প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
৩০ শতাংশ জমির ওপর নানান রকমের সবজি বাগান। গাছের ডালে দুলছে বেগুন। ডগায় ডগায় কচি লাউ আর চাল কুমড়া। থরে থরে ডাঁটা, ঢেঁড়স, পেঁপেসহ নানান সবজি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সবজিগুলোর ভারে যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়বে গাছের ডাল। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে এসব সবজি। বাজারে নিতে হয় না। বাড়িতে এসে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান কিনে। সুস্বাদু ও বিষমুক্ত হওয়ায় এ সবজির চাহিদাও অনেক। তিনি প্রতিদিনই বিক্রি করেন ১হাজার টাকার সবজি।
বলছি একজন শিক্ষকের সবজি বাগানের কথা। যিনি মহান শিক্ষকতার পাশাপাশি ধরে রেখেছেন মাটির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তবে এখনও আগলে রেখেছেন পূর্বপুরুষের পেশাকে। নিজের হাতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন। ছাত্রদের তিনি শেখান, নিজের শিকড় ভুলতে নেই, পূর্বপুরুষের পেশাকে অশ্রদ্ধা করতে নেই। মা আর দেশের মাটির চেয়ে খাঁটি কিছু নেই।
কৃষিপ্রাণ এই মানুষটির নাম মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার পশ্চিম সকদি দারোগা বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
তিনি জানান, তার দাদা, বাবা, জেঠা, চাচারা সবাই নিজ কর্মের পাশাপাশি কৃষিকাজেও জড়িত ছিলেন। তাদের কাছ থেকেই শিখেছেন, মাটিকে ভালোবাসলে মাটি তার প্রতিদান দেয়। তাই তো মাঠে কাজ করতে কোনো দ্বিধা নেই তার। বরং নিজ হাতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি অন্যের ঘরে পৌঁছাতে পারলেই যেন তার তৃপ্তি। আর এতে প্রতিদিন ১০০০ টাকার সবজি বিক্রি না করলে তার মন ভালো লাগে না। তার বাজারে যেতে হয় না। লোকেরা তার বাড়ি থেকেই নিয়ে যায় সবজি।
শিক্ষক জাকির হোসেন তালুকদার প্রতিবছরের মতো এবারও নিজ উদ্যোগে সদর উপজেলার সকদি গ্রামে পূর্ব পল্লীতে সবজি চাষ করেছেন। তিনি এবার ৩০ শতক ফসলি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকার মতো। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। পুরো জমিতে সবজি আছে এখনও। খরচের টাকা বাদে লাখ খানেক টাকা আয় হওয়ার আশা তার।
সবজি চাষে সঙ্গ দেন ওই এলাকার কৃষক-শ্রমিক। সবজিতে নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবার বাড়িতে এই সবজি পাঠানো হয়। আবার জমিতে এসেও যে যার মতো সবজি নিয়ে যান। কোনো ধরনের রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার হয় না বলে সবজিগুলো খেতেও অনেক সুস্বাদু। তিনি বলেন, আমি ফজরের নামাজ পড়ে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং বিকেলে আসর নামাজের পর থেকে মাগরিব নামাজের আগ পর্যন্ত জমিতে সময় দেই। জমিতে কী লাগবে, কোন্ গাছের কী অবস্থা, কী করতে হবে, তা করে নেই। পরে স্কুলে চলে যাই। আবার স্কুল থেকে এসে জমিতে কাজ করি। কৃষি কাজের পাশাপাশি মৎস্য চাষ, পশুপাখি পালনেও সময় ব্যয় করি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়ন থেকে আগত সবুজ বলেন, আমি রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন এক ভ্যানচালক সবজি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে জানতে পেরে এখানে এসে দেখলাম, স্যারের বিষমুক্ত সবজি বাগান। তিনি সবজি বিক্রি করছেন। পরে কিছু টাটকা সবজি কিনলাম। দামও সস্তা, খুব সুস্বাদু হবে আশা করছি।
সবজি কিনতে আসা সোহরাব বলেন, এখানে অল্প মূল্যে বিষমুক্ত ভালো সবজি পাওয়া যায়। তাই এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ খায়রুল বাশার বলেন, চাঁদপুর সদরের বেশ ক'টি ইউনিয়নের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে মাঠে প্রান্তরে অনেক সময় ব্যয় করেন। জমির পরিচর্যার পাশাপাশি বীজতলা তৈরি, চারা উৎপাদন, রোপণের বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। তার মধ্যে শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন তালুকদারের সবজি চাষের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী। বিষমুক্ত সবজি বাগান করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তার মত আমাদের সবারই নিজ নিজ আঙ্গিনায় সবজি বাগান করা উচিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি জাকির সাহেব কৃষি কাজেও একজন আদর্শ কৃষকের পরিচয় দিয়েছেন।