেমন তালিকা করি, এই ক্ষেত্রেও সেভাবে তালিকা করা হবে, যাতে পরবর্তী মৌসুমে এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়