প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২২, ০০:০০
সময়টা ছিলো ১৯৯৫ সাল। মে মাসে উচ্চ মাধ্যমিক থিওরি পরীক্ষার পরে প্র্যাকটিকেলের আগে হঠাৎ একদিন আমাদের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মারা গেলেন। তখন থেকে খুব ভয় হচ্ছিল প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা কেমন হবে, এক্সটার্নাল কেমন হবেন, তিনি ঠিকমতো নম্বর দিবেন কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার রুমে ঢুকে একজন সৌম্যদর্শন মাঝ বয়সী শিক্ষককে দেখলাম এক্সটার্নাল হয়ে এসেছেন। (এখন জানি তখন উনার বয়স ছিল ৩৮ বছর)।
সেই থেকে শুরু...। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরে যখন বিএসসি পাস কোর্সে ভর্তি হই। তখন দেখি উনি আমাদের চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তখন এক বছর পড়াশোনা করার পরে হঠাৎ করেই চাঁদপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান কোর্স চালু হয়। এ সময়ে কেবলমাত্র উনার নির্দেশে এবং উনার স্নেহহের আতিশয্যে এক বছর ড্রপ করে আবার সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হই। এখানে একটুখানি জানিয়ে রাখা দরকার, এই শিক্ষকের ভালো মানুষি এবং শিক্ষকসুলভ আচরণে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই তখন আমাদের বিভাগে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হয়। কেবলমাত্র স্যারের কথা ভেবে প্রথমে এই বিভাগে যখন বিএসসি সম্মান কোর্সের ইনস্পেকশন আসার কথা হচ্ছিল তখন আমরা কয়েকজন মিলে বিভাগকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি নিজেরা ধুয়ে মুছে, ঝাড়ু দিয়ে।
তারপর ইনস্পেকশন আসে, রিপোর্ট ভালো হয়, সম্মান কোর্স চালু হয়। শুরু হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নতুন পথচলা। আর এই পুরো কাজটুকু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় আন্তরিকভাবে নিজের থেকে তদারকি করেন আমাদের এই প্রাণপ্রিয় শিক্ষক। চাঁদপুরে তখন সবেমাত্র তিনি নতুন এসেছেন। তারপরেই এই সাফল্য দেখালেন। সবাইকে এটা প্রাণভরে জানাতে চাই, এতক্ষণ যে শিক্ষকের কথা বলছিলাম, তিনি আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় সর্বজন প্রিয় শিক্ষক জনাব মোঃ আসাদুল হাসনাত।
আমার স্মৃতিতে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ বলতে অথবা চাঁদপুর সরকারি কলেজ বলতে এমনকি আমার মা-বাবার পরে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অবদান আমার জীবনে বুঝাতে আমি জনাব মোঃ আসাদুল হাসনাত স্যারকেই বুঝি। কারো সম্পর্কে অনেক কিছু বলে বা অনেক সময় নিয়ে সবাইকে জানিয়ে হয়তো অনেক কিছুই বুঝানো সম্ভব হয় না। তাই আমি ছোট্ট করে শুধু এটুকু বলতে চাই- আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে আজ পর্যন্ত জীবনে আমি যা, তার সবটুকু জুড়েই আছেন জনাব মোঃ আসাদুল হাসান স্যার। আমি ধন্য ও কৃতজ্ঞ উনাকে আমার জীবনে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষাজীবন, ছাত্রত্ব, বন্ধুবান্ধব, বিভাগের ছোট ভাইবোন, সুসময়ের উদ্দাম প্রেমণ্ডভালোবাসা- এসব নিয়ে লেখা কখনো বোধহয় শেষ হবে না। সময়-সুযোগ হলে নিশ্চয়ই আরো অনেক কিছু লিখব ধীরে ধীরে। বিভাগের সব মধুর স্মৃতির পরেও আজকে কয়েকটা ছোট ভাইয়ের নাম শুধু উল্লেখ করতে চাচ্ছি, যাদেরকে এখনো খুব মিস করি। তাদের মধ্যে রয়েছে সূর্য, তাহসিন, হাসু, কামরুল, সাঈদ ...এমনি আরও অনেকে।
ছোটবোনদের নাম নাই বা নিলাম! কিন্তু এমন আরও অনেকেই আছে বুকের পুরোটা জুড়ে। সবার নাম এই ছোট্ট পরিসরে উল্লেখ করতে না পারার সীমাবদ্ধতার কারণে ক্ষমাপ্রার্থী। পরিশেষে, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সবাইকে আমাদের সকলের পক্ষ থেকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই এজন্য যে অনেক দেরীতে হলেও এমন একটা প্রাণের এবং হৃদয়ের টানের অনুষ্ঠান হচ্ছে। এই অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারো ধন্যবাদ জানাই ও অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
এস.এম. মাহবুবুল আলম টিপু : সাবেক শিক্ষার্থী,
অনার্স শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৬-১৯৯৭।