রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

জ্বীনের অনুসন্ধান

সুমাইয়া শিমু
জ্বীনের অনুসন্ধান

জ্বীন বলে যে কিছু আছে তা উর্মির ছোটবেলা থেকেই জানার খুব ইচ্ছা। তাই উর্মি সবসময় তার দাদি, নানি, মা, বোন থেকে জ্বীনের গল্প শুনতো। খাবার খেতে বসলে বা ঘুমাতে যাওয়ার সময় উর্মি জ্বীনদের গল্প শুনাই লাগতো। সব শিশুরা কার্টুন বা অন্য গল্প শোনার আগ্রহ থাকলেও উর্মি জ্বীনদের গল্প শুনার জন্য বায়না করতো।

অনেকে বলে জ্বীনদের নাকি রাত্রি বেলা গভীর রাতে দেখা যায়। অনেক সময় উর্মি রাত্রি বেলা ছাদে যাওয়ার বায়না ধরতো জ্বীন দেখার জন্য। প্রায় সময় রাত্রি বেলা একা একা উর্মি ছাদে চলে যেতো জ্বীনদের দেখার জন্য। এরকম উল্টাপাল্টা কাজকর্ম ও কথা বলার জন্য অনেক মাইরও খেয়েছে ছোটবেলায়। বয়সে ছোট হলেও সে অনেক বুদ্ধিমতী ছিলো। আর অনেক জেদিও।উর্মি স্কুলে গেলেও সবসময় বন্ধুূদের সাথে জ্বীনের গল্প করতো।

যে যেখানে জ্বীনের কথা বলতো সে সেখানে গিয়েই হাজির হয়ে যেতো জ্বীন দেখার জন্য। তবে গিয়ে শুধু জ্বীনের কাহিনি শুনে আসতো জ্বীন আর দেখা হতো না। তারা চার বান্ধবী ছিলো। একজন একদিন না আসলে পরের দিন বাকি তিনজন স্কুলে বা কোচিংয়ে না গিয়ে তারা জ্বীনের গল্প করতো। তারা ভূত, জ্বীনের বই পড়তে খুব পছন্দ করতো। দি লাস্ট নাইট, ১৯২০ প্রভৃতি বইগুলো দেখে রীতিমতো ভয় পেতো। তবে কোনভাবেই আকর্ষণ কমতো না বরং আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে চলেছে। একদিন সবাই মিলে জ্বীন নিয়ে আলোচনা করছিলো। যে জ্বীন কেমন হবে? তারা কিভাবে চলে? তাদেরকে দেখা কেন যায় না? আরো নানারকমের কথাবার্তা। হঠাৎ করে রুমি বলে উঠলো আচ্ছা আমরা তো জ্বীনকে খুব ভালোবাসি তাই না?

উর্মি : হ্যা, তো কি হয়েছে জ্বীন তো আর আমাদের দেখা দিবে না?

রুমি : যদি আমরা জ্বীন দেখতে পাই তাহলে।

মাহি : এবার একটু চুপ করে বসবি। তখন থেকে শুধু বকছিস। আর আমরা কি করে জ্বীন দেখতে পাবো। আমরা কি কোন যাদুমন্ত্র জানি নাকি।

রুমি : আমরা যদি জ্বীন নিয়ে রিসার্চ করি তাহলে কেমন হয়?

প্রিয়া : রুমিকে জড়িয়ে ধরে বলল তোর মাথায় মাঝে মধ্যে এত ভালো বুদ্ধি কি করে আসে? আন্টি তোকে কি খাওয়ায়?

মাহি : কথাটা কিন্তু ঠিক বলেছো, গুড আইডিয়া। কিন্তু রুমিকে কেমন জানি চুপচাপ লাগলো।

মাহি : কি রুমি, তোর আবার কি হয়ে গেলো হঠাৎ চুপ হয়ে গেলি।

রুমি : তোরা খুব লাফাচ্ছিস গুড আইডিয়া, গুড আইডিয়া বলে একটা কথা কি তোরা চিন্তা করেছিস?

সবাই মিলে একসাথে বলে উঠলো কি কথা রুমি।

রুমি : আমরা তো জ্বীন নিয়ে রিসার্চ করবো ভাবতেছি কিন্তু আমাদের বাড়ির লোকেরা কি এসব করতে দিবে?

সবাই চিন্তায় পড়ে গেল কি করবে কারো মাথাতে আসতেছে না।

মাহি : সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়ে বলল আমাদের বাড়ির লোক যদি মানতে না চায় তাহলে আমরা তাদেরকে ভালো করে বুঝাবো।

সবাই এই আইডিয়াটা ফেলে দিল কারণ কেউ এসব মানবে না। সবাই ভাবছে আর ভাবছে এর ভিতর তাদের চিন্তা ভেদ করেই ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু আর তাদের ক্লাসে মন বসছে না। তাদের শুধু চিন্তা হচ্ছে কি করে কি করবে? কিভাবে কি করবে? এভাবে এর মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সবাই সবার বাড়িতে রওনা দিলো। সবাই শুধু এটাই ভাবছে পরিবারকে কি করে বোঝাবো?

সবাই সবার বাড়ি গিয়ে অনেক চেষ্টা করল তাদের বাবা মাকে বলার কিন্তু কোন ভাবেই সাহস করে উঠতে পারেনি বলার। আর আজ না কাল, কাল না পরশু এরকম করতে করতে কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ কারো পরিবারকে কিছু বলতে পারেনি। অবশেষে সবকিছু চিন্তা করে সবাই আলোচনা করতে লাগলো কিন্তু কারো মাথাতে কোন রফবধ বের হচ্ছিল না। সবার মন খুব খারাপ। কারণ এমন কিছু আমাদের কারো পরিবার মেনে নিবে না।

রুমি : আচ্ছা আমরা যদি কাউকে কিছু না জানিয়ে জ্বীন নিয়ে পড়াশোনা করি তাহলে কেমন হয়?

উর্মি : না জানি এটা করা সম্ভব নয়। এসবের উপরের পড়াশোনা করলে অনেক টাকার দরকার এবং রিচার্জ করার জন্য নানান জায়গা যেতে হবে। এসব কিছু আমরা একা একা করা কি আদৌ কি সম্ভব।

মাহি : না কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

রুমি : আচ্ছা শোন আমি শুনেছি গভীর রাতে (সূরা জ্বীন) সূরাটা মন দিয়ে পাঠ করলে জ্বীন আসে। আমরা তো এভাবে জ্বীনদের সাথে দেখা করতে পারি। পড়াশোনা যেভাবে চলতেছে সেভাবেই চলুক। আমরা কোথাও না গিয়ে আগে এটা ট্রাই করে দেখি আসে কিনা কি বলছ সবাই?

উর্মি : হুম ঠিক বলছিস আমিও এটা শুনেছি মাহি তাইলে তো উপায় পেয়ে গেলাম জ্বীন দেখার উর্মি আচ্ছা রুমির তো জন্মদিন চলেই এসেছে। আমরা এমন একটা প্ল্যান করি যেন সেই দিন আমরা আমাদের মতো করে জ্বীনদের ডাকতে পারি।

মাহি : একদম গুড আইডিয়া এটাই করা দরকার। তো বলতো কি করা যায়।

উর্মি : রুমির জন্মদিনের কথা বললে বাবা-মা কিছু বলবেনা আসতেই দিবে। আর তুইও আন্টিকে বলে চলে আসবি। আমরা কেক কেটে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ঘুমাবো না। সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে ঠিক রাত তিনটায় জ্বীন সুরাটা পড়বো।

রুমি : গুড গুড, ভেরি গুড আইডিয়া, ওকে ডান।

উর্মি : ওকে ডান।

মাহি : ওকে ডান।

রীতিমতিন সবার প্ল্যান অনুযায়ী সবাই রুমির জন্মদিনে উপস্থিত হয়েছে। নাচ, গান কেক কাটা, খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই রুমে এসে গভীর রাতের অপেক্ষা করতে লাগলো আর নিজেরা নিজের আলোচনা করতে লাগল অতঃপর গভীর রাত ঘনিয়ে আসলো। সবাই অজু করে জায়নামাজ বিছিয়ে গোল হয়ে বসলো

উর্মি : কে পরবি।

রুমি : তুই পড়।

উর্মি : আমি।

মাহি : হুম পড় আর আমরা সবাই সবার হাত ধরে রাখি তুই ডান হাত দিয়ে পড়া শুরু কর।

উর্মি : ঠিক আছে।

কিন্তু তার আগে তো লাইট অফ করতে হবে এত আলোর মধ্যে কিছুই হবে না। উর্মি আসার সময় ব্যাগে করে আগেই লাইটার এবং মোম সাথে করে নিয়ে এসেছে। লাইট অফ করে তাদের বসার ভিতর দুটো মোম জ্বালিয়ে দিয়েছে যেন সূরা পড়তে পারে এবং বাইরে কোন প্রকার আলো না যায়। সেইভাবে আলো জ্বালিয়ে সূরা পড়া শুরু করলো তবে কোন কিছু হচ্ছে না। তারপর আবারো প্রথম থেকে মন দিয়ে পড়া শুরু করল। সবাই চুপ। উর্মি একটু একটু শব্দ করে পড়ছে যেন রুমের বাহির পর্যন্ত শব্দ না যায়। এমন ভাবে পড়ছে উর্মির পড়া প্রায় শেষ। সাদাকাল্লাহ হুল আলি ইল আউয়ুজিম বলতে না বলতে ঘরটা কেমন জানি এক অদ্ভুত লাগছিলো। মনে হচ্ছিল ঘরের ভিতর অনেক কিছু আছে। ঘর কেমন যেন ভারী হতে লাগলো।

উর্মি, মাহি, রুমি তিনজন তিনজনকে ধরে আছে। খুব ভয় পাচ্ছে তারা। তবে তাদের জেদ আজ তারা দেখবেই জ্বীন। তাই তারা ভয় পাওয়া সত্ত্বেও তারা তিনজন তিনজনকে ধরে বসে ছিল। সবাই বসে বসে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তেই অমনি কেজানি বলে উঠলো : কেন ডেকেছিস তোরা আমাকে।

উর্মি, মাহি, রুমি এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে বলে উঠলো কে, কে এখানে।

জ্বীন : আমাকে কেন ঢেকেছিস? কেন এত রাতে সূরা পড়লি তোরা?

উর্মি : আপনি কি জ্বীন?

জ্বীন : জ্বীন না হলে এভাবে তোদের সাথে কথা বলতাম।

উর্মি : মাফ করবেন আসলে আমরা জ্বীনদের খুব ভালোবাসি। তবে কখনো দেখি নাই। তাই দেখার জন্য আমরা সূরা পড়েছি। আপনি যদি একটু দেখা দিতেন খুব ভালো লাগতো।

মাহি : আল্লাহ জানে তবে মানুষের ভেতরে যেমন ভালো খারাপ রয়েছে জ্বীনের ভিতরও তেমন ভালো খারাপ রয়েছে।

উর্মি : হ্যাঁ, এখন যদি এই জ্বীন এসে আমাদের সাথে কিছু করে তখন।

রুমি : আল্লাহ ভরসা কিছু হবে না।

উর্মি : মোমগুলো ব্যাগে নিয়ে নে। সবাই শুয়ে পড়ি চল। সকালে উঠতে হবে তো।

সবাই সবার মতো শুয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ও মাহি বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে তিনজনেই স্কুলে চলে এলো। সবাই হতাশ। এত কষ্ট করেও জ্বীন দেখতে পেল না। এত কাছে এসেও চলে গেল। স্কুল শেষ করে সবাই সবার বাড়িতে চলে গেল সবাই। সবার পড়াশোনা শেষ করে শুয়ে পড়লো।

কিন্তু রুমি তার বাড়িতে তার রুমে একা ঘুমাচ্ছে যে রুমে গতরাতে জ্বীনের সাথে কথা ও দেখা করার চেষ্টা করেছিল। রুমি ঘুমাতে পারছে না। তার রুম ভার হয়ে আছে। কেমন যেন ভূতের বাড়ির মত রুমটাকে লাগছে। অথচ সবকিছু ক্লিন কোন ময়লা বা অপরিষ্কার কিছুই নেই। তবু রুমের মনে হচ্ছে তার ঘরটা থেকে খুব বাজে গন্ধ বেড় হচ্ছে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু রুমি যেন বিছানা থেকে উঠতে পারতেছে না। মনে হচ্ছে তাকে কেউ বেঁধে রেখেছে। তার হাত-পা অবশ হয়ে আছে। কথাও বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তার রুমের লাইট অফ অন হতে শুরু করেছে। কনকনে শীতের ভিতর রুমি ঘামছে। ঘামতে ঘামতে তার পুরো শরীর ভিজে গেছে। হঠাৎ ওই ফ্যান চলে উঠলো। রুমির চোখ থেকে শুধু পানি পড়ছে। কিন্তু কিছু করতে পারতেছে না। হাত পা নাড়াতে পারছে না। শরীর নাড়াতে পারছে না।

কথা বলতে পারছে না শুধু সে উপরে তাকিয়ে ভয়ে কান্না করছে। ফ্যান চলছে। আস্তে আস্তে ফ্যানের স্পিড বেড়ে চলছে। এক সময় ফ্যানটা ঠাস করে এসে রুমির শরীরে পড়লো। রুমির রক্তাক্ত শরীর পরে রইল।

উর্মি চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকালো ঠিক রাত চারটায় বাজে। উর্মির চিৎকার শুনে তার বাবা-মা তার রুমে এসে দেখে রুমি কান্না করছে বিছানায় বসে বসে।

উর্মির বাবা : কিরে কি হয়েছে।

উর্মির মা : স্বপ্নে দেখেছিস।

উর্মি : হ্যাঁ।

উর্মির বাবা : কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ ভরসা কিচ্ছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে এই যে পানি খা।

উর্মি ভয়ে ভয়ে পুরো গ্লাসের পানি খেয়ে নিল তারপর উর্মির মা তার পাশে শুয়ে পড়লো।

উর্মির আর ঘুম হয়নি। সকাল ভোরে উর্মি ফ্রেশ হয়ে রুমিদের বাসায় যায় গিয়ে দেখে রুমির বাবা-মা বাইরে কাজ করতেছে। উর্মিকে রুমের বাবা এত সকালে দেখে বলে কিরে মা তুমি এত সকালে কিছু হয়েছে নাকি।

উর্মি : আঙ্কেল কিছু হয় নাই কালকে রাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখছি তাই রুমিকে দেখতে আসছি।

রুমির বাবা : আচ্ছা তুমি ভেতরে যাও রুমি এখনো উঠেনি।

উর্মি রুমের সামনে যেতেই দেখতে পেল রুমির রুমের দরজা একটু ফাঁকা। উর্মি ভয়ে ভয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে রুমের ছিন্ন বিছিন্ন দেহটা পড়ে আছে। উর্মি এক চিৎকারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সেখানেই।

উর্মিল চিৎকারে সুমির বাবা-মা ভাই বোন সবাই এসে সবকিছু দেখতে পায়। সবাই এমন দৃশ্য দেখে খুবই ভয় পেলো। পুরো এলাকা ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। মাহি এসব দেখে খুব ভয় পায়। উর্মি সুস্থ হয়ে তার স্বপ্ন ও তারা কি কি করেছে সবকিছু সবাইকে জানায়। তারপর কবিরাজ এনে উর্মি ও মাহিকে সেভ করে এবং তাদের তিনজনের বাড়ি বন্ধ করে দেয় যেন জিনেরা সে বাড়িতে বা তাদের কারো ক্ষতি না করতে পারে। এবং উর্মি ও মাহিকেও এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জ্বীনকে কবিরাজের মাধ্যমে বন্দী করে ফেলে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়