সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ০০:০০

প্রিয় ক্যাম্পাস প্রাণের বিভাগ
অনলাইন ডেস্ক

প্রিয় ক্যাম্পাস? প্রাণের বিভাগ? দুটি প্রশ্নের উত্তর এক বাক্যে বললে দাঁড়ায়- ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ’। ২০০৬ সালে কম্পিত হৃদয়ে যখন চাঁদপুর সরকারি কলেজে একাদশ শেণিতে ভর্তির জন্য প্রথমবারের মতো প্রবেশ করি তখনো জানতাম না এ কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান নামে একটি বিভাগ আছে। অবশ্য তখন তা জানলেও নিজের অনুভূতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয়তো লক্ষ করতাম না।

কিন্তু একাদশে ভর্তির পর কোনো এক অজানা-অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাথে। কলেজের মাঠ থেকে তাকালে মনে হতো এক টুকরো সবুজ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেখানে গিয়ে আমি পেতাম বিশুদ্ধ অক্সিজেন। নিতে পারতাম প্রাণ ভরে শ্বাস। ধীরে ধীরে বিভাগটি আমার হৃদয়ের বিশাল একটি জায়গা অধিগ্রহণ করে নিয়েছিল। বিভাগের সাথে আত্মিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হতে থাকলো। কেশব দার বাক্যবাণও সে বন্ধনে চিড় ধরাতে পারেনি। ২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মেডিকেল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজেই ভর্তির সিদ্ধান্ত নিই। তার একটা সত্য ও গ্রহণযোগ্য কারণও ছিলো। তা হলো, মেডিকেল কিংবা ঢাবিতে ভর্তির ন্যূনতম মার্কস (পয়েন্ট) আমার ছিলো না। যা হোক চাঁদপুর সরকারি কলেজে প্রথম পছন্দ হিসেবেই ভর্তির সুযোগ হয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে। প্রাথমিক ব্যতীত কোনো ক্লাসেই আমি কখনো প্রথম হইনি বা হওয়ার চেষ্টাও করিনি। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টের পর যখন প্রতিবেশীদের তীক্ষè, মর্মভেদী বাণীগুলো আমার বহিঃকর্ণের টিমপেনিক পর্দায় উচ্চ মাত্রায় কম্পন ধরিয়ে হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরগুলোকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলেছিলো তখন প্রথম হওয়া বা প্রথম শ্রেণি পাওয়ার নেশা আমাকে প্রবলভাবে চেপে ধরেছিলো। সেভাবে চেষ্টাও করি, কিন্তু হায়! প্রথমবর্ষের রেজাল্টের পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। গড় নম্বর ছিল ৬০-এর অনেক কম। তবে কি এবারও আমাকে রিক্ত হস্তে ঘরে ফিরে যেতে হবে! এবারও কি প্রতিবেশীদের সামনে আমি মস্তকোত্তলন করতে পারব না! তাদের সেই অসহ্য, যন্ত্রণাদায়ক উক্তিগুলো আবারো শুনতে হবে! এরকম হাজারো দুঃশ্চিন্তা যখন আমাকে চারদিক থেকে চরমভাবে গ্রাস করে জীবনে অমানিশা নিয়ে এসেছিল তখন আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে আলোর দিশারী হয়ে অণুপ্রেরণা দিয়ে আলো দেখিয়েছেন প্রফেসর ড. সুশীল কুমার নাহা স্যার। তিনি আমায় সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। স্যারের কল্যাণে পুরানো স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করেছি। ক্লাসের বাহিরেও যখনই কোনো অজানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি কখনোই নিরাশ করে ফিরিয়ে দেননি স্যার। সুশীল স্যার ছাড়াও মোঃ ইকবাল হোসেন (সহযোগী অধ্যাপক) স্যার, মোঃ মাহফুজুর রহমান খান (সহযোগী অধ্যাপক) স্যারসহ সকল শিক্ষকের কাছ থেকে শ্রেণি শিক্ষার পাশাপাশি পেয়েছি বাস্তব শিক্ষা যা আমার জীবনে পাথেয় হয়ে আছে।

তৃতীয়বর্ষে একদিন বিশেষ কারণে কলেজে আসতে পারিনি কিন্তু পরদিন বন্ধুদের কাছে শুনতে পাই কলেজে নতুন একজন শিক্ষক এসেছেন- তিনি খুব ভালো পড়ান, মজার মজার গল্প বলেন এবং তিনি এই বিভাগেরই প্রাক্তন ছাত্র। নাম? মোহাম্মদ কামরুল হাছান। এসব শুনে যতটা ভালো লেগেছিলো তার চেয়ে বেশি খারাপ লেগেছিলো কারণ ক্লাসটা আমি মিস করেছি। অপেক্ষা করছি কখন স্যারের দেখা পাব! স্যার হয়তো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তা বুঝতে পেরে আমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাননি। ক্লাস শেষে মনে হলো বন্ধুরা কমই বলেছে স্যারের সম্পর্কে। স্যারের বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন, মনোযোগ আকর্ষণের কৌশল, বুঝানোর দক্ষতা ছিলো অনন্য। তবে স্যারের যে গুণটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে সেটি হলো ‘মোটিভেশন’। আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ব্যক্তিকেও অনায়াসে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসতে পারেন তিনি। এতো এতো গুণী শিক্ষকের সান্নিধ্য অন্য কোথায়ও পেতাম বলে মনে হয় না। যা হোক ৪ বছরের ¯œাতক (সম্মান) কোর্স শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলতে পারলেও ছোট্ট করে একটু ঢেঁকুর তুলেছিলাম। কারণ ৪ বছরের গড় নম্বর ছিলো ৬২.৫৪%। স্যারদের সহযোগিতা আর নিজের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে ¯œাতকোত্তরে তা ৭৪.৮৩% নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

আমার এ লেখা পড়ে পাঠক নিশ্চয়ই এতক্ষণে কপালে বিরক্তির ঢেউ খেলানো ভাঁজ নিয়ে বলতে শুরু করেছেন, এ যেন ধান ভানতে শিবের গীত। কিন্তু তারপরও আমি বলব আমার এ গল্পের উপসংহার লিখতে এটুকু শিবের গীত আবশ্যক ছিল।

অথৈ সমুদ্রে নিমজ্জমান একজন যোদ্ধা হিসেবে আমার ভাগ্য বরাবরই সুপ্রসন্ন ছিলো। কারণ আমি পেয়েছি একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস, গুছানো ও সমৃদ্ধ বিভাগ এবং বিশাল হৃদয়ের একরাশ বন্ধু যারা সর্বদা আমাকে সহযোগিতা করেছে। আরো পেয়েছি মেধাবী, আদর্শিক, নীতিবান, সৎ, দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ। এই কলেজ থেকে, এই বিভাগ থেকে, এই বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ থেকে আমি শিখেছি সততা, শৃঙ্খলা ও বিনয়। পেয়েছি দিকনির্দেশনা। হয়েছি অনুপ্রাণিত। শুধু কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই নয় আজও স্যারদের কাছ থেকে পাই আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। তাই কৃতজ্ঞ এই কলেজের প্রতি। কৃতজ্ঞ স্যারদের প্রতি। কৃতজ্ঞ বিভাগের অফিস সহায়ক কেশব দাদাসহ সবার প্রতি। বিভাগের উদ্ভিদগুলো থেকে যে অক্সিজেন পেয়েছি, তা আজও অ্যালভিওলাইয়ে অবস্থান করে ফুসফুসকে সক্রিয় রেখেছে।

তাই এই ক্যাম্পাস আমার প্রিয় ক্যাম্পাস। এই বিভাগ আমার প্রাণের বিভাগ।

দীপক সূত্রধর : সাবেক শিক্ষার্থী, অনার্স শিক্ষাবর্ষ ২০০৮-২০০৯।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়