শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

এক টুকরো মাংস
সুমাইয়া শিমু

নীল আকাশে জিলহজ মাসে

কোরবানির ওই চাঁদ যে হাসে

খুশির জোয়ার মনে,

কিনবে শাড়ি, কিনবে গরু

নিজেও খুশি খুশি জরু

মিলবে জনে জনে,

ঈদের দিনের নামাজ পড়ে

আসবে সবাই ফিরে ঘরে

প্রভুর নামটি স্মরে,

তার খুশিতে ওয়াজিব পালন

বছর ধরে পশুর লালন

আত্মত্যাগের তবে।

শুদ্ধ করে মনটা সবে

গোশত বন্টন করতে হবে

হিংসা বিবেক ভূলে,

গরিব যারা কষ্টে বাঁচে

কোরবানিতে ভক্ত আছে

দেখো চক্ষু খুলে।

এই দান যে নয়, তো ভিক্ষা

কোরবানির এই চরম শিক্ষা

বিশ্ববাসীর জন্য,

হাসবে ধনী হাসবে দুঃখী

এই দিনেতো সবাই সুখী

মুসলিম জাতি ধন্য।

মুসলিম জাতি আজ ধন্য। কারণ এমন একটা দিন যে দিনে পশু কোরবানি করে আল্লাহকে খুশি করানো হয়। সবাই খুশি তবে কিছু কিছু মানুষ মোটেও খুশি নয়। তাদের হাহাকারে কিছু পশুও কান্না করে। তাদের আর্তনাদ কেউ দেখেনা। এসেছি এই পৃথিবীতে মানব হয়ে জন্মেছি। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন কেন আশা এই পৃথিবীতে? জাতির মাঝে সমাজের কাছে যা চাওয়ার যা পাওয়া তা তো পাইনা তো কেন আশা এই পৃথিবীতে? আমার ভিতর নেই কোনো তৃপ্তি। শুধুই অতৃপ্তি। অতৃপ্তিতে চেয়ে গেছে আমার অন্তর।

আমার ভিতর যে হাহাকার মুছরে উঠে। আমার আর্তনাদ কেউ দেখে না। কেউ না। কেউ না।

এক মুঠো ভাত যেখানে কপালে জোটে না সেখানে কি করে ভাবতে পারি নতুন জামা পরে ঘুরবো। কি করে ভাবতে পারি নতুন কোথাও ঘুরতে যাবো। দিন যায় দিন আসে সময়ের গতিতে তবুও বদলায় না জীবনের ধারা।নতুন সময়ের অপেক্ষা নতুন করে বাঁচতে চাওয়া নতুন ভাবে জীবন গড়ার জন্যও তোমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এ জীবনে কি পেয়েছি। সব তো হারিয়ে বসে আছি জন্মের পর থেকে মা বাবার বিচ্ছেদ দেখে দেখে নিজের কোন চাওয়া পাওয়া বাবা-মায়ের কাছে বলার সুযোগ হয়নি।

এ পৃথিবীতে জন্মেছি শান্তি নিয়ে আশার জন্য নাকি অশান্তি তার হিসাব এ পর্যন্ত মিলাতে পারিনি। মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত হাহাকারে মুছরে উঠে মন। তবুও বোঝানোর মত কেউ নেই। জীবনে একদম এতিম তাও নয়, মা আছে। তবে অসুস্থ। সারাদিন শুয়ে থাকে তার মতন করে। তার ভিতর অসুস্থতার অশান্তি কাজ করে। তাকে কিছু বলার মত হাজারো কথা থেকেও যেন বলা হয় না।

নিজের মনের মাঝে রেখে দিতে হয় হাজারো কথা পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতে হয়। নতুন কোন জামা আজ ১২ বছর পড়া হয়নি আমার। লোকেদের দেওয়া পুরাতন ব্যবহার করা জামা কাপড় পড়েই আজ ১২টি বছর কাটিয়ে দিলাম।দিন আনতে পান্তা ফুরায়। বিষয়টা এমনই। দিনে এক বেলা খাবার জুটে। কখনো কখনো তাও জোটেনা। বাবা নেই। নেই কোন ভাই। মা অসুস্থ। মা কিছু করতে পারে না। আমার জন্মের দুই বছরের মাথাই মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর থেকে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে উঠা আমি তুষা।সবাই বলে আমার নামটা নাকি খুব মিষ্টি। তবে আজ পর্যন্ত কেউ বললো না নিজ থেকে কিছু খাবে কিনা? ক্ষিদা লাগছে কিনা? সবাই সবার নিজের মতোন। কিন্তু কেউ কখনো আপন করে কেমন আছি এ কথাটাও জিগায়নি।সবার তুচ্ছ ব্যবহার আর অপমানে আজ আমি অবহেলিত সবার কাছে। কারো ভালোবাসা পাওয়া তো দূরের কথা কারো কাছ থেকে আজ পর্যন্ত ভালো একটু ব্যবহার পেলাম না। আমি যখন রাস্তার পাশে বসে থাকি কত শত বাচ্চা আমার বয়সী তাদের কত সুন্দর জামা কাপড় পড়ে স্কুলে যায়।

আমার স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছে করে তবে যাওয়ার স্বপ্নই কখনোই সত্যি হবে না তা আমি জানি। যার এক বেলা খাবার জুটতে হাজার মানুষের হাতে পায়ে ধরতে হয় সে আবার স্কুলে যাবে এটা ভাবাও তো পাপ। পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর। যার আছে তার অনেক আছে। যার নেই তার কিছুই নেই। আর যাদের আছে তাদের ভিতর শুধু অহংকার, হিংসা, লোভ -লালসা ভরপুর। তাদের আরো অনেক চাই। গরীবদের শেষ করে হলেও তারা পেট পুড়তে চায়। তাদের যতক্ষণ পেট না ভরবে ততক্ষণ গরিবদের মারতেই থাকে তারা। তাদের লোভ শুধু বেড়েই চলছে। তাদের লোভ তাদের করেছে অহংকারী। তাদের লোভে তাদের করেছে ভালোবাসাহীন, প্রেমহীন, মায়া-মহব্বত কিছু নেই। সব কেড়ে নিয়ে গেছে টাকার কাছে। তাদের নেই কোন আত্মসম্মান। তাদের ব্যক্তিত্ব বলতে কিছুই নেই। আছে শুধু টাকার অহংকার। তাদের কাছে আজ টাকাই সব।তাদের সম্মানই টাকা।

আজ কোরবানি ঈদ। মা তো পরেই আছে বিছানাতে। নিজের জন্য না হলেও মায়ের জন্য একটু ভালো খাবার জোগাড় করতে হবে। তাই সকাল সকালেই বেরিয়ে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এলাম। কিন্তু কোথাও এক টুকরো গোস্ত পেলাম না। যেখানে গিয়েছি সেখানেই মানুষের অবহেলায় অবহেলিত হলাম। সবার মুখেই একটাই কথা এখনো গরু কাটা হয়নি।

পরে দিব। কেউ কেউ তো এমনও বলেছে সব গোস্ত দেওয়া শেষ। এখন আর নাই চলে যা। আমার মায়ের জন্য কারো কাছে গোস্ত ও পেলাম না। কতগুলো ঘরের দুয়ার থেকে ফিরে আসতে হলো।মানুষ লাখ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিচ্ছে। অথচ সব নিজেরাই খাওয়ার জন্য। শুনেছি এ কোরবানি নাকি আল্লাহকে খুশি করার জন্য দেয়।গরিব-দুঃখীদের জন্য এ কোরবানি। অথচ দেখো গরিবরা কি খাবে ধনীদেরই তো পেট ভরে না।

গরিবদের কি বিলাবে। আমাদের মতোন হাজারো গরিব মানুষ আছে যারা দিন এনে দিন খায়। যাদের জীবনে মাথার উপরে কেউ থাকেনা। যাদের কথা কেউ ভাবার সময় থাকেনা। যাদেরকে পদে পদে অপমানিত হতে হয়। যাদেরকে বুঝার মত কেউ থাকেনা।

পরিবারকে নিয়ে ভালো থাকতে চায় প্রতিটি পরিবার। আর আমার পরিবার আমার মা। আমিও আমার মাকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই প্রতিটি পরিবারের মতোন। আমি আমার মায়ের সাথে দিনগুলো খুব ভালো ভাবে কাটাতে চাই। কিন্তু ভালোবাসা মায়া, মহব্বতে যদিও তা পরিপূর্ণ ছিলো আমার আর মায়ের সম্পর্কটা। তবে আমার মায়ের সাথে আমার ইচ্ছে চাহিদা কখনোই পূরণ হয়নি। আদৌ তা সম্ভব কি তা জানা নেই আমার। কে কিভাবে ঈদ কাটায় তা হয়তো বুঝার তৌফিক রব্বুল আলামিন আমাকে দেয়নি। হাজারো মানুষের ভিড়ে তাদের মন মানসিকতা তাদের আচার ব্যবহার দেখে বুঝেছি।

রক্তে মাংসে মানুষ হলেও তারা মানুষ নয়। মানুষ নামে অমানুষ তারা।গত কয়েক বছরে দেখে আসছি আমার আশেপাশে যত কোরবানি হয়ে থাকে তা আদৌ কোরবানি নাকি লোক দেখানোর নিয়মণ্ডকানুন তা বুঝতে পারিনা আমি। পৃথিবীর মানুষের দিকে ধিক্কার জানাই। তাদেরকে মানুষ বলে আমি মনে করি না। আর যাই হোক তারা মামুষের ভিতরে পড়ে না।

আমরা মানুষরা হয়তো বেঁচে আছি তবে পৃথিবী মরে গেছে। যে পৃথিবীতে ধনী গরিবের পার্থক্য খুঁজে বেড়ায় সেখানে কি করে ভাবতে পারি পৃথিবী বেঁচে আছে। এ শহরে কেউ বেঁচে আছে আবার কেউবা বেঁচেও মরে আছে। কেউ শহর ছাড়ছে কে বা শহরে আসছে।বিষন্ন চোখে তাকিয়ে থাকি আমি তাদের দিকে। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি তাদের লীলাখেলা।

এতকিছু ভাবতে ভাবতে অনেক দূরে চলে এসেছিলাম। মনের অজান্তে চোখের কোণে পানি চলে আসে। রাস্তার একপাশে বসে পড়ি। কি করবো মায়ের জন্য তো একটু গোস্ত আজকের দিনেও জোগাড় করতে পারলাম না। এতকিছু ভাবতে ভাবতে কেউ একজন পিছন থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো

কিগো মা এভাবে এখানে বসে বসে কাঁদছো কেন -চাচা আমার মা ছাড়া কেউ নেই আমার মা খুব অসুস্থ তাই তার জন্য একটু গোস্তের জন্য কত জনের কাছে গেলাম কেউ এক টুকরো গোস্ত দিলো না।

-তোমার বাবা কোথায়?

-বাবা নাই চাচা।

-আচ্ছা আমার সাথে আসো আমি তোমাকে গোস্ত দিচ্ছি।

[এক বুক হাসি নিয়ে তার সাথে হাঁটতে শুরু করলাম]

আমাকে অনেকটা গোস্ত দিলো। আমিও মনের খুশিতে মায়ের কাছে এসে রান্না করে মায়ের সাথে খেলাম।

পৃথিবীতে যেমন অনেক খারাপ মানুষ আছে ঠিক তেমনি কিছু ভাল মানুষও আছে। যার জন্য পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ খেয়ে থাকতে পারে। একদিনের জন্য হলেও মন ভালো করা মানুষ এই পৃথিবীতে আছে।

এমন এমন অনেক মানুষ আছে যারা কোরবানি ঈদ গোস্ত ছাড়াই করে। তাদের গোস্ত খাওয়ার মতো না থাকে টাকা আর না থাকে তাদের সাহায্য করার মতো মানুষ।

সব মানুষই এক নয়, আবার সব মানুষ সবার মত নয়। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সেসব মানুষদের যারা আমাদের মত মানুষদের সাহায্য করে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়