প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০
সংগ্রাম শেষে অনিকের সফলতার সিঁড়ি
জীবন বড়োই বিচিত্র। এক সময় অনিকের এমন ছিল, প্রতি বেলায় খাবার খাওয়ার মতো অর্থ তার ঘরে ছিল না। জীবনের কঠোর পরিশ্রম করে আজ একটা ভালো চাকুরি করে সে। বাবা বড়ো দুঃখে মানুষ করেছে তাকে। আজকের জায়গায় পৌঁছাতে অনিকের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অতীতের পানে ফিরে তাকালে সে দেখতে পায় জীবন বাস্তবতার রূঢ় রূপ। দারিদ্র্যের কষাঘাতে কী করুণ পরিস্থিতিই না পাড়ি দিয়ে এসেছে সে। ভাবতে গেলে আজ অনেক কথাই মনে পড়ে। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ।
সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তার মায়ের কথা। মা আজ নেই। টাকার অভাবে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকে বরণ করেছেন মা। শুধু স্বপ্ন ছিল তার ছেলে পড়ালেখা শিখে বড় চাকরি করবে। তখন আর কোনো দুঃখ থাকবে না। তখন ছেলে তার চিকিৎসা করাবে। মায়ের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। কিন্তু মা আজ কোথায়...। অভাবের সংসারে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অনিককে তার বাবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। অবশ্য অনিকও ভালো ছাত্র ছিল। সেই ছোটবেলা থেকে ক্লাসে কখনো সে দ্বিতীয় হয়নি। আর পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিলো প্রবল। কিন্তু শুধু মেধায় কি আর হয়? খেয়ে পরে তো বাঁচতে হবে আগে।
তখন দুবেলা দুমুঠো ভাতও তাদের জুটত না। দিনমজুর বাবা যা সামান্য আয় রোজগার করতেন, তাতে সংসার চলতেই কষ্ট হতো। তার ওপর অনিকের পড়ালেখার খরচ চালানো ছিল রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু যতোই অভাবের টানাপোড়ন থাকুক কিছুতেই দমে যায়নি অনিক। আর দরিদ্র বাবা-মায়ের কষ্ট হলেও ছেলেকে তারা শিক্ষিত হওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন। এভাবে বহু কষ্টে অনেক কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে। তারপর এইচএসসিতে সে ভালো ফলাফল অর্জন করে। এরপর স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন তার অসুস্থ মা মারা যান।
এরপর শুরু হয় অনিকের জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কঠিন সংগ্রাম। বিনা চিকিৎসায় মায়ের মৃত্যু তার ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি করে। দরিদ্রতাকে ঘুচাতে সে মরিয়া হয়ে উঠে। এভাবে দিন-রাত পড়াশোনা করে একদিন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং তার কিছুদিন পরেই শহরে ভালো একটা চাকরি পায়। সফলতার প্রথম সিঁড়িতে পা রাখে অনিক। দুবছর পর পদোন্নতি ঘটে তার। আজ তার কিছুরই অভাব নেই। মাস শেষে মোটা অংকের বেতন, সামাজিক সম্মান ও বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় জীবনের সাফল্য আজ তার কানায় কানায় পূর্ণ।