প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
বিতার্কিক হওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। একটু কৌশল, শ্রম আর অনুশীলনের মাধ্যমে আপনিও হয়ে উঠতে পারবেন তুখোড় একজন বিতার্কিক। বিতর্কের পূর্বেই একটি নির্ধারিত বিষয় দেয়া থাকে। বিতর্কভেদে সেই বিষয় একদিন, এক ঘণ্টা, আবার অনেক সময় বিতর্ক শুরুর মাত্র ১৫ মিনিট আগেও দেয়া হয়। সুতরাং স্বল্প সময়ের মাঝে পুরো বিতর্কটি ধরতে পারা এবং নিজের দলের অবস্থান প্রতিপক্ষ থেকে দৃঢ় করার জন্যে বিতর্কের বিষয়ের সঠিক ব্যবচ্ছেদ অত্যাবশ্যক।
যে কোনো বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে ধারণা যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপনের অনন্য মাধ্যম বিতর্ক। বিতর্ক মানুষের জীবনের একটি অংশ। বিতর্ক প্রক্রিয়া যুক্তিসঙ্গত চিন্তাকে প্রসারিত করার পাশাপাশি জ্ঞানের ক্ষেত্র ও পরিধিকে বিস্তৃত করার মাধ্যমে দক্ষতা, পরমতসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি ও বাকপটু হতে সহায়তা করে।
কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে নিউনরমাল পরিস্থিতিতে সকলে জীবনযাপন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, লিঙ্গ সমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে বিতর্ক ভূমিকা রাখে। বিতর্কের সাথে গণতন্ত্র সুসংহতকরণের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় সংসদেও আইন প্রণয়নসহ সকল বিষয়ে বিতর্ক হয়ে থাকে।
বিতার্কিকের বক্তব্য বিচারক, প্রতিপক্ষ ও দর্শকদের কাছে পরিষ্কার হয়, সেজন্যে প্রয়োজন কাঠামোবদ্ধ বিতর্ক করা। বিতর্কের ভাষায় একে ‘কেস ফ্রেমিং’ বলে। বিতর্কের শুরুতে প্রতিপক্ষের পূর্ববর্তী বক্তার যুক্তিগুলোর ভুলগুলো দেখিয়ে বক্তব্য শুরু করা, নিজের যুক্তিগুলো প্রতিষ্ঠিত করা ও নিজের দলের যুক্তিগুলো কেন প্রতিপক্ষের যুক্তিগুলোর চেয়ে ভালো সেই সম্পর্কে একটি তুলনামূলক আলোচনা করে নিজের দলের অবস্থান দৃঢ় করা--এ সবই নির্ভর করে ফ্রেমিংয়ের উপর। অর্থাৎ, কোন্টির পর কোন্টি কীভাবে বলতে হবে, সেটিই হচ্ছে বিতর্কের ফ্রেমিং। বিষয়জ্ঞান ভালো থাকার পরেও অনেক সময় ঠিকভাবে ফ্রেমিং করা না হলে নিজেদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। তাই প্রচুর পরিমাণে বিতর্ক দেখতে হবে। ভালো বিতার্কিকেরা কীভাবে বিতর্ক করেন, তাদের কৌশলগুলো কী--এসব না দেখলে শেখা যায় না। সময় পেলে ভালো কোনো বিতর্কের প্রোগ্রামে চলে যেতে পারেন বন্ধুদের নিয়ে। সময় কম হলে ইন্টারনেটেই দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন বিতর্কের অনুষ্ঠান। ইউটিউবে সার্চ দিলেই আজকাল অনেক বিতর্কের ভিডিও পাওয়া যায়।
চাঁদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতর্কচর্চা দীর্ঘদিন ধরে চললেও এখন তা আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক ক্লাব গড়ে উঠছে, শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বিষয়।
পরিশেষে বলবো, বিতর্কে কোনো অবস্থাতেই তথ্য বা প্রমাণকে বদলে দেওয়া বা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না; কোনো অবস্থাতেই ফ্যাক্টস (প্রকৃত ঘটনা) বা অবভিয়াস ট্রু (সুস্পষ্ট সত্য) অস্বীকার করা যাবে না। এটি অবশ্যই সততার জন্যে দরকার। কিন্তু এর একটি শিক্ষাও আছে, তা হচ্ছে জবাবদিহির শিক্ষা। বিতর্কচর্চার মধ্য দিয়ে এ শিক্ষাকে ধারণ করতে হবে, জীবনাচরণে তার ব্যবহার করতে হবে। তবেই বিতর্কে সফলতা আসবে।
রোটাঃ রেদওয়ান আহমেদ জাকির : সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন ও মতলব ব্যুরো ইনচার্জ ও সহ-সম্পাদক (অনলাইন), দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।