বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ইংরেজি বিতর্কের গুরুত্ব ও আজকের পৃথিবী
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

বিতর্ক একটি প্রজন্ম বিনির্মাণের শিল্প। এটি নিছক বিনোদন নয়, নয় কোনো সময়কে উদযাপনের অনুষঙ্গ মাত্র। আসলে বিতর্ক নামক শিল্পের মাধ্যমে দক্ষ ও সক্ষম নাগরিক গড়ে তোলা হয়, যারা আগামীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং দেশের স্বার্থকে রক্ষার জন্যে নিজের বিতার্কিকসুলভ পারঙ্গমতাকে কাজে লাগায়। আমার বন্ধুদের অনেককেই আজকাল দূরালাপনে আফসোস করতে শুনি, কেন তারা ছোটবেলায় বিতর্ক শিল্পের চর্চায় তালিম গ্রহণ করেনি। কেননা আজ তারা রাষ্ট্রের উচ্চপদে চাকুরি করে নিজেরা বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পেরে উঠে না। এই দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে গেলে একদিকে যেমন বিতর্ক শিল্পের পাঠ নিতে হবে, তেমনি অন্যদিকে ইংরেজিতে নিজের যুক্তি তুলে ধরার সক্ষমতা থাকতে হবে। তাহলেই বিদেশীদের ক্ষুরধার বুদ্ধির সাথে এঁটে উঠা যায়।

শুদ্ধভাবে ইংরেজি লিখতে পারা আর উপযুক্ত সময়ে দরকারি ইংরেজি বলতে পারা এক কথা নয়। এটা চর্চার ব্যাপার। সাধনা না থাকলে এতে সক্ষমতা তৈরি হয় না। আবার বলতে পারলেই শুধু হবে না, তাকে যুক্তি প্রয়োগে ধারাল করে তোলা আরও জরুরি। নিজের মতকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যে ইংরেজি বলার দক্ষতার সাথে যুক্তি নির্মাণের কৌশলও জানা চাই। লেখ্য ইংরেজিতে ব্যাকরণগত শুদ্ধতা জরুরি হলেও মৌখিক ইংরেজিতে বোধগম্যতা তুলে ধরতে পারাটা জরুরি। এই বোধগম্যতাকে তত্ত্ব ও তথ্যের সমন্বয়ে ক্ষুরধার করে তুলতে যে পারে আদতে সে-ই বিতার্কিক।

ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সেজদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর আগে বাংলাভাষার গাঁথুনি ঠিক করার কথা বলেছেন। বিতর্কের ক্ষেত্রেও তাই আমরা বলি, বাংলায় যে বিতর্ককে বুকে ধারণ করতে পারে ইংরেজি বিতর্কও তার কাছে সহজ হয়ে উঠে। যদিও বিতর্ক যুক্তি ও তত্ত্ব-তথ্যের সাহায্যে বাচিক শিল্পের অনুপম প্রদর্শনী, তবুও বিতর্কে বোধগম্যতা ও প্রাঞ্জলতার বিষয়টি মুখ্য। এর জন্যে কর্মশালা তথা প্রশিক্ষণ ও চর্চা বা অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। বিতর্ক একটি টেকনিক্যাল বিষয় বিধায় এর পারিভাষিক সংজ্ঞাগুলো জানা জরুরি। বিতর্কের পরিভাষা আয়ত্ত করা গেলে বিতর্ক হয়ে যায় সহজ। ইংরেজি বিতর্কের পরিভাষাকে নিজের ঠোঁটের আগায় আনতে পারলে অবারিতভাবে নিজের যুক্তিকে পেশ করা যায়। ফলে বিতর্ক তখন আপদ না হয়ে উপভোগের নান্দনিক অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়।

বিতর্ক যেমন যুক্তির প্রদর্শনী তেমনি টেকনিকেরও প্রদর্শনী বটে। বাংলা বিতর্কের চেয়ে ইংরেজি বিতর্কের গুরুত্ব এই টেকনিকের ভিন্নতার কারণেই বেশি। আমাদের নিজেদের মাতৃভাষা না হওয়ায় উচ্চারণগত শুদ্ধতা থাকলেও অ্যাক্সেন্টের কারণে সেই ইংরেজি কানে লাগে। আবার কিছু কিছু ইংরেজি ভাষাগত শিষ্টাচার বাংলাভাষায় অনুপস্থিত। ফলে চর্চাহীন হুট করে কেউ ইংরেজি ভাষায় বিতর্ক করতে গেলে তার পক্ষে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে। আবার কিছু কিছু অভিব্যক্তি ইংরেজি ও বাংলা বিতর্কে ভিন্ন। বাংলা বিতর্কে যা চাঁছাছোলা করে বলতে পারা যায়, তাকে ইংরেজি বিতর্কে বলতে হয় মোলায়েম করে। কাজেই কেবল ভাষা বা যুক্তিতে নয়, কায়দা-কানুনেও বাংলা বিতর্কের চেয়ে ইংরেজি বিতর্ক ভিন্নতর।

আজকের পৃথিবীতে আপনি কত কম সময়ে কত প্রাঞ্জলভাবে আপনার যুক্তিটুকু তুলে ধরতে পারলেন তা জরুরি। এরজন্যে দরকার অগ্রাধিকার অনুধাবন। আপনি কেবল অলংকার প্রয়োগে এবং আর্টিকুলেশনেই যদি সময় ক্ষেপন করেন তবে যুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে আপনাকে চালাতে হবে বুলেট ট্রেন। আপনার পক্ষে তখন শ্রোতার কানে বোধগম্য শ্রবণ তৈরি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সকল বিষয়ে পরিমিতিবোধ আপনাকে তৈরি করতে হবে। তা না হলে আধাআধি বক্তব্য দিয়ে নেমে আসতে হবে বক্তৃতাপীঠ থেকে।

ইংরেজির ক্ষেত্রে শব্দের প্রয়োগ একটা বড় বিষয়। একই ইংরেজি শব্দের প্রয়োগের ভিন্নতা অর্থেরও ভিন্নতা তৈরি করে। এদের কারও কারও সঠিক অর্থ বুঝে নিতে হলে শব্দের প্রোজেকশন খেয়াল করতে হয়। কিছু কিছু শব্দে কিছু কিছু বর্ণ উচ্চারিত হয় না। এদেরকে উচ্চারণের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ফুটিয়ে তোলাটা কঠিন বৈকি। অনুশীলন উপযুক্ত না হলে এ ধরনের শব্দ ব্যবহারে বিড়ম্বনা তৈরি হতে পারে। বিতর্ক যেমন নিরেট কঠিন নয়, তেমনি বিতর্ক তরল জলবৎও নয়। বিতর্ক একদিকে যেমন তার নিজ গুরুত্ব ধারণ করে, তেমনি সেই গুরুত্বকে ধারণ করেই পারঙ্গমতা তৈরি করে। সুতরাং ইংরেজি বিতর্কের গুরুত্ব কেবল বিশ্ব প্রপঞ্চে বলেই নয়, অভ্যন্তরীণভাবেও সমান এবং অপরিহার্য। বিতর্ক হয়ে উঠুক আমাদের নিত্য যাপনের বিষয়। বিতর্কের জয় হোক।

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া : সব্যসাচী লেখক; অধ্যক্ষ, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়