প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
আমরা সবাই দৈনন্দিন জীবনে কম-বেশি তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে থাকি। বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় নিজের অবস্থানকে শক্ত করে তুলে ধরতে বিতর্কে দক্ষতা থাকা জরুরি। বিতার্কিক হওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও অনেকে বিতর্কচর্চা শুরু করে বেশ ভালো বিতার্কিক হয়ে উঠেন। আজকের লেখাটি মূলত বিতর্কে যাদের এখনো পদচারণা হয়নি বা যারা একেবারেই নতুন, তাদের জন্যে।
বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি-তর্কের খেলা। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনার সময় স্বাভাবিকভাবেই ভিন্নমতের কারণে দুই বা ততোধিক পক্ষ তৈরি হয়ে যায়। নিজের মতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যুক্তি প্রদান করে তা প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পারাই একজন বিতার্কিকের প্রধান কাজ। এর জন্যে প্রয়োজন কিছু কৌশল, শ্রম আর অনুশীলন। এবার তবে জেনে আসা যাক, কীভাবে বিতর্কে দক্ষ হয়ে উঠা যায়।
জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধি : বিতর্কের জন্যে সবার প্রথমে জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে হবে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, দর্শন, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি সকল বিষয়ের বেসিক আইডিয়াগুলো অবশ্যই জানতে হবে। সেজন্যে কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা, সেগুলোর ব্যাখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজ রাখতে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া এবং ইউটিউবের বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখা জরুরি।
বিতর্কের প্রকারভেদ, কৌশল, বক্তাভেদে দায়িত্ব সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা : পূর্বে সনাতনী বিতর্ক বেশ জনপ্রিয় থাকলেও, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সংসদীয় অথবা ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ফরম্যাট বেশি প্রচলিত। এছাড়া বারোয়ারি, প্রদর্শনী বা প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক বিভিন্ন আয়োজনে রাখা হয়। নির্দিষ্ট প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন কৌশল ও নির্দিষ্ট বক্তার কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে তবেই বিতর্কে ভালো করা সম্ভব।
বিষয় ব্যবচ্ছেদ ও কাঠামো গঠন : সাধারণত যে কোনো বিতর্ক শুরুর ২০ বা ৩০ মিনিট আগে বিতর্কের বিষয়টি উন্মোচন করা হয়। প্রথমেই প্রদত্ত বিষয়টি ভালোভাবে ব্যবচ্ছেদ করে (বিষয়টির প্রধান শব্দগুলোকে বারবার প্রশ্ন করে) বিতর্কটিতে ঠিক কী চাওয়া হচ্ছে তা বুঝতে হবে। সে অনুযায়ী সপক্ষে কিছু যুক্তি তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বিপরীত পক্ষ থেকে যেসব যুক্তি আসতে পারে সেগুলোর ব্যাপারে প্রস্তুত থাকা উচিত। নির্দিষ্ট সময়ের বক্তব্যে দলের অবস্থান যাতে স্পষ্টভাবে বোঝানো যায় সেজন্যে কাঠামোবদ্ধ বিতর্কের বিকল্প নেই। কোন্ জিনিসের পর কোন্ জিনিস কীভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে- তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।
সমন্বয়ের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন : বক্তব্যের জন্যে বিস্তারিত স্ক্রিপ্ট না লিখে মূল জিনিসগুলো পয়েন্ট আকারে লিখে ফেলতে হবে। বক্তব্য গোছানো না হলে তার উপস্থাপনও স্বাভাবিকভাবেই ভালো হয় না। প্রতিপক্ষের যুক্তিগুলোর সাথে তুলনামূলক আলোচনা করে নিজেদের যুক্তিগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তা বিচারক এবং দর্শকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এছাড়া যথাযথ কাঠামো, সময়সীমা, সাবলীল বচন ও অঙ্গ-ভঙ্গির দিকে খেয়াল রেখে বক্তব্যের উপস্থাপন সুন্দর করতে হবে।
নিয়মিত অনুশীলন : ভালো বিতার্কিক হতে চাইলে প্রচুর বিতর্ক শুনতে বা দেখতে হবে। একই সাথে নিজে নিজে বক্তব্য প্রদানের অভ্যাস করতে হবে। বক্তব্যে একই কথা যাতে বারবার না আসে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি, কেননা এতে করে শ্রোতারা বক্তব্য শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এজন্যে অবশ্যই নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
বিতর্ক একইসাথে পড়া, লেখা, শোনা ও বলার সংমিশ্রণ। এই একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আরো অনেক বিষয়ে (যেমন : পাবলিক স্পিকিং, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি) দক্ষ হয়ে ওঠা হয়। বিতর্কের কারণে যে আত্মবিশ্বাস জন্মে তা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগে। তাই সব পেশার সকল মানুষের জন্যে বিতর্কে দক্ষতা থাকা উচিত।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী : প্রভাষক (ইংরেজি), চেড়িয়ারা স্কুল এন্ড কলেজ; কার্যকরী সদস্য, সিকেডিএফ, শাহরাস্তি শাখা, চাঁদপুর।