প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
আরমান। আমার বন্ধু রাফির ছোট ভাই। পড়ে ক্লাস টুতে। খুবই মেধাবী। ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্রদের সে একজন। এই বয়সের শিশুরা একটু দুরন্তই হয়ে থাকে। ওর বয়সী অন্য সব ছেলেদের চেয়ে ও একটু আলাদা। বর্তমান সময়ের ছেলেপেলেগুলো মজে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে, আর টিভির বিভিন্ন কার্টুনে। আরমানও যে দেখে না, তা কিন্তু না। তবে তা একেবারে যৎসামান্য। লেখাপড়ার পরে আরেকটা দিকে আরমানের আগ্রহটা একটু বেশি। আর তাহলো, গাছপালার প্রতি। বিশেষ করে ফুল গাছ তার বেশি ভাল লাগে। স্কুলে যাওয়ার পথে একটা জায়গায় আরমান প্রায় দিনই খানিকটা দাঁড়ায়। একটা বাড়ির আঙিনার বাগান। কী সব সুন্দর ফুল গাছ! সারি সারি ফুটে আছে নানা রঙের ফুল। আরমান যেন চোখই সরাতে পারে না। তার মনে চায় সারাক্ষণ ওখানে বসে থাকতে। কিন্তু স্কুলে তো যেতে হবে। তাই প্রতিদিন সে ওখানটায় একটু দাঁড়িয়ে গাছগুলোকে আদর করে যায়।
সেই বাগান দেখে তারও ইচ্ছা হলো, বাড়িতে একটা বাগান করার। সেখানে থাকবে গোলাপ, গাঁদা, বেলি, রক্তজবা, হাসনাহেনাসহ নানারকম ফুলের গাছ। হাসনাহেনা রাতের বেলা ঘ্রাণ ছড়ায় বলে এই গাছটা আরমানের বেশি পছন্দ। সে তার ইচ্ছার কথা তার ভাইয়ার কাছে ব্যক্ত করে। আমাকেও বলেছে, ভাইয়া আমি একটা বাগান করবো। তখন আমি বলেছিলাম, খুবই ভাল। কিন্তু গাছ কোথায় পাবা? ও হেসে বলল, কেন, আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আনবো। আর ঐ বাসার তানজিলা আপা আমাকে একটা হাসনাহেনা গাছের ডাল দিতে চেয়েছে। আমি তখন তাকে একটা গোলাপ গাছের চারা দেয়ার আশ্বাস দিলাম। পুচকেটা অনেক খাটাখাটি করে বাড়ির পাশে একটা জায়গায় খুব সুন্দর করেই কয়েকটা গাছ লাগিয়েছে। সেখানে দেখলাম, কয়েকটা গাঁদা ফুলের চারা, একটা বেলি ফুলের চারা, কয়েকটা মুরগ ফুলের চারা সহ বেশ কিছু গাছ। এককোণে দেখলাম বড়সর একটা হাসনাহেনার ডাল পোঁতা। আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, বাহ! খুব সুন্দর হয়েছে তো তোমার বাগানটা। ও বলে উঠলো, হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যে গোলাপ গাছের চারা দিতে চেয়েছিলে!
আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম ভাইয়া। আসলে, সারাদিন এত ব্যস্ত থাকি। ভার্সিটি, টিউশনি, আরো কত কি! আচ্ছা, কালকে তোমার জন্য একটা সুন্দর গোলাপ গাছের চারা নিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ। এবার একটু হাসো। ও খুব সুন্দর ভাবেই হেসে দিল।
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে দেখলাম, ভ্যান গাড়িতে করে ফুলসহ নানা রকম গাছের চারা বিক্রি করা হচ্ছে। ভ্যানটি দেখেই মনে হলো, আরমানের জন্য গোলাপের চারা নিতে হবে। একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম! পরে একটা গোলাপ গাছের চারা নিয়ে তার বাসায় হাজির। সে গাছটা দেখে খুব খুশি হয়ে গেল। আর হ্যাঁ, গাছে খুব সুন্দর করে একটা ফুলে ফুটেছিল। যা ঐ গাছটাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলছিল। পরে আমি, আরমান আর রাফি মিলে গাছটা রোপণ করলাম।
পরের দিন শুক্রবার আরমানের অনুরোধক্রমে আমরা বাগানটায় বেড়া দিয়ে দিলাম। যাতে বাগানটা নষ্ট না হয়ে যায়। দিন শেষে উপহার পেলাম ছোট ভাইয়ার মুখভর্তি হাসি। এ যেন পরম পাওয়া।