রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

অ্যামিশ ভিলেজ

মোহাম্মদ তাইয়্যেব হোসাইন
অ্যামিশ ভিলেজ

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে নানান রকমের মানুষের বসবাস প্রাচীন যুগ থেকে নদীর তীরে বসবাস করা মানুষ অট্টালিকা পর্যন্ত গড়ে তুলছে। আধুনিকায়নে সর্ব স্থানে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এখনো এমনও গ্রাম বা কমিউনিটির মানুষ আছে আধুনিকতার ব্যস্ততম যান্ত্রিক যুগ থেকে বহু দূরে আজকে তেমনই এক বিস্ময়কর গ্রামে বসবাস করা মানুষের জীবনযাত্রার কথা আপনাদেরকে জানাবো। গ্রামের নাম অ্যামিশ ভিলেজ অ্যামিশদের উৎপত্তি সুইজারল্যান্ডের অ্যানব্যাপটিস্ট গির্জা থেকে।

১৬০০ সালের দিকে হবে। জ্যাকব আম্মান নামে একজন অ্যানব্যাপটিস্ট তাঁর কিছু অনুসারী নিয়ে নিজের গোত্র থেকে আলাদাভাবে বাস করা শুরু করেন। আম্মানের নাম অনুসারে তাঁদের নামকরণ হয় অ্যামিশ। অ্যামিশদের প্রথম দলটি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ল্যাংকেস্টার কান্টিতে আসে ১৭৩০ সালে। বর্তমানে অ্যামিশ জনগণ ওহাইও, আইওয়া, ইন্ডিয়ানা ও কানাডার অন্টারিওতে ছড়িয়ে পড়লে বেশির ভাগই পেনসিলভানিয়ার ল্যাংকেস্টার কান্টিতে বাস করে।

বর্তমান পৃথিবীতে তারাই সবচেয়ে ঐতিহ্যপ্রিয় একটি জাতি। অ্যামিশরা কথা বলে পেনসিলভনিয়ান জার্মান, পেনসিলভনিয়ান ডাচও বলা হয় এমন একটি ভাষায়।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামিশ জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার। কিন্তু উইকিপিডিয়া ২০২৩ তথ্য অনুসারে আমেরিকা অ্যামিশ জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি।

প্রযুক্তির উৎকর্ষ যুগেও অ্যামিশ কমিউনিটির মানুষ সনাতন পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করতে অভ্যস্ত। জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা কৃষি নির্ভর, আধুনিক যুগে চাষাবাদ করার জন্য ট্রাক্টর থাকলেও অ্যামিশরা ঘোড়ার লাঙ্গলের ব্যবহার অভস্ত্য এবং পারদর্শী।

কৃষি কাজ করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প নিয়ে জীবন যাপন করে। অ্যামিশ নারীরা হস্তশিল্পে দারুণ অভিজ্ঞ, তাদের তৈরী তৈজসপত্র থেকে শুরু করে হরেক রকমের জিনিস পত্র তৈরী করে। কমিউনিটির প্রায় সব দোকানে তাদের তৈরি জিনিস পত্র বিক্রি করা হয়। অ্যামিশ কমিউনিটির মানুষরা আধুনিক যন্ত্রপাতি মিশনারিস ব্যাবহার করে না।

দৈনন্দিন কাজে যাতায়াতের জন্য বা পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ বর্গী যুক্ত ঘোড়ার গাড়ির মাধ্যমে যাতায়াত করে। অন্য স্টেটে যাওয়ার জন্য ট্রেনে যাতায়াত করে তাদের গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহী হয়ে থাকে, বিশেষ প্রয়োজনে গাড়িতে যাতায়াত করলে তা অন্যের চালিত গাড়ি বা বাসে যাতায়াত করে যা একদম অল্প সময়ের জন্য।

অ্যামিশ দের প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকলেও কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে যেমন জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার করেনা। প্রয়োজনে খামারে বা কৃষি কাজে ব্যাটারি জেনারেটর থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তারা মুঠোফোন ব্যবহার করে না কিছু কিছু স্থানে জরুরি যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অ্যামিশ দের খাদ্য তালিকা খুব পরিপাটি বিদেশি খাবারের বিপরীতে নিজেদের চাষাবাদ বা উৎপন্ন করা খাবার তারা বেশ পছন্দ করে। উৎপন্ন বা চাষ করা খাবার তাদের কমিউনিটিতে বাজারজাত করে, জার্মান এবং সুইস মিলিয়ে তাদের খাদ্যাভ্যাস। খাদ্য তালিকায় গরু এবং মুরগী মাংস তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম। অ্যালকোহল বা তামাক জাতীয় খাদ্য নিষিদ্ধ তাই এদের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর নাই বললেই চলে।

পোশাক তৈরিতে তারা বেশ কিছু ব্যতিক্রমী ও নিয়ম মেনে তৈরি করে যেমন প্যান্ট বা জামায় তারা সেইন বা বাটন ব্যাবহার করে না। অ্যামিশ নারীরা এমন পোশাক পড়েন যাতে সারা শরীর ঢেকে থাকে এবং স্কাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখেন।

বাদামি গাড়ো রঙের পোশাক তাদের বেশ পছন্দ। অ্যামিশ পুরুষদের প্রতীক লম্বা দাড়ি তবে তারা গোঁফ রাখেন না, অ্যামিশ পরিবারে পুরুষ প্রধান। নারীরা শিশুদের যত্ন নেওয়া, বাসার কাজ করার পাশাপাশি খামারে ছোটখাটো কাজ করেন পুরুষদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

অ্যামিশ দের পড়াশুনা অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত এবং যারা পড়ান তারা নারী এবং কুমারী শিক্ষিকা হয়ে থাকেন। তাদের উচ্চতর শিক্ষা বা ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ নাই যেহেতু তাদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

অ্যামিশ দের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সে, সিদ্ধান্তটা অ্যামিশ কমিউনিটিতে থাকা না থাকা সংক্রান্ত । বর্তমান অনেক তরুণ তরুণী অ্যামিশ কমিউনিটি ছেড়ে আমেরিকানদের মতো জীবন যাপন করার জন্য বাড়ি ত্যাগ করে। অ্যামিশরা ল্যাঙ্কাষ্টারের বাইরে ভ্রমণ করতে যায় জায়গাটার নাম পাইনক্রাফ্ট, ফ্লোরিডা। শীতের মৌসুমে তারা এই স্থানে ঘুরতে যায়, সেই কারনে অনেকে পাইনক্রাফ্ট কে অ্যামিশ লাসভেগাসও বলে।

অ্যামিশরা বিয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের কমিউনিটির মধ্যেই বিবাহ করে, জন্মনিয়ন্ত্রণের বিধি নিষেধ এখানে নাই তাই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ বা ১০ জনের বেশি হয়ে থাকে।

অ্যামিশরা বাড়িতে এবং গির্জায় ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি জার্মানি ভাষাতে কথা বলে। ধর্মীয় নিয়মনীতি ভিন্ন প্রাচীন খ্রিষ্ট্র সম্প্রদায় বিশ্বাসী অ্যামিশরা তাদের তৈরি গির্জায় প্রার্থনা করে।

অ্যামিশ কমিউনিটির মানুষ পেনসিলভানিয়ার আসেন, এখন থেকে প্রায় তিনশ’ বছর আগে আসা শুরু করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় পনেরো শতকে অ্যামিনিশ কমিউনিটির আদিবাস ছিলো সুইজারল্যন্ড, জার্মানি, রাশিয়া এবং হল্যান্ডে। সতেরশো থেকে উনিশ সাল পর্যন্ত প্রায় দুইশত বছরে তারা উত্তর আমেরিকায় বসতী গড়ে তুলে। আমেরিকাতে প্রথম অ্যামিশদের বসতি স্থাপন করে পেনসিলভনিয়াতে তাও সতেরশো সালের শুরুতে। আঠারো সালের দিকে এসে তারা মতবিরোধে জড়িয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

সামাজিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তির ব্যবহারে যারা আগ্রহী হয়েছে উঠেছিল তারা পুরনো কমিউনিটি থেকে বেরিয়ে আসে আমেরিকান জীবনযাত্রা আপন করে নেয়। আর পুরনো ধরায় বিশ্বাসী অ্যামিশরা এখনে সেই আগের জীবন ধারা ও সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে আছে। পেনসিলভনিয়ার ছাড়াও আরও বেশ কয়েক জায়গা অ্যামিশয়ানরা বসবাস করেন উল্লেখ ইন্ডিয়ানা, ওহাইও , কেনটাকি , মিসৌরি , মিশিগান , নিউ ইয়র্ক এবং উইসকনসিনে বৃহৎ জনসংখ্যা আছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়