প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সনাতনী বিতর্ক : জানা-অজানা
বিতর্ক মানে যুক্তির খেলা। বিতর্কের নানা ফরমেট রয়েছে। বিতর্ক নিয়ে আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু কথা লেখার সাহস করছি। আমি আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রারম্ভেই স্বীকার করে নিচ্ছি। রবীন্দ্রনাথও মনে হয় তাঁর ঐকতান কবিতায় এসে জ্ঞানের দীনতা অনুভব করে লিখেছিলেন, জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে,/পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।
সনাতনী বিতর্কে দুটি দল থাকে। পক্ষ দল এবং বিপক্ষ দল। যিনি বিতর্ক পরিচালনা করেন তাকে বলা হয় সভাপতি। আবার কোনো কোনো বিতর্কে সভাপতির স্থলে মডারেটর থাকতে পারেন। একটি বিষয় থাকে যেটির পক্ষে পক্ষ দল কথা বলে অপর দিকে বিপক্ষ দল সেটির বিরোধিতা করে।
সনাতনী বিতর্কে দুটি পর্ব থাকে
১. গঠনমূলক পর্ব/মূল পর্ব। ২. যুক্তিখণ্ডন পর্ব/প্রশ্নোত্তর প্রদান পর্ব।
গঠনমূলক পর্ব : এ পর্বে প্রত্যেক বক্তা ৪ অথবা ৫ মিনিট (টেলিভিশন বিতর্কে) করে সময় পায় নিজের বক্তব্য প্রদানের জন্যে। এ পর্বে পর্যায়ক্রমে পক্ষ দলের ১ম বক্তা, বিপক্ষ দলের ১ম বক্তা, পক্ষ দলের ২য় বক্তা, বিপক্ষ দলের ২য় বক্তা, পক্ষ দলের দলপ্রধান এবং সর্বশেষ বিপক্ষ দলের দলপ্রধান তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
যুক্তিখণ্ডন পর্ব : এই পর্বে উভয় দলের দলপ্রধান ২-৩ মিনিট করে সময় পান বিপরীত দলের যুক্তিখণ্ডন করার জন্যে।
দায়িত্ব
প্রথম বক্তা : বলা হয়ে থাকে প্রভাতের উদীয়মান সূর্যের দিকে তাকালেই অনুমান করা যায় দিনটি কেমন যাবে। তাই প্রথম বক্তার বক্তব্য শুনলেই কোনো একটি দল সম্পর্কে বিচারকের ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়। পক্ষ দলের প্রথম বক্তার মূল কাজ বিতর্কের বিষয় ব্যবচ্ছেদ করা, সংজ্ঞায়ন করা। উভয় দলের প্রথম বক্তার কাজ হচ্ছে বিষয় এবং দলের অবস্থান পরিষ্কার করা। তবে বিপক্ষ দলের প্রথম বক্তার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কাজ হচ্ছে তার আগে বক্তব্য দেয়া পক্ষ দলের অবস্থানের সীমাবদ্ধতা কিঞ্চিত আলোচনা করে যাওয়া।
দ্বিতীয় বক্তা : উভয় দলের দ্বিতীয় বক্তার কাজ হচ্ছে নিজেদের দলীয় অবস্থান শক্ত করে যাওয়া। তথ্যবহুল যুক্তি প্রদান করা এবং প্রতিপক্ষ দলের অবস্থানের অসারতা প্রমাণ করা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বক্তা সামান্য প্রশ্নোত্তর এবং কিছুটা রক্ষণশীল ভূমিকা নিতে পারেন।
দলপ্রধান : দুই দলের দলপ্রধান নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে দিবেন। তারা একটি সারমর্ম তৈরি করবেন এবং তারাও প্রশ্নোত্তর করতে পারেন, তবে সেটা যেনো তার মূল বক্তব্যের সৌন্দর্য নষ্ট না করে, সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখবেন।
সর্বশেষ যুক্তিখণ্ডন পর্বে উভয় দলের দলপ্রধান যুক্তিখণ্ডন করবেন। সেক্ষেত্রে দলপ্রধান কিংবা যুক্তিখণ্ডনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বক্তা সময়ের প্রতি যত্নবান হবেন এবং নতুন কোনো যুক্তি প্রদান করবেন না। প্রতিপক্ষের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তাদের পরাজিত করতে দলের সকল সদস্য মিলে পরিকল্পনা তৈরি করবেন।
পুনশ্চঃ ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ডবষষ ঢ়ষধহহবফ রং যধষভ ফড়হব. বিতর্ককে নিয়ে ভালোবাসার মানুষ তৈরি হোক। বিতর্কের জয় হোক।
মোঃ মেহেদী হাসান সোহেল : সদস্য, সিকেডিএফ, কচুয়া; বিচারক, মডারেটর : পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা।